ঢাকা, শুক্রবার, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

অবশেষে বাড়িতে ঠাঁই হলো সেই মায়ের

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২২৩১ ঘণ্টা, মে ২৫, ২০১৮
অবশেষে বাড়িতে ঠাঁই হলো সেই মায়ের বৃদ্ধা নেজামনকে বাড়িতে দিয়ে এসেছে প্রশাসন। ছবি বাংলানিউজ

পঞ্চগড়: বাংলানিউজে "শতবর্ষী মায়ের স্থান হলো ময়লার স্তূপে!" শিরোনামে সংবাদ প্রকাশ হওয়ার দু'ঘণ্টার মাথায় প্রশাসনের হস্তক্ষেপে বাড়িতে ঠাঁই হয়েছে বৃদ্ধা নেজামনের। তবে প্রশাসনের উপস্থিতি টের পেয়ে বাড়ি থেকে পালিয়ে গেছেন ছেলে নিজামদ্দীন।

বৃদ্ধা মা বয়সের ভারে চলতে ফিরতে পারেন না, একই স্থানে খাওয়া-দাওয়া, ঘুমানো এবং মলত্যাগ করেন, তাই স্ত্রী আতিমার কথায় ময়লার স্তূপে মাকে ফেলে দেন নিজের একমাত্র সন্তান নিজামদ্দীন।  

ঘটনাটি ঘটেছে পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়া উপজেলার দেবনগর ইউনিয়নের ভজনপুরে।

শুক্রবার (২৬ মে) রাতে বাংলানিউজে এ সংক্রান্ত সংবাদ প্রকাশের পর নেজামনের গ্রামে ছুটে যান তেঁতুলিয়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান রেজাউল করিম শাহিন, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সানিউল ফেরদৌস, উপজেলা পরিষদের মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান সুলতানা রাজিয়া, তেঁতুলিয়া মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জহুরুল ইসলাম, দেবনগর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মহসিন আলীসহ এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিরা।  নেজামনকে উদ্ধার করে তার বাড়িতে পৌছে দেওয়া হচ্ছে।                                          ছবি বাংলানিউজ

এমন অমানবিক ঘটনায় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ওই বৃদ্ধার ছেলে নিজামদ্দীন ও ছেলের বউকে আইনের আওতায় নিতে চাইলে স্থানীয়দের অনুরোধে তা করেননি। এসময় বৃদ্ধা নেজামনকে তার বাড়ির একটি কক্ষে জায়গা করে দেন তারা। সেই সঙ্গে উপজেলা পরিষদের পক্ষ থেকে ওই বৃদ্ধার জন্য সুকনো খাবার, পোশাক, তেল-চাল-ডালসহ বিভিন্ন সামগ্রী তুলে দেন। সেই সঙ্গে উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ওই বৃদ্ধার পরিবারকে আগামী রোববারের মধ্যে একটি ঘর নির্মাণের জন্য টিন ও অর্থ বরাদ্দের প্রতিশ্রুতি দেন। ওই পরিবারের পক্ষ থেকে জমি দিলে সেখানে সরকারি বরাদ্দে একটি বাড়ি নির্মাণ করে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা। দ্রুত অসুস্থ বৃদ্ধাকে চিকিৎসার জন্য উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করাও পরামর্শ দেন তিনি।

আরও পড়ুন...

শতবর্ষী মায়ের স্থান হলো ময়লার স্তূপে!বৃদ্ধার জন্য কাপড়, শুকনো খাবার ও তেল সামগ্রী দেওয়া হচ্ছে।  ছবি: বাংলানিউজ

উল্লেখ্য, নিজামদ্দীনের পাকা দালান বাড়ির পাঁচটি রুম। মা বয়সের ভারে চলতে ফিরতে পারেন না, যেখানে খান সেখানেই মল-মূত্র ত্যাগ করেন, তাই তাকে বাড়ির ১৫ গজ দূরে পুকুর পাড়ে ময়লার স্তূপে ফেলে রেখে দেন তিনি। এ অবস্থায় বৃদ্ধা মায়ের কান্না-কাটি শুনে স্থানীয়রা তার মাকে ঘরে তুলে নিতে বললে তিনি প্রতিবেশীদের বলেন, ওই বুড়িকে নদীতে ফেলে দাও।  এখানেই কাটে নেজামনের দুর্বিসহ ১৫ দিন।  ছবি বাংলানিউজ

স্থানীয়রা এমন দূরাবস্থা দেখে সেখানে প্লাস্টিক আর ছেড়া বস্তা দিয়ে ছোট কুটির তৈরি করে দেন। ঝড়-বৃষ্টি আর মশার কামড় সহ্য করে খেয়ে না খেয়ে সন্তানের চোখের সামনে গত ১৫ দিন সেখানেই বসবাস করেছেন তিনি। গায়ে জ্বর, চোখেও দেখতে পান না। এ কয়েকদিন শুধুমাত্র কয়েকটি কাঠের তক্তার ওপর কোনো মতে ঠেস দিয়ে থাকতেন। মানুষের উপস্থিতি টের পেলে কান্নায় ভেঙ্গে পড়তেন। এ সময়ে প্রতিবেশী মৃত মুক্তিযোদ্ধা ছলিমদ্দীনের স্ত্রী শাহারা খাতুন সাধ্যমতো ওই বৃদ্ধার দেখভাল করেছেন। শতবর্ষী নেজামনের স্বামী মৃত সেকেত আলী। তাদের একমাত্র সন্তান নিজামদ্দীন (নাজিম)।  

বাংলাদেশ সময়: ০৪১১ ঘণ্টা, মে ২৬, ২০১৮ 
এসআই

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।