বৃহস্পতিবার (২৪ মে) রাজধানীর বিভিন্ন এলাকার বেসরকারি মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্রগুলো ঘুরে এমন চিত্রই দেখা গেছে।
মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, ঢাকা মেট্রো উপ-অঞ্চলে সর্বমোট ৬৩টি মাদক নিরাময় কেন্দ্র রয়েছে।
রাজধানীর আদাবর এলাকার ক্রিয়া মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্রে রয়েছে ৩০টি সিট। বর্তমানে সেখানে ২৭ জন রোগী ভর্তি রয়েছেন। এ নিরাময় কেন্দ্রটির কর্মকর্তা নাজমুল বাংলানিউজকে জানান, আস্তে আস্তে মাদকাসক্ত রোগীর সংখ্যা কমে যাচ্ছে। আমাদের এখানে যে রোগী আছে, তার সবই আগে থেকে ভর্তি হওয়া। মাদকাসক্তের সুস্থ্য হতে দীর্ঘমেয়াদী চিকিৎসার প্রয়োজন হয়। এ কারণেই এখানে যারা আছেন, সবাই পুরোনো রোগী। সম্প্রতি ভর্তি হওয়া কোনো রোগী নেই।
মোহাম্মদপুরের হুমায়ুন রোডে অবস্থিত ঠিকানা মাদকাসক্তি ও মানসিক রোগ নিরাময় কেন্দ্রের চিকিৎসক ডা. সেলিম রেজা জানালেন, এ হাসপাতালে ৩০টি সিটের মধ্যে মাত্র ১৩টি সিটে রোগী ভর্তি রয়েছে। এদের মধ্যে মাদক ছাড়া মানসিক রোগী রয়েছেন পাঁচজন।
ডা. সেলিম রেজা জানান, আমরা এখন মানসিক রোগীদের চিকিৎসাই বেশি করে থাকি। কেননা আমাদের কাছে মাদকাসক্ত রোগী এখন একেবারে নেই। মাদকের কারণে মানসিক রোগীদের সুস্থ্য করতে মাদকাসক্তদের চিকিৎসার চেয়েও বেশি সময় লাগে। কেননা তাদের উত্তেজনা, খুদামন্দা ও রাতজাগার পরিমাণটা ভয়াবহ থাকে।
অন্যদিকে রাজধানীতে মাদকাসক্তের পরিমাণ নির্ভর করে এলাকাভেদে। ধানমন্ডি, পুরান ঢাকা, ফার্মগেট, মতিঝিল, মৌচাক, বাড্ডা এলাকার তুলনায় যাত্রাবাড়ী, উত্তরা, মিরপুর, গুলশান, বনানী এলাকায় মাদকাসক্তের সংখ্যা বেশি। এ এলাকার নিরাময় কেন্দ্রগুলোতে প্রায় ৯৫ ভাগ রোগী ইয়াবা ও গাঁজা দ্বারা আসক্ত।
মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের হিসাবমতে ২০০১ সালে সর্বোচ্চ ২৪ হাজার ৮২ জন রোগীকে সরকারিভাবে নিরাময় করা হয়েছে। ২০১৬ সালে এ সংখ্যা ছিল ১২ হাজার ৮১৫। এসব রোগীদের মধ্যে ইয়াবা ও গাঁজার প্রভাব ছিল সিংহভাগ।
আগারগাওয়ের পশ্চিম কাফরুল এলাকার ‘আস্থা’ মাদক নিরাময় কেন্দ্রে গিয়ে দেখা যায় ছোট একটি অবকাঠামো। ঘরগুলো টিনশেড। ঘরের বাইরে বের হতে দেয়ার সুযোগ নেই মাদকাসক্তদের। ফলে ভর্তিকৃত মাদকাসক্তদের মানসিক চাপের ক্ষেত্রে কোনো সুরাহা হয় না বলে মন্তব্য করেন মানসিক রোগ বিশেষজ্ঞরা।
এছাড়া সরকারি হিসাব অনুসারে এখানে ১০টি সিটের কথা উল্লেখ থাকলেও ‘আস্থা’র পরিচালক সাহেদ কাদের সমীর বাংলানিউজকে জানান, বর্তমানে ১২ জন রোগী ভর্তি রয়েছেন এখানে। এদের সবাই ইয়াবা ও গাঁজায় আসক্ত।
মাদক নিরাময় কেন্দ্রগুলোর দুরাবস্থার ব্যাপারে কথা হয় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত পরিচালক (গোয়েন্দা) মো. নজরুল ইসলাম সিকদারের সঙ্গে। তিনি বলেন, আমরা সব বিষয়েই নজর রাখছি আর কার্যক্রম পরিচালনা করছি। খুব দ্রুত দেশের নিরাময় কেন্দ্রগুলো একটি সুন্দর ও সুনির্দিষ্ট কাঠামোর আওতায় আসবে।
বাংলাদেশ সময়: ০৭০০ ঘণ্টা, মে ২৫, ২০১৮
এমএএম/এইচএমএস/এসআরএস