ঢাকা, বুধবার, ১০ বৈশাখ ১৪৩১, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

রাস্তা খুঁড়তে যেন বৃষ্টির অপেক্ষা!

সেরাজুল ইসলাম সিরাজ, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২৩৩৯ ঘণ্টা, মে ১৪, ২০১৮
রাস্তা খুঁড়তে যেন বৃষ্টির অপেক্ষা! রাস্তা খুঁড়া হচ্ছে। ছবি: বাংলানিউজ

ঢাকা: ছোটবেলায় দেখতাম আমন রোপণের জন্য বৃষ্টির অপেক্ষায় থাকতেন কৃষকরা। আর এখন দেখি ঢাকায় রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ির জন্য বৃষ্টির অপেক্ষায় বসে থাকেন যেন সংশ্লিষ্টরা। মে’র প্রথম সপ্তাহে যেদিন থেকে টানা বৃষ্টি শুরু হয়েছে, ঠিক সেই দিনে আগারগাঁও থেকে ফার্মগেট পর্যন্ত রাস্তা কাটা শুরু করেছে ডিপিডিসি (ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি)। সারাবছর তারা যেন সময় করে উঠতে পারেনি।

বর্ষা মৌসুমে খোঁড়াখুঁড়ি নিয়ে এমন ক্ষোভ প্রকাশ করলেন ফার্মগেট এলাকার বাসিন্দা মাসুম শেখ। রাজধানীর বিভিন্ন সড়ক ঘুরে তার এই ক্ষোভেরই যেন যৌক্তিকতা খুঁজে পাওয়া যায়।

রাস্তা খুঁড়া হচ্ছে।  ছবি: বাংলানিউজরাজধানীর দক্ষিণাঞ্চল ও নারায়ণগঞ্জের বিদ্যুৎ বিতরণের দায়িত্বে থাকা ডিপিডিসি কাজ করছে ১৩২ কেভি আন্ডারগ্রাউন্ড ক্যাবল স্থাপনের জন্য। তারই অংশ হিসেবে ফুটপাতঘেঁষে রাস্তা খোঁড়া শুরু করেছে তারা। ব্যস্ত সড়কটিতে করে রাখা হয়েছে বিশাল গর্ত। মাটি তুলে রাস্তার ওপর ফেলে রাখায় সৃষ্টি হয়েছে বিদঘুটে পরিস্থিতির।

মাসুম শেখ বলছিলেন, বৃষ্টির পানিতে পুরো রাস্তায় কাদায় একাকার হয়ে যায়। আবার রোদের সময় ধুলায় অন্ধকার হয়ে থাকে। রাস্তা সংকুচিত হয়ে পড়ায় যানজট লেগেই থাকছে সারাক্ষণ। অথচ এই কাজটি বর্ষায় না করে আগে করে নেওয়া যেতো, তাহলে এতটা দুর্ভোগ বাড়তো না। ।

ডিপিডিসির এ ধরনের কর্মকাণ্ড গত বছরও দেখা গেছে রামপুরা এলাকায়। ঠিক বর্ষা মৌসুমে তারা রাস্তা কেটে আন্ডারগ্রাউন্ড ক্যাবল স্থাপনের কাজ করে। আবার তাদের কাজের গতিও মন্থর থাকার অভিযোগ রয়েছে। এমনকি রাস্তা কেটে রেখে যায়, তারপর আর তাদের দেখা মেলে না বলেও ক্ষোভ আছে বাসিন্দাদের।

শুধু যে ডিপিডিসি, তা নয়, অন্যান্য ইউটিলিটিও বর্ষা মৌসুম এলেই খোঁড়াখুঁড়ি শুরু করে দেয়। ১০ মে রূপনগর প্রধান সড়কে কাজ শুরু করেছে ওয়াসা। রাস্তার ওপর বিশাল বিশাল রিং ফেলে রেখেছে তারা। মাঝে মাঝে গর্ত করে তৈরি করেছে ভোগান্তির পরিস্থিতি। যানবাহন চলাচল দূরের কথা, রাস্তায় হেঁটে চলাই দায়। ছবি: বাংলানিউজরূপনগরের বাসিন্দা কামরুল হাসান বাংলানিউজকে বলেন, কাজের কোনও ভাবগতি বুঝতে পারছি না। রাস্তার মাঝে বিশাল গর্ত করে রেখে গেছে বেশ ক'দিন আগে। এখন দেখি রাস্তার ওপর বিশাল বিশাল রিং ফেলে রাস্তা বন্ধ করে রেখে গেছে। এতে রাস্তা অর্ধেক বন্ধ হয়ে গেছে। সকাল থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত যানজট লেগেই থাকছে। তাছাড়া, রূপনগর এলাকার প্রধান সড়কের পাশেই রয়েছে বেশ ক'টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। ফুটপাতও স্থায়ীভাবে দখলদারদের কবলে। সেজন্য পথচারীদেরও হাঁটার সুযোগ নেই।

বর্ষায় খোঁড়াখুঁড়ি নিয়ে অনেকদিন ধরেই সমালোচনা চলছে। কিন্তু ঠিক যখন মে-জুনে ভরা বর্ষা শুরু হয়, তখনই শুরু হয় খোঁড়াখুঁড়ি। সামালোচনা-নিন্দা, কিছুই যেন ছুঁতে পারে না ইউটিলিটিগুলোকে। সেজন্য তাদের বক্তব্য, আগে-ভাগে বরাদ্দ পাওয়া যায় না। যে কারণে কাজ করানো যায় না। তাদের সুপারিশ হচ্ছে অর্থবছর এগিয়ে আনা। ভারতের মতো মার্চ-ফেব্রুয়ারি করা গেলে এই অবস্থা থেকে পরিত্রাণ পাওয়া সম্ভব। নতুবা সম্ভব নয়।

এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর অর্থ বিষয়ক উপদেষ্টা ড. মসিউর রহমানের বক্তব্য, বাজেট হয় জুনে, সেপ্টেম্বরের মধ্যে প্ল্যানিং করে কাজে নেমে গেলেই এই সমস্যা হওয়ার কথা নয়।

বাংলাদেশ সময়: ০৫৩৮ ঘণ্টা, মে ১৫, ২০১৮
এসআই/এইচএ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।