ঢাকা, শুক্রবার, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

হাতে ভাজা মুড়িপল্লীতে ব্যস্ততা

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২৩০৯ ঘণ্টা, মে ২১, ২০১৮
হাতে ভাজা মুড়িপল্লীতে ব্যস্ততা মুড়ি ভাজছেন একজন নারী। ছবি: বাংলানিউজ

ঝালকাঠি: রমজান মাসে গোটা দেশে মুড়ির কদর অনেকটাই বেশি থাকে। মেশিনে ভাজা মুড়ি বাজারজাত শুরু হওয়ার পর থেকে যদিও অনেকটা কমে গেছে হাতে ভাজা মুড়ির কদর। তরপরও সুস্বাদু হওয়ার এর কাটতি এখনও কম নয়। হাতে ভেজে মুড়ি উৎপাদনকারী এলাকা হিসেবে সুপরিচিত বরিশাল বিভাগের ঝালকাঠির নলছিটি উপজেলার দপদপিয়া ইউনিয়ন। 

এ ইউনিয়নের তিমিরকাঠি, জুড়কাঠি, ভরতকাঠি, দপদপিয়া গ্রামে সারাবছর ধরেই মুড়ি ভাজার কাজ হয়। তবে রমজান আসতে না আসতেই এই মুড়ির চাহিদা বেড়ে যায় কয়েকগুন।

তাই এসব গ্রামে এখন দিন-রাত চলছে মোটা চালের মোটা মুড়ি ভাজার কাজ।  

গ্রামগুলো ঘুরে জানা গেছে, এসব গ্রামের কয়েক’শ পরিবার কয়েক যুগ ধরে মুড়ি ভেজে জীবিকা নির্বাহ করে আসছে। আর এখন প্রতিটি পরিবারে একজন নারীই মুড়ি ভাজার মূল ভূমিকায় রয়েছেন, যাকে পরিবারের অন্য সদস্যরা সহায়তা করে থাকেন।  

রাসায়নিক দ্রব্য ব্যবহার ব্যতিত এসব মুড়ি এখন প্রসিদ্ধ বরিশাল, রাজধানী ঢাকা ও ফরিদপুর জেলাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে। উৎপাদনের ব্যাপকতার কারণে এই গ্রামগুলো এখন মুড়িপল্লী হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে।  

তিমিরকাঠি গ্রামের কাজল বেগম জানান, দীর্ঘ ২০ বছর আগে শ্বশুরবাড়িতে এসে মুড়ি ভাজার কাজের সঙ্গে জড়িয়ে যান। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ভাজার কৌশল রপ্ত ফেলেন। মুড়ি ভাজতে হলে প্রথমে হাতের টেকনিক বোঝাটা প্রয়োজন। তার সঙ্গে মুড়ি ভাজার সব সরঞ্জাম সঠিকভাবে থাকা উচিত।

মুড়ির আড়তের বস্তায় মুড়ি তুলেছেন দুইজন শ্রমিক।  ছবি: বাংলানিউজ

মুড়ি ভাজার কারিগররা জানান, প্রথমে মোটা চাল লবণ পানির সঙ্গে মিশিয়ে মাটির পাত্রে হালকা ভাজেন। এক্ষেত্রে ৫০ কেজি বস্তার চালের জন্য ১ কেজি লবণের প্রয়োজন হয়। চাল ভাজার পাশাপাশি অপর মাটির পাত্রে ভারী ও চিকন বালির মিশ্রন গরম করতে হয়। এরপর মাটির অপর পাতিলের মধ্যে গরম বালি ঢেলে দিয়ে সঙ্গে সঙ্গে লবণ পানি মেশানো ভাজা চাল ঢেলে দেন। ১০ থেকে ১৫ সেকেন্ডের মধ্যে নাড়াচাড়ায় তৈরি হয়ে যায় ভালো মানের মুড়ি।  

ভরতকাঠির মুনসুর মিয়া জানান, সকাল ৯টার মধ্যেই বেশিরভাগ বাড়িতে মুড়ি ভাজার কাজ শেষ হয়ে যায়। দিনে কোনো ঘরে ৫০ আবার কোনো ঘরে ১শ কেজির মুড়িও ভাজা হয়। আড়তদারদের দেওয়া ৫০ কেজির এক বস্তা চালে ৪২/৪৩ কেজি মুড়ি হয়। যা দিয়ে আড়াইশ টাকার মতো আয় হয়।

দপদপিয়া এলাকার আড়তদার মো. ইউসুফ আলী হাওলাদার বাংলানিউজকে জানান, মেশিনে ভাজা চিকন মুড়ির কারণে কিছুটা বিরুপ প্রভাব বিরাজ করলেও এ অঞ্চলের হাতে ভাজা মোটা মুড়ির জনপ্রিয়তা ও কদর সবসময়ই ছিল। মেশিনের কারণে হাতে ভাজা মুড়ির দর কমিয়ে বিক্রি করতে হয়। আর এতে করে শ্রমিকরাও কম টাকা পাচ্ছেন।  এ অঞ্চল থেকে এখন প্রতিদিন দেড় থেকে তিনশ মণ মুড়ি দেশের বিভিন্ন স্থানে যাচ্ছে।  

মুড়ির আড়ৎ ছবি: বাংলানিউজ

বরিশালের বাজাররোডের সবচেয়ে বড় পাইকার বিক্রেতা পবিত্র সাহা জানান, মোটা ভালো মানের হাতে ভাজা মুড়ির দাম বর্তমান বাজারে ৯০ থেকে ১১০ টাকা এবং চিকন মুড়ির (মেশিনে ভাজা) দাম ৫৪ থেকে ৬০ টাকা দরে খুচরো বাজারে বিক্রি হচ্ছে।

বাংলা‌দেশ সময়: ০৫০৮ ঘণ্টা, মে ২২ ২০১৮
এমএস/এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

জাতীয় এর সর্বশেষ