ঢাকা, শুক্রবার, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

ঢাকাই ইফতারের অনন্য আইটেম ‘বড় বাপের পোলায় খায়’

ইকরাম-উদ দৌলা, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২৩৭ ঘণ্টা, মে ১৮, ২০১৮
ঢাকাই ইফতারের অনন্য আইটেম ‘বড় বাপের পোলায় খায়’ পুরান ঢাকার বাহারি ইফতার/ছবি: বাংলানিউজ

ঢাকা: রমজান সংযমের মাস হলেও ইফতারটা ঘটা করেই করে থাকেন ভোজনরসিক বাংলাদেশিরা। ধনী, দরিদ্র সবাই মোটামুটি তার আয়ের একটা বিরাট অংশ রাখেন ধর্মীয় এই বাধ্যবাধকতা পালনের জন্য। দেশের সর্বত্রই তাই রমজান এলেই পথে, ঘাটে, হাটে, বাজারে মেলে বাহারি সব মুখরোচক খাবারের পসরা। দেখতেও যেমন মনকাড়া, স্বাদেও তেমন এসব খাবার। যদিনা ভেজাল হয়, তবে তৃপ্তি আর তুষ্টিতে কমতি থাকে না কারো।

ইফতার নিয়ে কথা বলতে গেলে পুরান ঢাকার কথা অবশ্যই বলতে হবে। সবক্ষেত্রেই ‘ঢাকাইয়াদের’ বৈশিষ্টই একটু আলাদা বলে সবাই জানেন।

কথা-বার্তা, চাল-চলনে তো অবশ্যই, এদের খাবারেরও রয়েছে ঐতিহ্য। যদি বলা হয় রমজানে সারাদেশের মধ্যে কোথায় ভালো এবং বেশি আইটেমের ইফতার পাওয়া যায়। তবে পুরান ঢাকা ছাড়া আর কোনো এলাকার নামই হয়োত এক ঝটকায় বলা যাবে। কেননা, শতশত আইটেমে এরা ইফতারের আয়োজন করে। এজন্যই বিখ্যাত চকবাজার ও তার আশেপাশের এলাকা।

চানখাঁরপুর পেরিয়ে পুরাতন কেন্দ্রীয় কারাগারের রোডে উঠতেই বেশ ভিড় লক্ষ্য করা গেল। সবাই পাঞ্জাবি পরা, হাতে ব্যাগ। এতো মানুষ হেঁটে হেঁটে আসছেন আর যাচ্ছেন, বাইক চালানোই দায়। তবুও ধীরে ধীরে কারাগারের ফটক পেরিয়ে ডান দিকে যেতেই যেন লোকে লোকারণ্য। চকবাজার বলে কথা, তাও আবার ইফতারের আয়োজন। ততক্ষণে বোঝা গেল এই যে রোজাদারের কাফেলা- এটা কোনদিকের!

দু’টি দোকানের মাঝে একটু সরু জায়গায় বাইক কোনরকম পার্ক করে রাখা গেলে। সকালের বৃষ্টির কারণে পুরো এলাকা কর্দমাক্ত হয়ে রয়েছে। তারওপরেই টেবিল পেতে খাবারের পসরা নিয়ে বসেছে বিভিন্ন হোটেল আর মৌসুমী ব্যবসায়ীরা। কি নেই এখানে। নানা ধরনের ফল, দই-মাঠা থেকে শুরু করে নানা ধরনের পানীয়, পনির ইত্যাদি।

সবেচেয় বেশি রয়েছে ভাজাপোড়া আইটেমের দোকান। সেখানে নানা ধরনের ঝাল পিঠা, বিভিন্ন রকমের কাবাব, শাহী পরাটা, ছোলা, খাসী ও মুরগীর পাশপাশি বিভিন্ন পাখির রোস্ট। তবে এসবকে ছপিয়ে সবার দৃষ্টি যেন ‘বড় বাপের পোলায় খা’ আইটেমটির প্রতি। এমন অবস্থা যে, দোকানি বানিয়ে রাখতে না রাখতে শেষ হয়ে যাচ্ছে। তবে অনেকেই সিরিয়ালে পেছনে পড়ে না নিয়েই চলে যাচ্ছেন।

‘বড় বাপের পোলায় খায়’ কেবল খাবারের বৈচিত্র্য আনতেই চেনা সব খাদ্যদ্রব্য দিয়েই তৈরি করা হয়। যার প্রচলন হয়েছিল প্রায় ৮০ বছর আগে। পুরান ঢাকার দাতা মোহাম্মদ কামাল মাহমুদ নামে এক ব্যক্তি এটি প্রথমে বানিয়েছিলেন। বর্তমানে তার নাতীরাই এটা বানাচ্ছেন। অনেক দোকানই আছে, যারা এই খাবার বানান, কিন্তু আসল ফমূর্লা কেবল ওই কামাল মাহমুদের উত্তরসূরিরাই জানেন- এমনটিই বললেন স্থানীয় বাসিন্দা সিকান্দার আলী।  

তিনি বলেন, আগে এটি ১৬ থেকে ২০ ধরনের খাবারের সঙ্গে ১৫ থেকে ২০ রকমের মসলা মিশিয়ে তৈরি করা হতো। উপদান কমে গেছে, তাই আগের সেই স্বাদও নেই।

দোকানি আলী হোসেন জানালেন, তারা ১২ রকমের দ্রব্য আর ১৩ রকমের মসলা দিয়ে এটি বানাচ্ছেন। খাদ্যদ্রব্য গুলোর মধ্যে রয়েছে- গরুর মগজ, কলিজা, মুরগির গোশতের কুচি, গিলা, কলিজা, গোশতের কিমা, আলু, ঘি, মরিচ, চিড়া, ডাবলি, ডাল ইত্যাদি।

একটি বড় গামলা বা বল’র মধ্যে সব একসঙ্গে মিশিয়ে যে মিশ্রণটি তৈরি করা হয়- সেটিই বড় বাপের পোলায় খায়। মিশ্রণটি ঠোঙ্গায় ভরে বিক্রি করা হয়। তবে দাম ধরা হয় কেজি দরে। প্রতি কেজি ৪’শ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে বলে জানান আলী হোসেন।

বাজারে আগত ক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানাগেল, শুধু ‍পুরান ঢাকা নয় নতুন ঢাকার মানুষও ইফতার কিনতে চকবাজারে এসেছেন। উত্তরার ৬ নম্বর সেক্টরের বাসিন্দা রবিউল হাসান বাংলানিউজকে বলেন, প্রতি বছরই কোনো না কোনো দিন পুরান ঢাকার ইফতার নিয়ে যাই। এদের আয়োজন আর খাবারে স্বাদ আলাদা। যেটা আর কোথাও পাওয়া যায় না। এবার প্রথম রোজার দিনই এলাম।

ব্যবসায়ী এই ঢাকাবাসীরও পছন্দ বড় বাপের পোলায় খায়। তবে অন্যান্য আইটেমগুলোও পরিবারের সদস্যদের পছন্দ মতো নিয়েছেন। এখানকার হালিম, মাঠা, জিলাপির স্বাদও বেশ, যোগ করেন তিনি।

বাংলাদেশ সময়: ১৮৩৩ ঘণ্টা, মে ১৮, ২০১৮
ইইউডি/এসএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।