ঢাকা, বুধবার, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

‘আমার সব শেষ, বাঁইচ্যা থাইক্ক্যা আর কী অইবো?’

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০৪২ ঘণ্টা, জুন ৭, ২০১৮
‘আমার সব শেষ, বাঁইচ্যা থাইক্ক্যা আর কী অইবো?’ ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের আহাজারি। ছবি: অনিক খান, বাংলানিউজ

ময়মনসিংহ: সেহেরি খেয়ে ফজরের নামাজ পড়ে সবেমাত্র ঘুমিয়েছেন মাহাবুব আলম। চল্লিশের কোঠায় তার বয়স। নগরীর গাঙ্গিনারপাড় হকার্স মার্কেটে তার জুতার দোকান। ঘুমের ঘোরেই পেলেন দুঃসংবাদ। মার্কেটে আগুন লেগেছে।

অজানা আশঙ্কায় কেঁপে ওঠে বুক। দ্রুত মার্কেটে এসে দেখেন আগুনের দাউ দাউ অগ্নিশিখায় পুড়েছে তার আয়ের একমাত্র উৎস দোকানটি।

চোখে-মুখে অন্ধকার ভবিষ্যতে কান্নায় ভেঙে পড়ে তিনি বলেন, ‘আমার দোকানে ২০ থেকে ২৫ লাখ টাকার জুতা ছিলো। আমার তো সব শেষ। বাঁইচ্যা থাইক্ক্যা (থেকে) আর কী অইবো (হবে)। কীভাবে ঋণের টাকা শোধ করমু। কীভাবে চলবো সংসার। ’ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ী  নির্বাক হয়ে আগুনের অগ্নিশিখা দেখছেন। ।  ছবি: অনিক খান, বাংলানিউজটেইলার্সের দোকানের দর্জি শহীদুল। আগুন লাগার খবরে পাগলের মতো ছুটে এসেছেন। তার সঙ্গে এসেছেন বয়োবৃদ্ধ মা ও স্ত্রী শিরিনা আক্তার (৩৫)। আর্তনাদ করে শিরিনা বলছিলেন, ক্যাশের ভেতর কয়েক লাখ টাকাও ছিলো। একটি টাকাও সঙ্গে নিয়া যাইতে পারে নাই। আগুন আমাদের কপালটাই পুড়াইয়া দিলো। অহন আমরা কী লইয়া বাঁচমু।

শুধু মাহাবুব আলম বা শহীদুলই নন, এমন আহাজারি ময়মনসিংহের গাঙ্গিনারপাড় হকার্স মার্কেটের প্রায় দেড় শতাধিক ব্যবসায়ীর।

বৃহস্পতিবার (৭ জুন) সকাল ৭টার দিকে হকার্স মাকের্টের একটি দোকান থেকে সূত্রপাত হওয়া আগুনে সবগুলো দোকানই পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা আগুন নিয়ন্ত্রণের কাজ করছেন।  ছবি: অনিক খান, বাংলানিউজএ মার্কেটের বেশিরভাগ কাপড়, জুতা, কসমেটিকস, অ্যামব্রয়ডারি ও মেশিনারিজের কোনো দোকানই অক্ষত নেই। আগুনে পুড়ে ভস্মীভূত হয়েছে সব। তবে কিভাবে এবং কোনো কারণে অগ্নিকাণ্ডের সূত্রপাত হয়েছে এ সম্পর্কে নিশ্চিত করে কিছুই বলতে পারেননি ময়মনসিংহ ফায়ার সার্ভিসের সহকারী পরিচালক শহীদুর রহমান।

তিনি জানান, টানা ৫ ঘণ্টা ফায়ার সার্ভিসের ১০টি ইউনিটের সম্মিলিত চেষ্টার পর মার্কেটের আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হলেও দুপুরের দিকে হঠাৎ করেই সেটি আবার পাশের মসজিদ মার্কেটে ছড়িয়ে পড়ে।

পরবর্তীতে আবার সেটি নেভাতে সক্ষম হয়েছি আমরা। মূলত ঘনবসতিপূর্ণ এলাকা এবং পানি সঙ্কটের কারণে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে এতো সময় লেগেছে বলেও জানান শহীদুর রহমান। হকার্স মাকের্টে আগুন।  ছবি: অনিক খান, বাংলানিউজএই মার্কেটেই কাপড়ের দোকান ছিলো জজ মিয়ার। সামনে ঈদ থাকায় আট লাখ টাকা ঋণ নিয়ে নতুন মালামালও কিনেছিলেন। কিন্তু কয়েক ঘণ্টার আগুনে নিঃস্ব হয়েছেন তিনিও। সেই কষ্টের কথা উচ্চারণ করে বলছিলেন, ‘আগুন আমাকে পঙ্গু কইরা দিলো।

স্মরণকালের ভয়াবহ এ অগ্নিকাণ্ডে বুলবুল সুজের চারটি জুতার দোকানের মধ্যে তিনটি জুতার দোকানের সবগুলো পুড়ে গেছে। এ মার্কেটে সবচেয়ে বড় জুতার দোকান বুলবুল সুজেরই। এ মালিক নির্বাক হয়ে আগুনের অগ্নিশিখা দেখছেন।

পাশেই ক্ষতিগ্রস্ত আরেক দোকান মালিক বলছিলেন, ‘আগুনে মনে হয় আমিও ঝাঁপ দেই। এমন জীবন রাখার তো দরকার নেই। ’

হকার্স মার্কেট ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি আব্দুল হক স্থানীয় সাংবাদিকদের বলেন, এ মার্কেটের ছোট-বড় দেড়শো দোকান পুরোপুরি ভস্মীভূত হয়েছে। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ হবে অন্তত ১৫ থেকে ১৮ কোটি টাকা। হকার্স মাকের্টে আগুন।  ছবি: অনিক খান, বাংলানিউজতিনি জানান, ঈদকে সামনে রেখে সবাই দোকানে নতুন মালামাল এনেছেন। অনেকেই ধার দেনা করে দোকানে মাল তুলেছেন। কিন্তু একদিনেই তো সব শেষ হয়ে গেলো। আগুন তো ব্যবসায়ীদের ফতুর করে ছাড়লো। ’

অগ্নিকাণ্ডের খবর পেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের পাশে দাঁড়ান ময়মনসিংহ জেলা প্রশাসক(ডিসি) ড.সুভাষ চন্দ্র বিশ্বাস।

তিনি জানান, কী পরিমাণ ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে আগে তা নির্ধারণ করা হবে। পরে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের ক্ষতিপূরণ ও পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা হবে। ’

বাংলাদেশ সময়: ১৫৩৯ ঘণ্টা, জুন ৭, ২০১৮
এমএএএম/এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।