ঢাকা, মঙ্গলবার, ৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

‘খেরুয়া মসজিদে এসে প্রশান্তি অনুভব হলো’

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৮২৬ ঘণ্টা, মে ২২, ২০১৮
‘খেরুয়া মসজিদে এসে প্রশান্তি অনুভব হলো’ খেরুয়া মসজিদ। ছবি: কাওছার উল্লাহ আরিফ

বগুড়া: “মামুন ভাইয়ের মুখে শুনে সৌন্দর্যমণ্ডিত ঐতিহাসিক এই মসজিদ দেখতে আসলাম। হাজার কোটি শুকরিয়া তৎকালীন সেই মহান পুরুষদের, যাদের অক্লান্ত পরিশ্রমে মসজিদটি প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। নিভৃত পল্লীতে মনোরম পরিবেশে পরিচ্ছন্ন মসজিদটি আমার পরিবারকে চমৎকৃত করেছে। এখানে এসে আমার প্রশান্তি অনুভব হলো।”

তিন গম্বুজ বিশিষ্ট মুসলিম স্থাপত্যের অপূর্ব নিদর্শন খেরুয়া মসজিদ পরিদর্শন শেষ পরিদর্শন বইয়ে এমন মন্তব্য লিপিবদ্ধ করেছেন পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক ফজলে রাব্বী খান।

দেশের বিভিন্ন জেলার লোকেরা ছাড়াও লন্ডন, জাপান, জার্মানি, মালেশিয়া, ইন্দোনেশিয়া, ভারত, নেপাল, পাকিস্তান, ভুটান, আফগানিস্তান, মিশরসহ বিভিন্ন দেশের পর্যটকরা সুলতানি আমলের নির্মাণ শৈলীতে গড়া মসজিদটি পরিদর্শন করেছেন।

মসজিদের সাইট পরিচালক আব্দুস ছামাদ প্রামাণিক তার কাছে সংরক্ষিত কয়েক বছরের পরিদর্শন বই ঘেটে বাংলানিউজকে এসব কথা জানান।

১৯ মে বিকেলবেলা। মসজিদের উত্তর পাশের অজুখানায় মসুল্লিরা তখন অজু সেরে আসরের নামাজের প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। ইমাম মাওলানা আব্দুল হামিদ নামাজ পড়ানোর জন্য প্রস্তুত। তিনটি সারি করে কাতারবন্দি হয়ে মসুল্লিরা ভেতরে দাঁড়িয়ে যান। মসজিদটিতে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ, জুম্মার নামাজসহ তারাবির নামাজ পড়া হয়। খেরুয়া মসজিদ।  ছবি: কাওছার উল্লাহ আরিফবগুড়ার শেরপুর উপজেলার শাহবন্দেগী ইউনিয়নের খন্দকারটোলা গ্রামে মসজিদটির অবস্থান। বগুড়া শহরের সাতমাথা থেকে ঢাকা-বগুড়া মহাসড়ক ধরে দক্ষিণে ২০-২২ কিলোমিটার গেলে শেরপুর উপজেলা শহর। সেখান থেকে শহরের ধুনটমোড়-মাজারগেট হয়ে দক্ষিণ-পশ্চিমে মাত্র দেড় কিলোমিটার পথ পেরুলেই দেখা মিলবে খেরুয়া মসজিদের।

চারপাশ সীমানা প্রাচীর বেষ্টিত রকমারি গাছপালায় সারাবেলা সবুজে দোল খায় মসজিদ প্রাঙ্গণ। মসজিদের মূল প্রবেশ পথের সামনে আব্দুস সামাদ ফকিরের কবর রয়েছে। দুর্বা ঘাস বিছানো পুরো মাঠ। সন্ধ্যার আগে চারপাশের গাছপালায় পাখপাখালির কিচিমিচির শব্দে ভরে ওঠে।

মসজিদের সামনের দেয়ালে তিনটি দরজা। মাঝের দরজাটি আকারে খানিকটা বড়। এই দরজার দুই পাশের দেয়ালে দুটি শিলালিপি বসানো ছিলো। যার ওপর খোদাই করে মসজিদ নির্মাণ সম্পর্কিত তথ্য লেখা। পরিদর্শন বই।  ছবি: কাওছার উল্লাহ আরিফএকটি শিলালিপি খণ্ড রয়েছে দেয়ালে বসানো। আরেকটি সংরক্ষিত পাকিস্তানের করাচি জাদুঘরে। মসজিদের মিহরাগুলো আয়তাকার ফ্রেমে বন্দি। ছোট খিলনাকৃত প্যানেলের সারি রয়েছে বাঁকানো কার্নিশের নিচ দিয়ে।

এছাড়া মসজিদে কিছু পোড়ামাটির অলঙ্কার ছিলো। যা কালের আবর্তে অদৃশ্য হয়ে পড়েছে। মসজিদের চারকোণে রয়েছে চারটি অষ্টভূজ মিনার। পশ্চিম দেয়ালের ভেতরের অংশে রয়েছে আয়তাকার তিনটি মিহরাম। মাঝেরটি অপেক্ষাকৃত বড়।

১৫৮২ খ্রিষ্টাব্দে জওহর আলী খান কাকশালের ছেলে নবাব মির্জা মুরাদ খান ঐতিহাসিক এ মসজিদ নির্মাণ করেছিলেন। মসজিদের উত্তর-দক্ষিণের দৈর্ঘ্য ১৭.৩৪ মিটার। পূর্ব-পশ্চিমের প্রস্থ ৭.৫ মিটার। ভেতরের দৈর্ঘ্য ১৩.৭২ মিটার ও প্রস্থ ৩.৮ মিটার।

১৬ শতকের শেষদিকে বার ভূঁইয়া ও মুগল বিরোধী বিপ্লবের সঙ্কটকালীন মুহূর্ত। শেরপুর মোর্চা ছিলো কাকশাল বিদ্রোহীদের শক্ত ঘাঁটি। বারো ভূঁইয়া ছাড়াও আফগান বিদ্রোহীদের নেতা মাসুম খান কাবুলীর সঙ্গে একাত্মতা ঘোষণা করে কাকশাল বিদ্রোহীরা। মূলত তখন খেরুয়া মসজিদ নির্মাণ করা হয় বলে শিলালিপি থেকে জানা যায়।

প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের অধীনে থাকা মসজিদটির সাইট পরিচালক আব্দুস ছামাদ প্রামাণিক বাংলানিউজকে বলেন, সামনে ও দু’পাশ দিয়ে মসজিদে ঢোকার পাঁচটি দরজা। কেবল সামনের বড় দরজাটি খোলার ব্যবস্থা রয়েছে। বাকিগুলো বন্ধ থাকে। সময়ের ব্যবধানে মসজিদে মসুল্লির সংখ্যা বেড়েই চলছে। এ কারণে সামনের বন্ধ থাকা বাকি দুটি দরজা খোলার ব্যবস্থা করা প্রয়োজন।

তিনি আরও বলেন, খন্দকারটোলা গ্রামের ভেতর হয়ে মসজিদে আসার আরও একটি রাস্তা রয়েছে। ওই রাস্তাটি তেমন ভালো না। এ রাস্তাটি ভালো করা দরকার। তাহলে পর্যটক-দর্শনার্থী ও মসুল্লিরা উভয় রাস্তা ব্যবহার করে মসজিদে সহজে যাতায়াত করতে পাববেন।

বাংলাদেশ সময়: ১৪২০ ঘণ্টা, মে ২২, ২০১৮
এমবিএইচ/এমজেএফ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।