ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

আবারও মর্গে মরদেহের স্তূপ, দাফন হচ্ছে না ফাইলিং জটিলতায়

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৪৩৩ ঘণ্টা, মে ১৫, ২০১৮
আবারও মর্গে মরদেহের স্তূপ, দাফন হচ্ছে না ফাইলিং জটিলতায় মর্গে পচছে মরদেহ

ঢাকা: রাজধানীতে বিভিন্ন সরকারি হাসপাতালের মর্গে অজ্ঞাতপরিচয় মরদেহের স্তূপ পড়ে আছে। দেহগুলো পচে শরীর থেকে খসে পড়ছে মাংস, দুর্গন্ধে ছেয়ে গেছে মর্গ। হিমাগারে একটির ওপর আরেকটি করে রাখা হয়েছে মরদেহ।

সোমবার (১৪ মে) দুপুরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের মরদেহ কাটার রুমের একটি কক্ষে গিয়ে দেখা গেছে, অজ্ঞাতপরিচয় মরদেহগুলো স্তূপ হয়ে পড়ে আছে।  এছাড়া মরদেহ স্তূপ হয়ে আছে শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল এবং স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালেও।

ঢামেক হাসপাতালের মর্গ সহকারী সেকান্দার আলী জানান, মৃত নবজাতক, নারী ও পুরুষসহ মোট ৩০টি অজ্ঞাতপরিচয় মরদেহ রয়েছে। এগুলো গত ১৫ দিন যাবৎ পড়ে আছে।

**ফ্রিজ নষ্ট, মর্গে পচছে মরদেহ ‍

দাফনের জন্য আঞ্জুমান মুফিদুল ইসলামের সঙ্গে বারবার যোগাযোগ করা হলেও তারা জানায়, কবরস্থান কর্তৃপক্ষ তাদের জানিয়েছে মাটি দেওয়ার জায়গা খালি নেই। বৃষ্টির পানিতে কবরস্থান ডুবে গেছে। তাই তারা মরদেহগুলো নিতে পারছে না। অন্য কবরস্থান থেকে বলা হয় বাঁশ-চাটাই নেই।

তিনি আরও জানান, রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে নানা কারণে মৃত্যু হওয়া সব মরদেহ স্ব স্ব থানায় সুরতহাল করে ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে পাঠায় পুলিশ। ময়নাতদন্ত শেষে অজ্ঞাতপরিচয় মরদেহগুলো হিমাগারে রাখা হয়।

সেকান্দার জানান, ঢামেকের হিমাগারে ২০টি মরদেহ রাখা যায়। সেখানে রাখা হয়েছে জঙ্গিসহ আরও অনেক মরদেহ। এর বাইরে আরও ৩০টি মরদেহ রাখার জায়গা না থাকায় মেঝেতে রাখা হয়েছে। সেগুলোতে পচন ধরেছে।  

ঢামেক মর্গ সূত্রে জানা গেছে, গত ৭ এপ্রিল ট্রেনে কাটা পড়ে অজ্ঞাতনামা (৫৫) পুরুষ, ২৯ এপ্রিল পল্টন থেকে অজ্ঞাতনামা নারী (৮০) ও হাসপাতালের মৃত নবজাতকসহ ৩০টি মরদেহ মর্গের মেঝেতে পচছে।  

এদিকে সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালের মর্গ সূত্রে জানা গেছে, গত ২ মাস যাবৎ শিশু, নারী ও পুরুষসহ অজ্ঞাতনামা ২০টি মরদেহ হিমাগারে রাখা আছে। মর্গের হিমাগারে মরদেহ রাখার ধারণ ক্ষমতা নয়টি। এর ফলে একটির উপরে আরেকটি মরদেহ রাখা হয়েছে।

সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালের ফরেনসিক বিভাগের প্রভাষক ডা. উজ্জ্বল কুমার সাহা জানান, মর্গে জমে থাকা মরদেহগুলোর দাফনের জন্য আঞ্জুমান মুফিদুল ইসলামের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তারা জানায়, অফিসিয়াল কিছু কাজের জন্য সমস্যা হচ্ছে। সমস্যা কেটে গেলেই মরদেহগুলো নেওয়া হবে। তবে এখন পর্যন্ত মরদেহগুলো নেয়নি তারা।

স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গ কর্মচারী শ্যামল জানান, গত ২৫ দিন ধরে অজ্ঞাতপরিচয় ছয়টি মরদেহ পচে যাচ্ছে। আঞ্জুমানকে অনেক ফোন দেওয়া হয়েছে। এখন পর্যন্ত মরদেহগুলো নেয়নি তারা। তারা জানিয়েছে, জুরাইন করবস্থানে পানি উঠেছে, একারণে দাফন করা সম্ভব হচ্ছে না।

আঞ্জুমান মুফিদুল ইসলাম (মুগদা অফিস) ডিউটি অফিসার মাহামুদুল ইসলাম জানান, বসিলা কবরস্থানে যোগাযোগ করা হলে তারা জানায়, অজ্ঞাত মরদেহ দাফনের জন্য বাঁশ-চাটাই নেই। আর জুরাইন কবরস্থান থেকে জানানো হয়েছে, একদিন বৃষ্টি হলেই পানি জমে যাচ্ছে।

জুরাইন কবরস্থানের ড্রেসার হাফেজ আবদুর সাত্তার জানান, বরাদ্দ করা অজ্ঞাত মরদেহের দাফনের স্থানে একটু বৃষ্টি হলেই পানি জমে থাকে। জায়গাটি খুবই নিচু। তবে খুবই তাড়াতাড়ি কর্তৃপক্ষ নিচু জায়গাটি উঁচু করবে। তখন দাফনের আর সমস্যা হবে না।

এদিকে ঢাকা উত্তর সিটি কপোরেশনের সমাজকল্যাণ কর্মকর্তা এনায়েত হোসেন জানান, বসিলা কবরস্থানে দাফনের জন্য প্রচুর জায়গা আছে। কিন্তু আঞ্জুমান অজ্ঞাতপরিচয় মরদেহ দাফনের জন্য ফ্রি বাঁশ-চাটাই চাচ্ছে। তাদের দাবির বিষয়ে ফাইল প্রসেসিং চলছে। এক সপ্তাহের মধ্যে সমস্যার সমাধান হবে।  

বাংলাদেশ সময়: ১০৩২ ঘণ্টা, মে ১৫, ২০১৮
এজেডএস/এসকে/আরআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।