ঢাকা, শনিবার, ৭ বৈশাখ ১৪৩১, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

বাগেরহাটে ভূমিহীনদের বসতঘরে আগুন

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫২৪ ঘণ্টা, মে ১৯, ২০১৮
বাগেরহাটে ভূমিহীনদের বসতঘরে আগুন আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে অন্তত ২৫টি ঘর। ছবি- বাংলানিউজ

বাগেরহাট: বাগেরহাটের শরণখোলায় বসতভিটা থেকে উচ্ছেদ করতে ভূমিহীনদের ঘর থেকে বের করে অন্তত ২৫টি ঘর আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেওয়ার ঘটনা ঘটেছে। এসময় প্রতিপক্ষের হামলায় তিন নারী আহত হয়েছেন।

শনিবার (১৯ মে) ভোর পাঁচটার দিকে শরণখোলা উপজেলার খোন্তাকাটা ইউনিয়নের দক্ষিণ বাধাল গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।

২০১৪ সালে শরণখোলা উপজেলারখোন্তাকাটা ইউনিয়নের দক্ষিণ বাধাল গ্রামের অর্পিত সম্পত্তি স্থানীয় উপজেলা প্রশাসন মুক্তিযোদ্ধা পরিবার ও অসহায় ভূমিহীন ১৫টি পরিবারের নামে (বন্দোবস্ত) বরাদ্দ দেয়।

যাদের নামে সরকার জমি বরাদ্দ দিয়েছে তারা ওই জমিতে না থেকে ওই এলাকার অসহায় ভূমিহীন দিনমজুর, প্রতিবন্ধীদের ঘর করে থাকার অনুমতি দেন। সেই থেকে তারা ওই জমিতে ধানের খড়, কাঠ, বাঁশ ও গোলপাতা দিয়ে ঘর বেঁধে বসবাস করে আসছেন।

যাদের ঘর পুড়িয়ে দেয়া হয়েছে তারা হলেন: খলিল হাওলাদার, শাহ আলম হাওলাদার, জামাল হাওলাদার, সুলতান হাওলাদার, ফারুক হাওলাদার, আমির হাওলাদার, মোশারেফ হাওলাদার, অলি হাওলাদার, রুমা বেগম, ইসমাঈল, রিনা বেগম, আবুল কালাম, ইব্রাহিম, সোহেল ফকির, শাহজাহান ফকির ও দুলাল ফকির।

স্থানীয় প্রভাবশালী ফরিদ খান এবং  মো. মহারাজ হাওলাদার নামের দুই ব্যক্তির বিরোধের জেরে এই ভূমিহীনদের বসত ঘর পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ তাদের। এই অর্পিত সম্পত্তি আগে ফরিদ খান নিজের বলে দাবি করে জোরপূর্বক দখল করে ভোগ করছিলেন।
আগুনে পুড়ছে ঘর।  ছবি: বাংলানিউজ
অর্পিত সম্পত্তি বন্দোবস্ত পাওয়া জমির মালিক লিপন সরকার  বলেন, ২০১৪ সালে তৎকালীন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা অতুল মণ্ডল অর্পিত সম্পত্তি থেকে মুক্তিযোদ্ধা পরিবার ও অসহায় ভূমিহীন ১৫টি পরিবারের নামে (ডিসি আর বন্দোবস্ত)  ১৭ একর ৮৫ শতাংশ জমি বরাদ্দ দেন। আমরা এই জমি বরাদ্দ পাওয়ার পর নিজেরা না থেকে  স্থানীয় দরিদ্র ভূমিহীনদের ঘর তৈরি করে থাকার অনুমতি দিই। এরপর থেকে তারা এখানে ঘর তৈরি করে থাকছে। আজ ভোরে দুর্বৃত্তরা ঘরে আগুন দেয়।

শরণখোলা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. কবিরুল ইসলাম বলেন, শনিবার ভোরে একদল দুর্বৃত্ত বসতঘর ভাংচুর করে  আগুন লাগিয়ে দেয়। সরকারের অর্পিত সম্পত্তি নিয়ে স্থানীয় ফরিদ খান ও মহারাজ হাওলাদারের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ চলে আসছে।  ১৭ মে ফরিদ খান বাদী হয়ে চাঁদাবাজি ও জমি দখলের অভিযোগ এনে জমিমালিক ও ভূমিহীনদের ৩৪ জনের বিরুদ্ধে শরণখোলা থানায় একটি মামলা করেন। ওই মামলার আসামিদের ধরতে পুলিশ গেলে তাদের না পেয়ে ফিরে আসে। আগুনে প্রায় ২৫টি বসতঘর পুড়ে গেছে। পরে পুলিশ খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে আগুন নেভায়। কারা এই ঘটনা ঘটিয়েছে তা তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। জড়িতদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।

শরণখোলা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) লিঙ্কন বিশ্বাস বলেন, ২০১৪ সালে তৎকালীন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা অতুল মণ্ডল অর্পিত সম্পত্তি থেকে মুক্তিযোদ্ধা পরিবার ও অসহায় ভূমিহীন ১৫টি পরিবারের নামে (ডিসি আর বন্দোবস্ত)  ১৭ একর ৮৫ শতাংশ জমি বরাদ্দ দেন। এর কিছুদিন পরে ফরিদ খান নামে এক ব্যক্তি জমির মালিক দাবি করে বাগেরহাটের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসকের কাছে আবেদন করলে ওই জমির বরাদ্দ বাতিল করে দেওয়া হয়। সম্প্রতি ফরিদ খান আদালতে ওই জমির উপর নিষেধাজ্ঞা চেয়ে রিট করলে আদালত নিষেধাজ্ঞা জারি করেন। এর মধ্যে শনিবার ভোরে ওই বিরোধপূর্ণ জমিতে বসবাস করা ভূমিহীনদের বসতঘর দুর্বৃত্তরা আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দিয়েছে। আমরা ওই ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর তালিকা তৈরি করছি। যারা এই ঘটনা ঘটিয়েছে তাদের খুঁজে বের করতে পুলিশকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

বাংলাদেশ সময়: ২১২০ ঘণ্টা, মে ১৯, ২০১৮
জেএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।