এবারও তাপদাহের মধ্যে শুরু হয়েছে মাহে রমজান। সারাদিন রোজা রাখার পর সূর্য পশ্চিমাকাশে হেলতেই অভিজাত রেস্তোরাঁয় ঢুঁ মারছেন তারা।
রাজশাহী মহানগরের প্রাণকেন্দ্র সাহেব বাজার জিরোপয়েন্ট, বড় মসজিদ চত্বর, মণিচত্বর, সোনাদীঘির মোড়, আলুপট্টি, কুমারপাড়া ও গণকপাড়াসহ গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টগুলোয় দুপুরের পর থেকে ইফতার কিনতে রোজাদারদের আনাগোনা বেড়ে গেছে।
শনিবার (১৯ মে) অভিজাত ইফতারের বাজার ঘুরে দেখা গেছে, গতবারের চেয়ে এবার সব ইফতার পণ্যের দাম বেড়েছে। বিক্রেতারা জানান, চিনি, সয়াবিন তেল, মশলা, বেসনের দাম বাড়ার কারণে তাদের দাম কিছুটা বাড়াতে হয়েছে। তবে সব আইটেমে নয়। বড় হোটেল-রেস্তোরাঁর কর্তৃপক্ষ বলছেন, পণ্যের মান ধরে রাখতে হিমশিম খেতে হচ্ছে তাদের। তারপরও চেষ্টা করছেন দাম কম রাখতে। ইতোমধ্যে হোটেল-ফাস্টফুডের দোকানগুলো ইফতারের প্যাকেজ ঘোষণা করেছে। সর্বনিম্ন ৬০ টাকা থেকে ২২০ টাকার মধ্যে নানা আইটেম দিয়ে সাজানো হয়েছে ইফতারের প্যাকেট।
চাইনিজ ও বাংলা কমিউনিটি সেন্টারগুলোতে বুকিং দেওয়া শুরু হয়েছে ইফতার পার্টির জন্য। কোনোটি ইতোমধ্যে বুকিং হয়ে গেছে। এরই মধ্যে শুরু হয়ে গেছে ইফতার পার্টির আয়োজন। প্রস্তুতি নিচ্ছে রাজনৈতিক ও পেশাজীবী সংগঠনগুলো। সামনে জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে আয়োজনের মাত্রাটা তাদের বেশি হবে। কোনও কোনও রাজনীতিক শুরুর দিন থেকেই নেমে পড়েছেন। কোথাও এতিমখানায় ইফতার করছেন আবার কোথাও দুস্থদের মধ্যে ইফতার বিতরণ করছেন। সব মিলিয়ে রাজশাহীতে ইফতারের বাজার জমে ওঠেছে রমজান শুরুর দ্বিতীয় দিনেই।
আড়াই প্যাঁচের জিলাপি এবারও রাজশাহীর ইফতারির প্রধান আকর্ষণ। নানা রকম ভাজা পোড়ার সঙ্গে মিষ্টি জিলাপি ছাড়া যেন চলেই না। ইফতারের প্লেটে আর যাই কিছুই থাকুক জিলাপি থাকা চায়ই চাই।
ছোট-বড় সর্বত্র মিলছে এটি। রাজশাহীতে জিলাপির মধ্যে রাণী বাজার বাটার মোড়ের ভাই ভাই জিলাপি তাদের সুনাম ধরে রেখেছে আজ অবধি। বছর জুড়েই জিলাপি রসিকদের রসনা মিটিয়ে আসছে। রমজান এলে তাদের চাহিদা আরও বেড়ে যায়। এরপর রয়েছে বড় মসজিদ চত্বরের শামীম সুইটের জিলাপি। ক্রেতাদের পছন্দের দিকে লক্ষ্য রেখে বড় বড় ফাস্টফুডের দোকানগুলো নানা নামের ও দামের জিলাপি এনেছে।
রাজশাহীতে চিলিস নামের বাংলা রেস্তোরাঁটি বরাবর ইফতারে নতুন কোনও আইটেম যোগ করে। তারা এবার রেশমি ও বোম্বে নামে জিলাপি এনেছে। দামও কম নয়। রেশমি জিলাপি ৩০০ টাকা কেজি আর বোম্বের জিলাপি ১৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করছে। অন্যান্য সব দোকানগুলোয় জিলাপির দাম ১০০ থেকে ১২০ টাকার মধ্যেই রয়েছে।
এবারও ঐতিহ্যবাহী রহমানীয়া রেস্তোরাঁ তাদের শাহী ফিরনী এনেছে। সেই পঞ্চাশের দশকের শুরু থেকে তারা এটি বিক্রি করছে। শুরুতে এর দাম ২৫ পয়সার কম থাকলেও এখন দাম বেড়ে প্রতি বাটি হয়েছে ২৫ টাকা। তবে এর মান সেই আগের মতো রয়েছে। তবে রমজানের শুরুর দিন থেকেই তাপদহের জন্য ইফতারের বাজারে ছন্দপতন ঘটছে। রোদ আর গরমের কারণে ইফতার কিনতে গিয়ে ঘাম ঝরছে রোজাদারদের।
এদিকে শুধু অভিজাত হোটেল-রেস্তোরাঁ কিংবা মিষ্টির দোকানই নয়, বিভিন্ন এলাকার ফুটপাতের সর্বত্রই পেঁয়াজু, বেগুনি, ছোলাভুনা, মুড়ি, জিলাপি বিক্রি হচ্ছে। আর নামিদামি দোকানগুলোয় এসব কমন আইটেমের সঙ্গে রেশমি কাবাব, সুতী কাবাব, কিমা পরোটা, তাওয়া পরোটা, কাটি কাবাব, চিকেন বল, সাসলিক, হালিম, তেহারি, খাসির রান, আস্ত মুরগি গ্রিল, বিরিয়ানীসহ সমাহার ঘটিয়েছে নানা মুখরোচক খাবারের।
চিলিস রেস্তোরাঁর বিক্রেতা আল-মামুন বাংলানিউজকে বলেন, ইফতারে তাদের মূল আকর্ষণ হচ্ছে শাহী হালিম ও তাওয়া পরোটা। এছাড়া বিভিন্ন রকমের কাবাব, জিলাপিসহ মুখোরোচক ইফতারের আয়োজন থাকছে প্রথম দিন থেকেই। তাই ভোজন প্রিয় মানুষে বিকেল হলে তাদের রেস্তোরাঁয় ভিড় করছেন। বিকেল থেকে ইফতারের আগ পর্যন্ত চলছে জমজমাট বিকিকিনি। তাদের পার্সেল সার্ভিস রয়েছে বলেও জানান এই বিক্রেতা।
বাংলাদেশ সময়: ১৭০৬ ঘণ্টা, মে ১৯, ২০১৮
এসএস/আরবি/