ঢাকা, শুক্রবার, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৮ রমজান ১৪৪৫

জাতীয়

‘সংসদে কটুকথা বেশি, আইন প্রণয়নে সময় ৯ শতাংশ’ 

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৯৩৪ ঘণ্টা, মে ১৭, ২০১৮
‘সংসদে কটুকথা বেশি, আইন প্রণয়নে সময় ৯ শতাংশ’  টিআইবির সংবাদ সম্মেলনে কথা বলছেন সুলতানা কামাল/ছবি: জিএম মুজিবুর

ঢাকা: ৯০ দশকের শুরুর দিকে দেশে মুক্ত গণতন্ত্রের যে যাত্রা শুরু হয়েছিলো। ২৫ বছরেরও বেশি সময় পেরিয়ে এসে আজ বলা যায়, তা পুরোপুরি ব্যর্থ হয়েছে। লক্ষ্য পূরণ হয়নি গণতন্ত্রের সেই মুক্তচর্চার মাধ্যমে জনগণের মতামতের মূল্যায়ন।

মানুষের ভাগ্যান্নোয়নের মূল কেন্দ্র যে জাতীয় সংসদের হওয়ার কথা ছিল, সেই সংসদ এখন কটুকথা, পরনিন্দা, অপপ্রচার, আত্মপ্রচার, বিরোধীমতকে আক্রমণে ব্যবহৃত হচ্ছে। সংসদ সদস্যদের আইনপ্রণেতা বলা হলেও আইন প্রণয়নে ব্যয় হচ্ছে অধিবেশনের মাত্র ৯ শতাংশ সময়।



বৃহস্পতিবার (১৭ মে) বেলা ১১টায় ধানমণ্ডির মাইডাস সেন্টারে টিআইবির নিজস্ব কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে তুলে ধরা এক প্রতিবেদনে একথা বলা হয়।

প্রতিষ্ঠানের ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান সুলতানা কামাল সংবাদ সম্মেলনে বলেন, একটি ফলবাগান, একটি পুকুর বা একটি খামার সর্বসম্মতভাবে কাউকে তদারকি করতে দেওয়া মানেই বাগানের ফল, পুকুরের মাছ বা জমি বিক্রির অধিকার তদারককারীকে দেওয়া হয় না। কিন্তু আমাদের দেশের মালিক জনগণ হলেও ক্ষমতাসীনরা সব সময়ই দেশটাকে তাদের স্বার্থে ব্যবহার করেছেন। এজন্য ব্যবহার করেছেন সংসদকে। ভারতে একটি বিল পাস হতে আড়াই ঘণ্টা সময় লাগলেও এখানে লাগে ৩৮ মিনিট। মূলত আইন নিয়ে আলোচনার সময় পান না সংসদ সদস্যরা।

টিআইবির সংবাদ সম্মেলনে কথা ইফতেখারুজ্জামনটিআইবির প্রতিবেদনে বলা হয়, গত বছর জাতীয় সংসদ অধিবেশনে প্রতি কার্যদিবসে গড়ে ৩০ মিনিট কোরাম সংকটের কারণে অপচয় হয়েছে। এর প্রতি মিনিটে গড় অর্থমূল্য ৬৩ হাজার ৬৮৬ টাকা। এই হিসাবে গতবছর কোরাম সংকটের সময়ের অর্থমূল্য ৩৭ কোটি ৩৬ লাখ ৯৫ হাজার ১৩৮ টাকা। চলতি দশম সংসদে কোরাম সংকটের অর্থমূল্য ১২৫ কোটি টাকা।

গবেষণায় দেখা যায়, বিভিন্ন আলোচনা পর্বে সংসদ সদস্যরা অসংসদীয় ভাষা ব্যবহার করেছেন মোট সময়ের ৫ শতাংশ। সদস্যদের ভেতরের প্রতিপক্ষ দল সংসদের বাইরের রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে নিয়ে ১৯৫ বার অসংসদীয় ভাষা ব্যবহার করেছেন। বিশ্বব্যাংক ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধিদের নিয়ে অসংসদীয় ভাষা ব্যবহার হয়েছে ২৩ বার। সরকার ও বিরোধীদলের নেতা ও সংসদের বাইরের রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে নিয়ে বিভিন্নভাবে কটাক্ষ করা হলেও এ ধরনের আলোচনা বন্ধে স্পিকারের কার্যকর ভূমিকার ঘাটতি দেখা যায়।

সংবাদ সম্মেলনে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান বলেন, কোরাম সংকট সব সময়ই ছিল। এখন সেটি গড়ে ৩০ মিনিট, যা উদ্বেগের বিষয়। বিরোধীদল হিসেবে যাদের উপস্থাপন করা হয়েছে, সংসদের শেষ দিকে এসে তাদের নিজেদের আত্মপরিচয়ের সংকট একাধিকবার তাদের নিজেদের মুখেই শোনা গেছে।  

কোরাম সংকটের অর্থমূল্যের বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে ইফতেখারুজ্জামান বলেন, এটা প্রাক্কলিত আনুমানিক অর্থমূল্য। এটাকে টিআইবি দুর্নীতি বলছে না। একটি ধারণা দেওয়ার জন্য এই অর্থমূল্যের প্রাক্কলন করা হয়েছে।

সংসদে ৩৫০ জন সংসদ সদস্য রয়েছেন। কোরাম হলো সংসদ অধিবেশন বসার ন্যূনতম যোগ্যতা। সংসদে ন্যূনতম ৬০ জন সদস্য উপস্থিত থাকলে কোরাম গঠিত হয়। সংসদে ৬০ জন সদস্য উপস্থিত না থাকলে কোরাম সংকট হয়।

বাংলাদেশ সময়: ১৫১৮ ঘণ্টা, মে ১৭, ২০১৮
আরএম/এএ/জেএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।