ঢাকা, মঙ্গলবার, ৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

অপমানের প্রতিশোধ নিতেই হাসানকে হত্যা!

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪৫৬ ঘণ্টা, মে ২৪, ২০১৮
অপমানের প্রতিশোধ নিতেই হাসানকে হত্যা! নিহত আবদুল্লাহ হাসান

মৌলভীবাজার: মৌলভীবাজারের বড়লেখায় স্কুলছাত্র আবদুল্লাহ হাসান হত্যার রহস্য উদঘাটন করেছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনিভেস্টিগেশন (পিবিআই)।

এ ঘটনায় সর্বশেষ আটক হাসানের পরিবারের গাড়ি চালক এরশাদ মিয়া (৩৫) আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে জানায় অপমানের প্রতিশোধ নিতে পরিকল্পিতভাবে হাসানকে জবাই করে হত্যা করা হয়েছে।

বৃহস্পতিবার (২৪ মে) দুপুরে মৌলভীবাজারে কর্মরত পিবিআই’র অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. শাহাদাত হোসেন প্রেস ব্রিফিংয়ে এ তথ্য জানান।



** বড়লেখায় নিখোঁজ স্কুলছাত্রের গলাকাটা মরদেহ উদ্ধার

তিনি বলেন, বড়লেখা মোহাম্মদনগর গ্রামের সৌদিআরব প্রবাসী আব্দুর রহিমের ছেলে আব্দুল্লাহ হাসানে (১৪) সঙ্গে তাদের পারিবারিক প্রাইভেট কার চালক এরশাদ মিয়ার গাড়ি পার্কিং নিয়ে দ্বন্দ্ব হয়। এতে হাসান ক্ষুব্ধ হয়ে গাড়ি চালককে চড়থাপ্পড় মারে। সেই প্রতিশোধ নিতে ঘটনার প্রায় তিন মাস পর সুযোগ বুঝে এরশাদ হাসানকে ডেকে মিয়ে খাসিয়া দা (এই অঞ্চলে প্রচলিত বিশেষ ধরণের দা) দিয়ে গলা ও শরীরের বিভিন্ন অংশ কেটে হত্যা করে।

পিবিআই সূত্রে জানা যায়, বুধবার (২৩ মে) বড়লেখা সিনিয়র জুডিশিয়েল ম্যাজিস্ট্রেট মো. হাসান জামানের আদালতে এ হত্যাকাণ্ডের স্বীকারোক্তি দিয়েছেন এরশাদ।  

এর আগে গত ১৯ মে মৌলভীবাজার বাসস্ট্যান্ড সংলগ্ন একটি হোটেল থেকে তাকে আটক করা হয়। পরদিন আদালতে সোপর্দ করে ১০ দিনের রিমান্ড আবেদন করলে আদালত পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। রিমান্ডের তিন দিনের মাথায় সে স্কুলছাত্র আবদুল্লাহ হাসান হত্যাকাণ্ডের লোমহর্ষক স্বীকারোক্তি দেন।

এরশাদ মিয়া ভোলা জেলার শশীভুষন থানার চরমায়া গ্রামের কবির মিয়ার ছেলে। তিনি বড়লেখায় নিহত আবদুল্লাহ হাসানের বাবার প্রাইভেটকারের চাকলক ছিলেন।

অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আরও বলেন, গাড়িচালক এরশাদ মিয়া খুব ঠাণ্ডা মাথায় এ হত্যাকাণ্ড ঘটালেও সে থেকেছে সন্দেহের ঊর্ধ্বে। এ ঘটনার পর সে তাদের বাড়িতে যাওয়া আসা রেখেছে। কিছুদিন গাড়িও চালিয়েছিল। এর পর হঠাৎ করে চাকরি ছেড়ে দেয়। তার তিনটি কর্মকাণ্ডকে প্রাধান্য দিয়ে পিবিআই তাকে আটক করে। ঘটনার রাতে গাড়িচালক এরশাদ সচরাচর যেখানে ঘুমায় সেখানে না ঘুমিয়ে অন্যস্থানে ঘুমিয়েছিলো। ঘটনার কয়েক দিন আগেই স্ত্রী-সন্তানদের অন্যত্র পাঠিয়ে দেওয়া, ঘটনার পর চাকরি ছেড়ে দেওয়া, মুখে দাড়ি রাখা এবং আত্মগোপন করা। এসব সন্দেহজনক কারণে তাকে আটকের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

জানা যায়, গত ১৮ জানুয়ারি রাতে আবদুল্লাহ হাসান বাড়ি থেকে বেরিয়ে নিখোঁজ হয়। ছেলে নিখোঁজের সংবাদ পেয়ে ২৩ জানুয়ারি দেশে ফিরেন তার সৌদিআরব প্রবাসী আবদুর রহিম। নিখোঁজের ১০ দিন পর ২৮ জানুয়ারি সন্ধ্যায় মোহাম্মদনগর এলাকার একটি নির্জন টিলার ঢালু স্থানে আবদুল্লাহ হাসানের খণ্ডিত পচা মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ।

এ ঘটনায় ৩০ জানুয়ারি নিহত আবদুল্লাহ হাসানের বাবা তিনজনকে আসামি করে থানায় হত্যা মামলা করেন। পরদিন পুলিশ আব্দুর নূর বলাই (৫০), তার ভাই বদরুল ইসলাম এবং বাদীর ভাতিজা তারেক আহমদকে (২২) গ্রেফতার করে। পরে একই মামলায় আব্দুর নূর বলাইয়ের ছেলে অলিউর রহমান পারভেজকে (২৮) গ্রেফতার করে পুলিশ।  

হত্যার রহস্য উদঘাটনের জন্য পুলিশ আসামিদের তিন দিনের রিমান্ডে নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য উদ্ধার করে। পরবর্তীতে আদালত মামলাটি পিবিআইতে স্থানান্তর করে।

বাংলাদেশ সময়: ২০৫৬ ঘণ্টা, মে ২৪, ২০১৮
জিপি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।