ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৭ রমজান ১৪৪৫

জাতীয়

‘বেপরোয়া বাস কাড়বে আর কতো প্রাণ?’

আবাদুজ্জামান শিমুল, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪০৯ ঘণ্টা, মে ১৭, ২০১৮
‘বেপরোয়া বাস কাড়বে আর কতো প্রাণ?’ স্ত্রী সাবরিনা ইয়াসমিন আইরিন ও কন্যা নুসরাত জাহানের সঙ্গে ফ্রেমবন্দি নাজিম উদ্দিন, কিন্তু তিনি এখন কেবলই স্মৃতি। ছবি: সংগৃহীত

ঢাকা: ‘ঢাকার রাস্তায় এখন নামলেই যেন প্রাণ হাতে রাখতে হয়। কখন কোন গাড়ি এসে চেপে দিয়ে চলে যায়। রাজীব হোসেন, রোজিনা আক্তার রোজীদের মারার পর এবার আমাদের সহকর্মীর তরতাজা প্রাণও কেড়ে নিলো। এভাবে বেপরোয়া বাস আর কতো মানুষের প্রাণ কেড়ে নেবে বলতে পারেন?’

বৃহস্পতিবার (১৭ মে) সকালে রাজধানীতে দু’টি বেপরোয়া বাসের ধাক্কায় ইংরেজি দৈনিক ঢাকা ট্রিবিউনের বিজ্ঞাপন বিভাগের জ্যেষ্ঠ নির্বাহী নাজিম উদ্দিনের মৃত্যুতে এই আশঙ্কা ঝরছিলো তার সহকর্মীদের কণ্ঠে। দুই বাসের ধাক্কায় গুরুতর আহত নাজিমকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে নিয়ে এলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

 

খবর পেয়েই ঢামেকের জরুরি বিভাগে ছুটে আসেন তার সহকর্মী এবং স্বজনরা। এসময় স্বজন-শুভানুধ্যায়ীদের অনেকে কান্নায় ভেঙে পড়েন। তাদের সান্ত্বনা দিতে থাকেন অন্যরা।

সেখানে স্বজনরা জানান, নাজিম উদ্দিনের স্ত্রী সাবরিনা ইয়াসমিন আইরিন জুরাইনে আদ-দ্বীন হাসপাতালে ভর্তি আছেন। মাত্র তিনদিন আগে অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে একটি কন্যা সন্তানের জন্ম দেন সাবরিনা। আর এই আনন্দের সময়ে তাকে কেড়ে নিলো বেপরোয়া বাস।

নাজিম ভোলার লালমোহন উপজেলার দক্ষিণ বালুরচর গ্রামের আনিসুল হকের সন্তান। থাকছিলেন পোস্তগোলার করিম উল্লাহবাগ এলাকার একটি ভাড়া বাসায়। এ দম্পতির বড় মেয়ের নাম নুসরাত জাহান (৮)।

তাকে ঢামেকে নিয়ে আসা পথচারীরা বাংলানিউজকে জানান, নাজিম শনির আখড়া থেকে মোটরসাইকেল চালিয়ে গুলিস্তানের দিকে যাচ্ছিলেন। তিনি হানিফ ফ্লাইওভারে উঠলে একটি বাস তার মোটরসাইকেলকে ধাক্কা দেয়। এরপর ধাক্কা দেয় আরও একটি বাস। এতে তিনি গুরুতর আহত হন। পরে ঢামেকে আনার পর তাকে মৃত ঘোষণা করা হয়।

আলী নেওয়াজ হোসাইন নামে এক পথচারী বলেন, দুর্ঘটনার ঠিক এক মিনিট পর সেখানে গিয়ে দেখি, নাজিম আহত হয়ে রাস্তায় পড়ে আছেন এবং বেশ কয়েকজন পথচারী মোবাইল ফোনে তার ছবি তুলছেন। দ্রুত তারা কয়েকজন তাকে উদ্ধার করে একটি সিএনজিতে করে ঢামেকে নিয়ে আসেন। হাসপাতালে আনার সময়ও নাজিম শ্বাস নিচ্ছিলেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তাকে বাঁচানো গেলো না।

হোসাইন বলেন, আমরা যাত্রী ও প্রত্যক্ষদর্শী দের মুখে শুনেছি, বাস দু’টির রেষারেষিতেই নাজিমের মৃত্যু হয়েছে।  

দুর্ঘটনার পর মনজিল ও শ্রাবণ পরিবহনের বাস দু’টি থানায় নেওয়া হয়েছে জানিয়ে যাত্রাবাড়ীর থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আজিজুল রহমান বলেন, প্রথমে মনজিল পরিবহনের বাস ধাক্কা দেয় নাজিমের মোটরসাইকেলকে। পরে শ্রাবণ পরিবহনের বাসটিও ধাক্কা দেয়। এতে ছিটকে গিয়ে গুরুতর আহত হলে হাসপাতালে আনার পর তার মৃত্যু হয়। দুর্ঘটনার বিষয়ে মামলা প্রক্রিয়াধীন।

নাজিমের মরদেহের ময়না-তদন্তকারী ঢামেকের ফরেনসিক বিভাগের প্রধান ডা. সোহেল মাহমুদ বাংলানিউজকে জানান, নাজিমের বুকে ও পায়ে আঘাত ছিল। বুকে রক্তক্ষরণের কারণেই তার মৃত্যু হয়েছে।

ময়না-তদন্ত শেষে নাজিমের মরদেহ বুঝে নেন তার শ্বশুর আরিফ হোসেন। তিনি জানান, স্ত্রী সাবরিনাকে স্বামীর মরদেহ দেখানোর পর ভোলায় নাজিমকে দাফন করা হবে।  

বাংলাদেশ সময়: ২০০০ ঘণ্টা, মে ১৭, ২০১৮
এজেডএস/এইচএ/

** ফ্লাইওভারে বাস কেড়ে নিলো ঢাকা ট্রিবিউন কর্মকর্তার প্রাণ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।