ঢাকা, মঙ্গলবার, ৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

অভিযোগের রশি টানাটানিতে চিড়েচ্যাপটা সাধারণ ক্রেতা

শাহজাহান মোল্লা, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪২৯ ঘণ্টা, মে ২৩, ২০১৮
অভিযোগের রশি টানাটানিতে চিড়েচ্যাপটা সাধারণ ক্রেতা বাজারে বিক্রি হচ্ছে মাংস/ফাইল ফটো

ঢাকা: অন্য অনেক ক্ষেত্রের মতো মাংস ব্যবসায়ী ও হাট ইজারাদারদের সিন্ডিকেটও চরম রূপ নিয়েছে। আর এই সিন্ডিকেটচক্রের রশি টানাটানিতে প্রতিনিয়ত চিড়ে চ্যাপটা হচ্ছে সাধারণ ক্রেতা।

সরকার মাংসে স্বয়ংসম্পন্নতার ঘোষণা দিলেও সেই সুফল ভোক্তা পর্যায়ে পৌঁছাবে কিনা তা নিয়ে রয়েছে সন্দেহ। কেননা মহানগরীর একমাত্র স্থায়ী পশুরহাট গাবতলী নিয়ে মাংস ব্যবসায়ী ও হাট ইজারাদারদের মধ্যে রয়েছে পাল্টাপাল্টি অভিযোগ।


 
হাটে বাড়তি চাঁদা আদায়ের কারণে ভোক্তা পর্যায়ে মাংসের দাম কমানো সম্ভব হচ্ছে না বলে দাবি মহানগর মাংস ব্যবসায়ী সমিতির। তাদের দাবি, গাবতলী হাটে মাংস ব্যবসায়ীদের জন্য গরুপ্রতি সরকার নির্ধারিত ট্যাক্স ১০০ টাকা, মহিষ ১৫০ টাকা, ছাগল, ভেড়া ৩৫ টাকা। অথচ অভিযোগ রয়েছে গরুপ্রতি ৫০০ টাকা থেকে ৫ হাজার টাকা পর্যন্ত ট্যাক্স আদায় করা হচ্ছে। এই অতিরিক্ত টাকা গুনতে গিয়ে মাংসের বেড়ে যাচ্ছে দাম। যে কারণে কম দামে গরু কিনলেও শেষ পর্যন্ত চড়া দামেই বিকোতে হচ্ছে মাংস।
 
এই বাড়তি টাকা আদায়ের ক্ষেত্রে খোদ ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তারা জড়িত বলে অভিযোগ করেছেন মাংস ব্যবসায়ী সমিতির নেতারা। তবে এই অভিযোগ মানতে নারাজ সিটি করপোরেশনের ওই কর্মকর্তা।

 
বাংলাদেশ মাংস ব্যবসায়ী সমিতির মহাসচিব রবিউল আলম বাংলানিউজকে বলেন, গাবতলীর ইজারাদাররা মাংস ব্যবসায়ীদের সঙ্গে চরম অন্যায় করছে। গরুপ্রতি ১০০ টাকার জায়গায় নেওয়া হচ্ছে ৫০০ থেকে ৫ হাজার টাকা। এতে দাম কমানোর সুযোগ থাকছে না। আর এই টাকার ভাগ চলে যাচ্ছে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের প্রধান সম্পত্তি কর্মকর্তা আমিনুল ইসলাম ও অন্য দু’একজন কর্মকর্তার কাছে।
 
‘আমরা ইজারাদারদের এই অনিয়ম-দুর্নীতির বিষয়ে বারবার ডিএনসিসিতে অভিযোগ করেও কোনো সুরাহা পাইনি। তারা আশ্বাস দিলেও কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। সিন্ডিকেটের কারণে প্রধান সম্পত্তি কর্মকর্তা বিগত কয়েক বছর একই ব্যক্তিকে গাবতলী ‍হাটের ইজারা দিচ্ছেন। অন্য ইজারাদার টেন্ডার কিনলেও তা দিচ্ছে না ডিএনসিসি। যে কারণে কয়েক বছর ধরে লুৎফর রহমানই গাবতলী হাটের নিয়ন্ত্রক।
 
মাংস ব্যবসায়ীদের এমন অভিযোগের ভিত্তিতে সোমবার (২১ মে) ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের প্যানেল মেয়র-২ মো. মোস্তফা জামালের নেতৃত্বে ডিএনসিসির একটি টিম আকর্ষিকভাবে গাবতলী হাট পরিদর্শন করেন। সেখানে ইজারাদার ও গরু ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলেন। মাংস ব্যবসায়ীদের একটি অভিযোগেরও সত্যতা পাননি তারা।
 
এ বিষয়ে প্যানেল মেয়র মোস্তফা জামাল বাংলানিউজকে বলেন, মাংস ব্যবসায়ীরা গাবতলী হাট জিম্মি করে রাখতে চায়। তারা যে অভিযোগ করেছে তা মোটেই সত্য নয়। মাংস ব্যবসায়ীরা চায় তাদের দেওয়া কার্ডধারীদের সরকারি এ বিশেষ সুবিধা দেওয়া হোক। এটা করলে তো ইজারাদার টিকতেই পারবে না।
 
বাড়তি সুবিধা পাইয়ে দেওয়ার অভিযোগ অস্বীকার করে প্রধান সম্পত্তি কর্মকর্তা আমিনুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, দু’একজন মাংস ব্যবসায়ী অভিযোগ করেন। আসলে তাদের অভিযোগ শতভাগ অসত্য। তারা উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হয়ে ভিত্তিহীন অভিযোগ করে আমার সন্মানহানি করার চেষ্টা করে। অভিযোগকারীরা আসলে চায় মাংস ব্যবসায়ী সেজে সরকারি সুবিধা ভোগ করতে। কিন্তু আমরা সেই অন্যায় করতে দিতে পারি না।
 
 ‘এসব অভিযোগ পাল্টা অভিযোগ না করে আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি মিলে মাংস ব্যবসায়ীদের একটি কার্ড করে দেওয়া হবে। ওই তালিকার মাংস ব্যবসায়ীরাই কেবল ১০০ টাকার সুবিধা পাবেন, অন্য কোনো কার্ড দেখিয়ে সুবিধা নিতে পারবেন না। বর্তমানে ঢাকা মহানগরের ৭২৪ জন মাংস ব্যবসায়ী এ সুবিধা পাচ্ছেন। এরপরও যদি ইজারাদার বাড়তি টাকা নেয় তাহলে তার ইজারা বাতিল করা হবে।
 
এরকম অভিযোগ পাল্টা অভিযোগের মধ্যে ব্যবসায়ীরা ঠিকই তাদের সুবিধা আদায় করে নিচ্ছে। তবে সাধারণ ক্রেতারা প্রতিনিয়তই ঠকছেন বাজারে গিয়ে। সাধারণ মানুষের ভরসার জায়গা সিটি করপোরেশন কতটুক আস্থা ফেরাতে পারে সেটাই দেখতে চান নগরবাসী।
 
বাংলাদেশ সময়: ২০১৮ ঘণ্টা, মে ২৩, ২০১৮
এসএম/এএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।