ঢাকা, শনিবার, ৬ বৈশাখ ১৪৩১, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

দুই আঞ্চলিক দলের কোন্দলে ‘বয়কট’ পানছড়ি বাজার

অপু দত্ত, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৪৫১ ঘণ্টা, জুন ১১, ২০১৮
দুই আঞ্চলিক দলের কোন্দলে ‘বয়কট’ পানছড়ি বাজার ক্রেতা নেই বলে অলস বসে আছে এক কিশোর সবজি বিক্রেতা। ছবি: বাংলানিউজ

খাগড়াছড়ি: পাহাড়ি দু’টি আঞ্চলিক দলের কোন্দলের জেরে খাগড়াছড়ির পানছড়ি বাজার ঘিরে থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে। গত ২০ মে থেকে এ বাজারে বেচাকেনা করতে আসতে পারছেন না সাধারণ পাহাড়িরা। সাপ্তাহিক হাটের দিনও পানছড়ি থাকছে ক্রেতা-বিক্রেতা শূন্য।
 
 

ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্টের একটি অংশের (ইউপিডিএফ-প্রসীত গ্রুপ) বাধার কারণে পাহাড়িরা বাজারে আসতে পারছেন না। আবার ইউপিডিএফ বলছে, ‘সন্ত্রাসীদের’ বাজারে আশ্রয়-প্রশ্রয় দেওয়ার প্রতিবাদে ‘জনগণ বাজার বয়কট’ করেছে।

কিন্তু এতে দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন সাধারণ পাহাড়ি-বাঙালিরা।
 
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, এমএন লারমাপন্থি পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির (জেএসএস) বেশ কয়েকজন নেতাকর্মী দীর্ঘদিন ধরে পানছড়ি বাজারের ‘শুকতারা বোর্ডিংয়ে’ অবস্থান নিয়ে আছেন। এই ঘটনায় ক্ষুব্ধ প্রসীত খীসার ইউপিডিএফ। বোর্ডিং থেকে জেএসএস কর্মীদের বের করে দিতে দফায় দফায় বাজার ব্যবসাসীদের ওপর চাপ দেয় তারা। কিন্তু তারপরও কোনো ফল না পেয়ে বাজার বয়কট করার হুমকি দেয় ইউপিডিএফ। এর পর গত ২০ মে থেকে পানছড়ি বাজারে কোনো কৃষিপণ্য আসতে পারছে না, ঢুকতে পারছেন না ক্রেতারাও।  

আর ঠিক সময়ে কৃষিপণ্য বেচতে না পারার কারণে সেসব নষ্ট হয়ে হয়ে যাচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন ব্যবসায়ীরা। পানছড়ি বাজারের সাধারণ পাহাড়িদের অভিযোগ, ইউপিডিএফ সদস্যদের ভয়ে সাধারণ লোকজনও জিম্মি। অনেকেই তাদের ভয়ে ঘরবাড়িতে থাকতে পারছেন না। সাধারণ পাহাড়িরা বাজারেও আসতে পারছেন না।
 
রোববার (১০ জুন) ছিল পানছড়ির সাপ্তাহিক হাটের দিন। এই হাটের দিনে প্রত্যন্ত এলাকা থেকেও বিভিন্ন জাতি-গোষ্ঠীর লোকজন পানছড়িতে বেচাকেনা করতে আসেন। কিন্তু রোববার পুরো বাজারই দেখা যায় ফাঁকা।

কী কারণে পানছড়ি বাজারের এই অবস্থা সে ব্যাপারে কেউ প্রকাশ্যে মুখ খুলতেও সাহস পাচ্ছেন না।
 
তবে যে হোটেলে জেএসএসের সদস্য রাখা নিয়ে অচলাবস্থার শুরু সেই ‘শুকতারা বোর্ডিং’র ম্যানেজার অমল কান্তি নাথ বাংলানিউজকে বলেন, ‘একটি দল আমাদের দফায় দফায় ফোন দিয়ে বোর্ডিং থেকে লোকজন বের করে দিতে বলছে। কিন্তু এটি ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান। এখানে যে কেউ থাকতে পারবে। এখন লোক বের করে দিলে বোর্ডিং চলবে কিভাবে?’
 
পানছড়ি বাজার উন্নয়ন কমিটির সহ-সভাপতি তপন বৈদ্য বলেন, ‘ইউপিডিএফের লোকজন ফোন দিয়ে জনসংহতি সমিতির লোকজনকে বাজার থেকে বের করে দেওয়ার জন্য বলেছে। অন্যথায় যে কোন ঘটনার জন্য তারা দায়ী থাকবে না বলে সতর্ক করে দিয়েছে। সে কারণেই ইউপিডিএফ বাজার বর্জন করে থাকতে পারে। ’ 
 
অবশ্য অভিযোগ অস্বীকার করে ইউপিডিএফের খাগড়াছড়ি জেলা সংগঠক মাইকেল চাকমা বলেন, ‘বাজারে সন্ত্রাসীদের আশ্রয়-প্রশ্রয় দেওয়ায় স্থানীয়রা বাজার বর্জন করেছেন। এখানে ইউপিডিএফ কোনোভাবেই জড়িত নয়। ’
 
এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে পানছড়ির উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মুহাম্মদ আবুল হাশেম বাংলানিউজকে বলেন, ‘বাজার বর্জন কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। কেনাবেচা না হলে মানুষ চলবে কিভাবে? কৃষিপণ্য তো নষ্ট হয়ে যাবে। তারওপর সামনে ঈদ। বাজারের পরিবেশ কিভাবে আগের মত ফেরানো যায় সে ব্যাপারে আমরা কাজ করছি। ’
 
পানছড়ি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মিজানুর রহমান বলেন, ‘এই বিষয়ে কেউ কোনো অভিযোগ দেয়নি। তবে আমরা বাজারে নিরাপত্তা বাড়িয়েছি। কেনাবেচায় যেন কোনো সমস্যা না হয় সে দিকে আমার নজর রাখছি। ’
 
বাংলাদেশ সময়: ১০৪২ ঘণ্টা, জুন ১০, ২০১৮
এডি/এইচএ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।