ঢাকা, শনিবার, ৭ বৈশাখ ১৪৩১, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

‘বাংলাদেশ ভবন’ উদ্বোধন করলেন হাসিনা-মোদী

শামীম খান, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৭১২ ঘণ্টা, মে ২৫, ২০১৮
‘বাংলাদেশ ভবন’ উদ্বোধন করলেন হাসিনা-মোদী বাংলাদেশ ভবন উদ্বোধন করেন শেখ হাসিনা-নরেন্দ্র মোদী (সংগৃহীত)

শান্তিনিকেতন থেকে: ভারতের পশ্চিমবঙ্গে অবস্থিত শান্তিনিকেতনের বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ে নির্মিত ‘বাংলাদেশ ভবন’-এর উদ্বোধন করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও দেশটির প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী।

শুক্রবার (২৫ মে) বাংলাদেশ সময় ১২টা ৫৫ মিনিটে তারা বাংলাদেশ ভবনের উদ্বোধন করেন।

বাংলাদেশ ভবন উদ্বোধনের পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী সৌজন্য সাক্ষাতে মিলিত হন।

এ সময় তারা একান্তে কিছু সময় কথা বলেন।

পরে বাংলাদেশ ভবন মিলনায়তনে আয়োজিত উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে যোগ দেন দুই প্রধানমন্ত্রী। অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন তারা।

অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, গভর্নর কেশরীনাথ ত্রিপাঠীসহ বিভিন্ন দেশের পণ্ডিত, বঙ্গবন্ধুর আরেক মেয়ে শেখ হাসিনার ছোট বোন শেখ রেহানাসহ সাহিত্যিক ও সাংস্কৃতিক অঙ্গনের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।

**শান্তিনিকেতনে প্রধানমন্ত্রী
**দু’দিনের সফরে কলকাতা গেলেন প্রধানমন্ত্রী

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর আমন্ত্রণে দু’দিনের সরকারি সফরে কলকাতা গেছেন প্রধানমন্ত্রী। সকালে বাংলাদেশ বিমানের একটি ভিভিআইপি ফ্লাইটে প্রধানমন্ত্রী ও তার সফরসঙ্গীরা শাহজালাল বিমানবন্দর থেকে কলকাতায় নেতাজী সুবাস চন্দ্র বসু আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছান। এরপর সেখান থেকে শেখ হাসিনা হেলিকপ্টারে কলকাতা থেকে প্রায় ১৮০ কিলোমিটার উত্তরে বীরভূম জেলার বোলপুর শান্তিনিকেতনে পৌঁছান। বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তন অনুষ্ঠানে যোগ দেন তিনি।  

সেখানে তাকে অভ্যর্থনা জানান বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য সবুজ কলি সেন। এরপর শান্তিনিকেতনের রবীন্দ্র ভবনে তাকে স্বাগত জানান নরেন্দ্র মোদী।  

বাংলাদেশ ও ভারতের দীর্ঘদিনের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের ধারাবাহিকতায় শান্তিনিকেতনে নির্মিত হয়েছে ‘বাংলাদেশ ভবন’। বাংলাদেশ সরকারের অর্থায়নে ভবনটি নির্মাণ করেছে ভারতীয় নির্মাতা প্রতিষ্ঠান ‘ন্যাশনাল বিল্ডিং কনস্ট্রাকশন করপোরেশন (এনবিসিসি)’।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সার্ধ-শত জন্মবার্ষিকীর স্মারক হিসেবে শান্তিনিকেতনে বাংলাদেশ ভবন নির্মাণের ইচ্ছা ব্যক্ত করেন। বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে ২০১১ সালের ৬ সেপ্টেম্বর স্বাক্ষরিত ‘ফ্রেমওয়ার্ক এগ্রিমেন্ট অন কো-অপারেশন ফর ডেভেলপমেন্ট’-এ তার এই আগ্রহ লিখিতরূপে স্থান পায়। সেই ধারাবাহিকতায় ভারতের বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয় ও বাংলাদেশের শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন পর্যায়ে আলাপ-আলোচনা ও মতবিনিময়ের পর প্রাসঙ্গিক ধারণাপত্র তৈরি, স্থান নির্বাচন, কারিগরি নকশা প্রণয়ন, ব্যয় প্রাক্কলন তেরি ইত্যাদি সম্পন্ন করে ২০১৬ সালের শেষভাগে বাংলাদেশ ভবনের নির্মাণকাজ শুরু করা হয়।  

বাংলাদেশের পক্ষে শিক্ষা মন্ত্রণালয় এ ভবন নির্মাণের জন্য ৪৩ কোটি ৯২ লাখ টাকা অর্থায়ন করে।  

‘বাংলাদেশ ভবন’ সম্পর্কিত তথ্য

বাংলাদেশ ভবনের জন্য জমির পরিমাণ ৮ বিঘা সমপরিমাণ বা প্রায় ২.৭৫ একর।

ভবনে ৪৫৩ আসনবিশিষ্ট একটি আধুনিক অডিটোরিয়াম, দু’টি সেমিনার হল, গ্রন্থাগার, জাদুঘর, ক্যাফেটোরিয়া ও আর্কাইভ স্টুডিও রয়েছে। অডিটোরিয়ামে আলো ও শব্দের যথাযথ প্রক্ষেপণ সংস্থান করা হয়েছে। অডিটোরিয়ামের ছাদ বাংলাদেশের নৌকার ছৈ-এর আদলে তৈরি।

ভবনের নীচতলায় অবস্থিত প্রতিটি ১৬০ আসনবিশিষ্ট দুইটি সেমিনার হল। প্রয়োজনে সেমিনার হল দু’টির অন্তর্বর্তী স্লাইডিং ফোল্ডিং পার্টিশন সরিয়ে একটি মাল্টিপারপাস হল হিসেবে পুরো হল ব্যবহার সম্ভব।  

ভবনের নীচতলায় দক্ষিণ পার্শ্বে প্রায় ৩ হাজার বর্গফুট বিশিষ্ট একটি জাদুঘর আছে যেখানে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, বাংলাদেশ ও কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর সম্পর্কিত বিষয়াদি প্রদর্শনীর জন্য স্থান পাবে।

নীচতলায় প্রধান প্রবেশের পরে ভবনের ভেতরে দৃশ্যমান একটি উঠান আছে। উঠানে প্রাকৃতিক আলো আসার ব্যবস্থা রয়েছে এবং বর্ষাকালে ওই উঠানে বসে বর্ষাও শব্দ ও আমেজ উপভোগ সম্ভব। বাংলাদেশের কৃষ্টি ও সংস্কৃতির প্রচারের জন্য এই উঠানে কোনো মেলার আয়োজন হতে পারে বা একটি মিলনমেলার স্থান হিসেবে ব্যবহৃত হতে পারে।

প্রধান প্রবেশপথের উপরের পোর্চটি বাংলাদেশের চৌচালা ছাদের অনুরূপ করে লাল টালি দিয়ে আচ্ছাদিত করা হয়েছে।

ভবনের দোতলায় প্রায় ১৩০০ বর্গফুটের লাইব্রেরি অবস্থিত। এছাড়াও একটি স্টুডিও ও একটি ফ্যাকাল্টি কক্ষের সংস্থান দোতলাতে রয়েছে।

দোতলার বামপার্শ্বে প্রায় ১ হাজার বর্গফুটের একটি ক্যাফে আছে। বিভিন্ন অনুষ্ঠানে এ ক্যাফে ব্যবহার সম্ভব হবে। ক্যাফের বাইরে খোলা ছাদে বসার ব্যবস্থা রয়েছে।  

পুরো ভবনটি প্রতিবন্ধীদের জন্য প্রবেশগম্য হিসেবে নির্মাণ করা হয়েছে। ভবনে ব্যবহৃত উপকরণসমূহে মাটি পোড়ানো ইট ব্যবহার না করে স্যান্ড সিমেন্ট দ্বারা তৈরি ইট ব্যবহার করা হয়েছে এবং চৌচালা ছাদে ইটের টালির পরিবর্তে পিভিসি লাল টালি ব্যবহার করা হয়েছে।

এখান থেকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কলকাতা ফিরে এসে জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়ি পরিদর্শন করবেন। সন্ধ্যায় হোটেল তাজ বেঙ্গলে কলকাতা চেম্বার নেতারা বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন।

শনিবার (২৬ মে) প্রধানমন্ত্রী আসানসোলে যাবেন। সেখানে কাজী নজরুল বিশ্ববিদ্যালয় বিশেষ সমাবর্তনে শেখ হাসিনাকে সম্মানসূচক ডি-লিট ডিগ্রি প্রদান করবে। অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভাষণ দেবেন। পরে মেধাবী শিক্ষার্থীদের হাতে স্বর্ণপদক তুলে দেবেন।  

অনুষ্ঠানে পশ্চিম বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি ও শিক্ষামন্ত্রী বক্তৃতা করবেন। এরপর তিনি কলকাতায় ফিরে নেতাজী সুবাস বসু জাদুঘর পরিদর্শন করবেন। প্রধানমন্ত্রী শনিবার (২৬ মে) রাতে দেশে ফিরবেন।

কলকাতা সফরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সফরসঙ্গী হিসেবে রয়েছেন সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর, প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা এইচটি ইমাম, মসিউর রহমান, গওহর রিজভী, তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম, কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী কাজী কেরামত আলী।

কর্মকর্তাদের মধ্যে রয়েছেন পররাষ্ট্র সচিব শহীদুল হক, প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত সচিব সাজ্জাদুল হাসান খান, নয়াদিল্লীতে বাংলাদেশের হাই কমিশনার সৈয়দ মোয়াজ্জেম আলী।

প্রধানমন্ত্রীর সফরে বিশিষ্ট ও রাজনৈতিক ব্যক্তিদের মধ্যে রয়েছেন ইমেরিটাস অধ্যাপক আনিসুজ্জামান, ইমেরিটাস অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের চেয়ারম্যান অধ্যাপক আব্দুল মান্নান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মো. আখতারুজ্জামান, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক হারুন-অর-রশীদ, একাত্তর টেলিভিশনের প্রধান নির্বাহী মোজাম্মেল বাবু, আওয়ামী লীগ নেতা দীপু মনি ও শেখ হেলাল উদ্দিন, অসীম কুমার উকিল, এসএম কামাল, শামসুন্নাহার চাঁপা, পারভিন জামান কল্পনা, যুবলীগ নেতা অপু উকিল।

বাংলাদেশ সময়: ১৩১১ ঘণ্টা, মে ২৫, ২০১৮/আপডেট: ২০২৬ ঘণ্টা
এসকে/এমইউএম/আরআর/এমজেএফ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।