প্রায় এক ঘণ্টা চেষ্টা চালিয়ে রাজশাহী সদর ফায়ার সার্ভিস সদস্যরা তাকে লিফট থেকে বের করেন। তিনি বর্তমানে সুস্থ রয়েছেন।
বুধবার (১৩ জুন) রাত পৌনে ৯টার দিকে রাজশাহী মহানগরের পিস টাওয়ারের দশতলা ভবনে লিফটে আটকা পড়ার এ ঘটনা ঘটে।
উদ্ধারের পর রামেক উপাধ্যক্ষ ডা. বুলবুল হাসান বলেন, মহানগরের কাদিরগঞ্জ এলাকার পিস টাওয়ারের অষ্টম তলার দু’টি ফ্ল্যাট নিয়ে ভাড়া থাকেন তারা। বুধবার রাত পৌনে ৯টার দিকে অষ্টম তলা থেকে নিচের দিকে যাচ্ছিলেন তিনি। কিন্তু সমস্যা দেখা দেওয়ায় লিফটটি নিচে না নেমে উল্টো দশম তলায় উঠে যায়।
পরে সেখানেই থেমে গেলে আটকা পড়েন তিনি। এরপর পিস টাওয়ারের মালিক পক্ষকে ফোন দিলে কেউ ফোন রিসিভ করেননি। এক পর্যায়ে তার মেয়ে ফারজানা ফাইজাকে ফোন করে ভেতর আটকে থাকার কথা জানান রামেক উপাধ্যক্ষ। কিন্তু তার পরিবারের লোকজন পিস টাওয়ারের সভাপতি ও নাইট গার্ডসহ অনেকের সাহায্য চাইলেও কেউ এগিয়ে আসেনি।
এরপর ডা. বুলবুল হাসানের পরিবার একটি শাবল নিয়ে দরজা খোলার চেষ্টা করেন। কিন্তু তাতেও কোনো কাজ হয়নি। পরে রাত ৯টা ৫৪ মিনিটে ফায়ার সার্ভিসে ফোন দেওয়া হয়। অবশেষে প্রায় এক ঘণ্টা চেষ্টা করে ফায়ার সার্ভিসের উদ্ধার কর্মীরা তাকে উদ্ধার করেন।
রাজশাহী মেডিকেল কলেজের উপাধক্ষ্য ডা. বুলবুল হাসান আরও বলেন, তিনি এই বহুতল ভবনের মালিকদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিবেন। অসুস্থতার মধ্যেও দুই ঘণ্টারও বেশি সময় তাকে আটকে থাকতে হয়েছে। তিনি একরকম মৃত্যুর কূপ থেকে ফিরে এসেছেন। এজন্য তিনি ভবন মালিকদের শাস্তি চান।
রাজশাহী সদর ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের সিনিয়র স্টেশন অফিসার ফরহাদ হোসেন বাংলানিউজকে জানান, আগে সপ্তম তলার লিফটের দরজা খোলা হয়। পরে কৌশলে লিফট উল্টো ঘুরিয়ে উপরের দশম তলা থেকে সপ্তম তলায় নিয়ে এসে রামেক উপাধক্ষ্যকে অক্ষত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়। তবে ফ্যান লাইট না থাকায় গরমে তিনি কিছুটা অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন। উদ্ধারের পর আতঙ্ক কেটে গেলে আবারও তিনি স্বাভাবিক হন। বর্তমানে তিনি সুস্থ ও স্বাভাবিক আছেন বলেও জানান রাজশাহী সদর ফায়ার সার্ভিসের এই কর্মকর্তা।
এদিকে, ঘটনার পর খোঁজ নিয়ে জানা যায়- মহানগরের কাদিরগঞ্জ এলাকার ওই পিস টাওয়ার ভবনটির মালিক রয়েছেন চারজন। এরা হলেন- মাহাবুব আলম, হাসিবুল ইসলাম মানিক, শফিউল আলম এবং এরফান শফি। এদের মধ্যে মাহাবুবুল আলম ওই ভবনেই থাকেন। ভবনটি নতুন নির্মাণের পর দীর্ঘ নয় মাস থেকে লিফট ওঠা-নামায় সমস্যা দেখা দিয়েছে। লিফটে কোনো ফ্যান বা লাইটের ব্যবস্থা নেই। লিফটের ভেতরে ফোনটিও অকেজো।
আর লিফট রক্ষণাবেক্ষণ করার জন্য সার্বক্ষনিক একজন লোক থাকার কথা থাকলেও সেখানে কেউ দায়িত্ব পালন করেন না। এতে করে সকল ফ্লাটের ভাড়াটিয়াদের বিভিন্ন সময়ে দুর্ঘটনায় পড়তে হয়। এ বিষয়ে বার বার মালিক কর্তৃপক্ষ এবং ভবন সোসাইটির সভাপতি আনোয়ার হোসেনকে জানানো হলেও তিনিও কোনে ব্যবস্থা গ্রহণ করেননি। যে কারণে এমন ঝুঁকি নিয়েই ভবনটিতে বসবাস করছেন অন্যান্য ফ্লাটের সদস্যরা।
পিস টাওয়ার সোসাইটির সভাপতি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক ড. মো. আনোয়ার হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, খবর পাওয়ার পর তারাই উদ্ধারের জন্য ফায়ার সার্ভিসে ফোন করেছেন। এটি অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা। এ ব্যাপারে তিনি যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন বলেও জানান।
বাংলাদেশ সময় : ০২২০ ঘণ্টা, জুন ১৪, ২০১৮
এসএস/আরএ