ঢাকা, বুধবার, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

পাহাড় ধস আর বন্যার ঝুঁকিতে ৩১ হাজার রোহিঙ্গা

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৭৩৩ ঘণ্টা, জুন ১২, ২০১৮
পাহাড় ধস আর বন্যার ঝুঁকিতে ৩১ হাজার রোহিঙ্গা টানা বর্ষণে ঝুঁকিতে রয়েছে রোহিঙ্গা ক্যাম্প

কক্সবাজার:  টানা বর্ষণে সৃষ্ট বন্যা আর পাহাড় ধসের ঝুঁকিতে রয়েছেন এখনো ৩১ হাজার রোহিঙ্গা। শনিবার থেকে শুরু হওয়া ভারী বর্ষণে উখিয়া ও টেকনাফের রোহিঙ্গা ক্যাম্পের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। মারাত্মক ঝুঁকিতে রয়েছে উখিয়ার কুতুপালং ও বালুখালি ক্যাম্পের কয়েকটি ব্লক ও টেকনাফের উনচিপ্রাংয়ের একাংশের রোহিঙ্গারা।

জাতিসংঘের অভিবাসন সংস্থা আইওএম’র দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, বৃষ্টিপাত শুরু হওয়ার ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই ক্যাম্পে ভূমিধস, ঝড়ো বাতাসে তাবু উঠে যাওয়া,  পানিতে ক্যাম্প তলিয়ে যাওয়া এবং বজ্রপাতসহ ৫৯টি ঘটনা ঘটেছে। এসব ঘটনায় ৯ হাজারেরও বেশি রোহিঙ্গা নারী, পুরুষ ও শিশু আক্রান্ত হয়েছেন।

 অবিরাম বর্ষণ অব্যাহত থাকায় এটি মানবিক বিপর্যয় হিসেবে দেখা দিতে পারে বলেও মন্তব্য করছেন সংশ্লিষ্টরা।
  
এ বিষয়ে উখিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নিকারুজাম্মান বাংলানিউজকে বলেন,  ভারী বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলের কারণে বালুখালির রোহিঙ্গা ক্যাম্প পানিতে তলিয়ে গেছে। তাদেরকে নিরাপদ স্থানে সরানো হচ্ছে।

তিনি আরো বলেন, ভারী বর্ষণে মাটির দেয়াল চাপায় উখিয়ার কুতুপালং রোহিঙ্গা ক্যাম্পের ই-৩এফএফ জোনের বাসিন্দা আবদু শুক্কুরের তিন বছরের শিশু সন্তান আবদুর রহমান হারেছ মারা গেছে। আহত হয়েছে নিহতের মা আছিয়া খাতুন (৩৫)।  
 
কক্সবাজার বন বিভাগের কর্মকর্তা (দক্ষিণ) আলী কবির বাবলু বাংলানিউজকে বলেন, নতুন ও পুরাতন মিলিয়ে ১২ লাখ রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দিতে হাজারো পাহাড় কাটা হয়েছে। গাছপালা শূন্য করে এসব পাহাড় কেটে গড়ে তোলা হয়েছে রোহিঙ্গা শিবির। তাই মাটি দুর্বল হয়ে গেছে। ভারী বৃষ্টি অব্যাহত থাকলে বন্যা ও ভূমিধসের ঝুঁকি থাকবেই।
 
এদিকে পাহাড় ধস আর ঢলের কবল থেকে আশ্রিত রোহিঙ্গাদের বাঁচাতে সরকার ও আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সেবা সংস্থা বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করেছে।
 
কক্সবাজারের সিভিল সার্জন আবদুস সালাম বাংলানিউজকে বলেন, বর্ষাকালে রোহিঙ্গাদের বিশুদ্ধ পানি, পয়ঃনিষ্কাশন ও স্বাস্থ্য বিষয়ক পরামর্শ, সুরক্ষা এবং আশ্রয় নিশ্চিতকরণে কাজ করছে সরকার ও সেবা সংস্থাগুলো।
 
শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার আবুল কালাম বাংলানিউজকে বলেন,  বর্ষণের কারণে পাহাড় ধস আর বন্যার ঝুঁকিতে থাকবে রোহিঙ্গারা, এমন তথ্য আমাদের কাছে আগেই ছিল। আমরা সেভাবেই প্রস্তুতি নিয়েছি।  এ পর্যন্ত প্রায় ৪০ হাজার রোহিঙ্গাকে পাহাড় ধস থেকে বাঁচাতে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নিয়েছি।
 
তিনি আরো বলেন, আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা আইএমওর সহায়তায় গত ৫ জানুয়ারি থেকে ২৫ হাজার রোহিঙ্গাকে (৫১৯৬ পরিবার) নিরাপদ স্থানে সরানো হয়েছে। চলতি মাসে আরো ৭ হাজার ২৪৮ জনকে নিরাপদ স্থানে নেওয়া হবে। এছাড়া একই সংস্থার সহযোগিতায় টেকনাফের উনচিপ্রাং ক্যাম্পের ৭৮৭টি পরিবারকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।

এদিকে  আইওএম’র এর সাইট ম্যানেজার মোহাম্মদ মানুন বাংলানিউজকে বলেন, উনচিপ্রাংয়ে এখনো ৬৫টি রোহিঙ্গা পরিবার পাহাড় ধসের ঝুঁকিতে রয়েছে। তাদের মধ্যে ১৯টি পরিবারকে আপাতত শিক্ষাকেন্দ্র ও শিশুবান্ধব স্থানগুলোতে স্থানান্তর করা হয়েছে। বৃষ্টি থামলে নতুন জায়গায় সরানো হবে তাদের।
 
কক্সবাজারে আইওএম এর জরুরি সমন্বয়ক ম্যানুয়েল পেরেইরা বাংলানিউজকে বলেন, ‘প্রতি ফোঁটা বৃষ্টিতেই ঝুঁকি বাড়ছে রোহিঙ্গাদের। রোহিঙ্গা শিবিরের পরিস্থিতির অবনতি হচ্ছে। পাহাড়ি জমিতে এক মিলিয়ন লোক বাস করে। আমরা তাদের জীবন বাঁচানোর জন্য লড়ছি। এজন্য আমাদের আরো টাকা দরকার।
 
তিনি আরো বলেন, ১৮৬.৮ একর জমিতে আমরা নতুন করে একটি আশ্রয় কেন্দ্র নির্মাণ করছি। যেখানে ৭ হাজার লোক বাস করতে পারবেন।

বাংলাদেশ সময়: ১৩৩০ ঘণ্টা, জুন ১২, ২০১৮
টিটি/জেডএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
welcome-ad