ঢাকা, শুক্রবার, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

আংটি দেখে মরদেহ শনাক্ত, ইয়াবা বিরোধে খুন!

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০২৩ ঘণ্টা, মে ২১, ২০১৮
আংটি দেখে মরদেহ শনাক্ত, ইয়াবা বিরোধে খুন!

কক্সবাজার: এপ্রিলের ১৯ তারিখ সন্ধ্যায় কক্সবাজার সদরের ঈদগাঁও কলেজগেট ব্রিজ এলাকার খালপাড় থেকে এক যুবকের বস্তাবন্দি মৃতদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। পরদিন ২০ এপ্রিল দিবাগত রাতে মরদেহটিকে ঝিলংজা ইউপির খরুলিয়া ঘাটপাড় এলাকার আবদুল খালেকের (২৮) বলে চিহ্নিত করেন তার আত্মীয়স্বজনরা। ২১ এপ্রিল তার দাফন সম্পন্ন হয়।

তবে দাফনের ১১ দিনর পর খালেককে সীতাকুন্ড থেকে জীবিত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়। এরপর বস্তাবন্দি সেই মৃতদেহটির পরিচয় নিয়ে বিপাকে পড়ে পুলিশ।

তবে সেই জটলা খুলে দিল নিহতের আঙ্গুলে থাকা একটি আংটি। তামার সেই আংটির সূত্র ধরেই পুলিশ নিশ্চিত হয়েছে মৃতদেহটি টেকনাফের সাবরাং ইউনিয়নের ৬নং ওয়ার্ডের পুরানপাড়ার মৃত রশিদ আহমদের ছেলে সাইফুল ইসলামের (২৮)। একই দাবি সাইফুলের স্ত্রী সাবেকুন্নাহার (২২) ও বড় ভাই সৈয়দ আলম এবং তিন সন্তানেরও।  

তারপরও পুলিশ পরিচয় আরো নিশ্চিত হতে নিহতের ডিএনএ টেস্ট করছে। সাইফুলের ডিএনএ’র সঙ্গে তার তিন মেয়ে সাফা মনি (৮), জয়নাব বিবি (৩) ও ৬ মাসের বিলকিসের ডিএনএ’র মিল আছে কিনা খতিয়ে দেখা হবে।

এ বিষয়ে ভিকটিমের বড় ভাই সৈয়দ আলম বাংলানিউজকে বলেন, ১৭ এপ্রিল রাত ৯টায় পুরানপাড়া জামে মসজিদের সামনে থেকে সাইফুল ইসলামকে অপহরণ করে একদল ইয়াবা ব্যবসায়ী। অপহরণের পর তাকে চট্টগ্রামের লোহাগাড়ায় নিয়ে আটকে রাখা হয়। এ ঘটনায় ২৪ এপ্রিল টেকনাফ থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি লিপিবদ্ধ করি। অপহরণকারীদের বসতবাড়ি ও নানা জায়গায় যোগাযোগ করেও তাদের এবং আমার ভাইয়ের সন্ধান মেলেনি। এ কারণে ৩০ এপ্রিল টেকনাফ থানায় ৮ জন ইয়াবা ব্যবসায়ীর নাম উল্লেখ করে একটি অপহরণ মামলা দায়ের করি।
 
তিনি আরো বলেন, আমার ভাইয়ের সাথে অপহরণকারীদের ব্যবসায়িক লেনদেন ছিল। আমার ভাইয়ের পাওনা টাকা আত্মসাতের জন্যই তাকে অপহরণ করে খুন করা হয়েছে। আমার ভাই বাম হাতের মধ্যমায় একটি তামার রিং পরতো। সেই একই ধরনের রিং ঈদগাঁও থেকে উদ্ধার হওয়া মৃতদেহের আঙুলে পাওয়া গেছে। আমি নিশ্চিত এটা আমার ভাইয়ের মরদেহ। তারপরও আইনি জটিলতা এড়াতে আমরা ডিএনএ টেস্ট করতে সম্মতি দিয়েছি।

এ বিষয়ে টেকনাফ থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) মোহাম্মদ মহিরউদ্দিন খান বাংলানিউজকে বলেন, আংটির মাধ্যমে মরদেহটি সাইফুলের বলে শনাক্ত করেছে ভিকটিমের ভাই, স্ত্রী ও সন্তানরা। পুলিশের কাছেও একই ধরনের ক্লু রয়েছে। তারপরও ডিএনএ প্রতিবেদনের অপেক্ষায় আছি। প্রতিবেদন পাওয়া সাপেক্ষে এটি হত্যা মামলা হিসেবে লিপিবদ্ধ হবে।

৩ মে সাইফুল অপহরণের সাথে জড়িত থাকার দায়ে চট্টগ্রামের লোহাগাড়ার আধুনগরের ৮ নং ওয়ার্ডের চৌধুরীপাড়ার ছিদ্দিকের ছেলে জানে আলমকে (৪০) আটক করা হয় বলেও জানান এসআই মহিরউদ্দিন।

এদিকে টেকনাফ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রণজিৎ কুমার বড়ুয়া বাংলানিউজকে বলেন, ইয়াবা লেনদেনের টাকা আত্মসাৎ এবং নিহতের পরকীয়া প্রেমের জের ধরে ওই খুনের ঘটনা ঘটেছে বলে পুলিশ ধারণা করছে। এ দুটি বিষয়কে সামনে রেখেই পুলিশের তদন্ত কাজ চলছে।

তিনি বলেন, সাইফুলের সাথে এজাহারভুক্ত আসামিদের ইয়াবা লেনদেনের টাকা নিয়ে বিবাদ ছিল। গতবছর সীতাকুন্ড থানায় ইয়াবা নিয়ে আটকও হয়েছিলেন সাইফুল। তিনি দুটি বিবাহ করেছেন। প্রথম বউয়ের সাথে ডিভোর্স হওয়ার পরও তার সাথে অনৈতিক সম্পর্ক ছিল। চট্টগ্রাম জেলার বায়েজিদে তারা প্রায়ই মিলিত হতেন। প্রথম বউয়ের দ্বিতীয় স্বামী ঈদগড়ের জনৈক মোজাম্মেল। যার বাড়ি থেকে মৃতদেহ উদ্ধারের স্থানের দূরত্ব আট কিলোমিটার।

কক্সবাজার জেলা পুলিশের মুখপাত্র আফরাজুল হক টুটুল বাংলানিউজকে বলেন, আটক জানে আলমের কাছ থেকে মামলার কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া গেছে। তথ্যগুলো যাচাই-বাছাই চলছে।

বাংলাদেশ সময়: ১৬২০ ঘণ্টা, মে ২০, ২০১৮
টিটি/এমজেএফ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।