ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

শতবর্ষী মায়ের স্থান হলো ময়লার স্তূপে!

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬০৬ ঘণ্টা, মে ২৫, ২০১৮
শতবর্ষী মায়ের স্থান হলো ময়লার স্তূপে! শতবর্ষী নেজামত

পঞ্চগড়: বৃদ্ধা মা বয়সের ভারে চলতে ফিরতে পারেন না, এক স্থানে খাওয়া-দাওয়া, ঘুমানো এবং মলত্যাগ তাই তার স্থান হলো ময়লার স্তূপে।  

পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায় শতবর্ষী এক বৃদ্ধা মাকে একমাত্র গর্ভধারী সন্তান বাড়ি থেকে বের করে পুকুর পাড়ে ময়লার স্তূপে ফেলে দিয়েছেন।  

মায়ের এক ধার দুধের দাম, কাটিয়া গায়ের চাম, পাপোষ বানাইলেও ঋণ শোধ হবে না।

অথচ শতবর্ষী অসুস্থ এই গর্ভধারীণীর ঋণ তার ছেলে ও ছেলে-বৌ শোধ করছেন তাকে পুকুর পাড়ে ময়লার স্তূপে ফেলে দিয়ে। আর চিকিৎসা তো দূরের কথা- যে মা ১০ মাস সন্তানকে গর্ভে ধরেছেন, দুধ পান করিয়ে বড় করেছেন, সন্তানের সুখের জন্য নিজের সব সুখ বিসর্জন দিয়েছেন তার এমন দুর্দশার চিত্র দেখা গেছে তেঁতুলিয়ায়।

এ অবস্থা দেখে এবং বৃদ্ধা মায়ের কান্না-কাটি আর আকুতি শুনে এলাকাবাসী তার সন্তানকে মাকে ঘরে তুলে নেওয়ার কথা বল্লে তিনি প্রতিবেশীদের বলেন ‘ওই বুড়িকে নদীতে ফেলে দাও’।  

এলাকাবাসী বৃদ্ধার এমন দূরাবস্থা দেখে সন্তানের বাড়ির পাশে সেই পুকুরের পাড়ে ময়লার স্তূপে প্লাস্টিক আর ছেড়া বস্তা দিয়ে ছোট চালা তৈরি করে দিয়েছেন। ১৫ দিন ধরে সেখানেই বসবাস করছেন তিনি।

শতবর্ষী বৃদ্ধা নেজামন। স্বামী মৃত সেকেত আলী। তার একমাত্র সন্তান নিজামদ্দীন (নাজিম)। পাকা বাড়িতে থাকেন তিনি। সেখানে রয়েছে পাঁচটি কক্ষ। এই পাঁচটি কক্ষের একটিতেও জায়গা হয়নি বৃদ্ধা মায়ের।  

বাম থেকে সন্তানের বাড়ি ও মায়ের থাকার ঘর।  ছবি: বাংলানিউজসরেজমিনে শুক্রবার (২৫ মে) সন্ধ্যায় তেঁতুলিয়া উপজেলার দেবনগর ইউনিয়নের ভজনপুর নিজবাড়ি গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, বাড়ি থেকে ১৫ গজ দূরে প্লাস্টিক আর ছেড়া বস্তা দিয়ে তৈরি ছোট চালার ভেতরে আহাজারি করছেন বৃদ্ধা নেজামন। ঝড়-বৃষ্টি আর মশার কামড় সহ্য করে খেয়ে না খেয়ে সন্তানের চোখের সামনে দিনের পর দিন মৃত্যুর প্রহর গুনছেন।

গায়ে জ্বর, চোখেও তেমন দেখতে পান না। শুধু কয়েকটি কাঠের তক্তার ওপর একটি কাপড় বিছিয়ে কোন মতে বসে রয়েছেন।  মানুষের উপস্থিতি টের পেলে আহাজাহি করে বার বার বলছেন আমার আর এ কষ্ট সহ্য হয় না।  

প্রতিবেশী মৃত মুক্তিযোদ্ধা ছলিমদ্দীনের স্ত্রী শাহারা খাতুন তার দেখভাল করছেন।  

বৃদ্ধার সন্তান নিজামদ্দীনের সঙ্গে কথা হলে তিনি জানান, ওই বুড়ির সব-সময় ক্যান ক্যান আর কান্না আমার ভালো লাগে না।  

এলাকাবাসী সফিজুল হক, সলেমান আলী ও সফিকুল ইসলাম বলেন, বৃদ্ধা নেজামনের কোন ব্যবস্থা না করা হলে তা দেখে ভবিষ্যতে আমাদের ছেলে-মেয়েরাও আমাদের সঙ্গে এমনটা করতে পারে। তাই প্রশাসনের পক্ষ থেকে এর একটা সঠিক ব্যবস্থার দাবি জানাচ্ছি।  

তেঁতুলিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সানিউল ফেরদৌসের সঙ্গে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি এলাকাবাসীর মাধ্যমে একটি অভিযোগ দাখিলের কথা বলেন।  

এ বিষয়ে পঞ্চগড় জেলা প্রশাসক জহুরুল হক বাংলানিউজকে বলেন, বিষয়টি খুবই মর্মান্তিক ও দুঃখজনক। আমি ইউনিয়ন চেয়ারম্যান ও ইউএনওর সঙ্গে কথা বলে এবং ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে শিগগিরই এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নেবো।

বাংলাদেশ সময়: ২১৫০ ঘণ্টা, মে ২৫, ২০১৮ 
আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
welcome-ad