ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

অজানা রোগ থেকে মুক্তি চায় পাভেল

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০২২ ঘণ্টা, মে ১৪, ২০১৮
অজানা রোগ থেকে মুক্তি চায় পাভেল পাভেল আহমদ

মৌলভীবাজার: পাভেল আহমদ। মাত্র পনেরো বছরের এক কিশোর। তিন বছর ধরে এক অজানা রোগে আক্রান্ত। শুরুর দিকে শুধ‍ু তার নাক দিয়ে রক্ত ঝরতো। এরপর শুরু হলো মুখ দিয়ে রক্ত ঝরা। চিকিৎসকের পরামর্শে নাকের অপারেশন করিয়েও কোনো ফল হয়নি। 

কিছুদিন পরে একদিন সকালে ঘুম ভাঙার পর চোখ মেলতে পারছিলো না। আয়নার সামনে গিয়ে দেখতে পায় তার চোখ থেকে রক্ত ঝরছে।

নাক ও মুখের রক্ত ঝরা তো বন্ধ হলোই না আবার নতুন করে চোখ দিয়ে রক্ত ঝরা শুরু। সেদিন থেকে শুরু হয় পাভেলের ভীত সন্ত্রস্ত জীবন।

পাভেল আহমদ মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলার কর্মধা ইউনিয়নের বাবনিয়া গ্রামের আব্দুস শহিদের ছেলে। দুই ভাই ও চার বোনের মধ্যে সে সবার ছোট। পাভেল একই এলাকার বাবনিয়া হাসিমপুর নিজামিয়া আলিম মাদ্রাসার ৭ম শ্রেণির ছাত্র।
পাভেল আহমদ
পরিবার সূত্রে জানা যায়, প্রায় তিন বছর আগে পাভেলের নাক দিয়ে রক্তক্ষরণ শুরু হয়। চিকিৎসার জন্য উপজেলা শহরে ডা. দেবাশীষ বসুর কাছে নিয়ে যাওয়া হয় তাকে। ডাক্তারের দেওয়া ওষুধ ব্যবহার করায় রক্তক্ষরণ বন্ধ হয়ে যায় তার। বেশ স্বাভাবিক জীবন চলছিল পাভেলের। হঠাৎ করে গত বছরের অক্টোবর মাসে পুনরায় তার নাক দিয়ে রক্তক্ষরণ শুরু হয়। সঙ্গে মুখ দিয়েও রক্ত আসতে থাকে। তখন চিকিৎসার জন্য তাকে নিয়ে যাওয়া হয় সিলেটে ডা. নুরুল হুদা নাইম এর কাছে।  

তিনি জানান, পাভেলের নাকের ভেতরে মাংসপেশি বেড়ে গেছে এবং নাকের হাড় বাঁকা। এর পর ডা. একে.এম. হাফিজের তত্ত্বাবধায়নে চিকিৎসা নিতে শুরু করে পাভেল। তিনি নানা পরীক্ষা নিরীক্ষা করে তার নাকের অপারেশন করার পরামর্শ দেন।

চিকিৎসকের কথা অনুযায়ী চলতি বছরের শুরুতে একটি বেসরকারি হাসপাতালে পাভেলের নাকে দু'টি অপারেশন করা হয়। অপারেশন শেষে বাড়ি ফেরার পরও রক্তক্ষরণ বন্ধ হয়নি তার। আবার সেই চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যাওয়া হয় তাকে।  

তখন ডা. হাফিজ জানান, এভাবে এক মাস রক্ত বের হতে পারে। সাথে তিনি গলায় অপারেশনেরও পরামর্শ দেন। কিন্তু পাভেলের পরিবার তাতে আস্থা রাখতে পারেনি। চিকিৎসকের দেওয়া ওষুধ সেবন করে যাচ্ছিল সে। হঠাৎ করে চলতি বছরের এপ্রিলের শুরুতে একদিন সকালে ঘুম ভাঙার পর পাভেলের চোখে রক্ত জমাটবদ্ধ দেখা যায়। আবার নিয়ে যাওয়া হয় ডা. হাফিজের কাছে। চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী পাভেলের পরিবারের সদস্যরা গলায় অপারেশন করতে চাইলে চিকিৎসক তাতে সায় দেননি। তখন বিভিন্ন ধরনের ওষুধ দিয়ে বাড়ি পাঠিয়ে দেন তাদের।  

এমতাবস্থায় প্রায় দিন সকালে তার চোখ থেকে রক্তক্ষরণ হতে থাকে। ভয় পেয়ে যায় পাভেলের পরিবারের সদস্যরা। চলতি মাসের ৫ তারিখ উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে নিয়ে যাওয়া হয় ঢাকার গ্রিনলাইফ হাসপাতালে। সেখানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ডা. প্রাণগোপাল দত্তের তত্ত্বাবধায়নে পাভেলের বেশ কিছু টেস্ট করানো হয়। তাতেও কোনো রোগ ধরা পড়েনি। হতাশ হয়ে ফিরে আসে পাভেল ও তার পরিবার।
পাভেল আহমদ
অজানা রোগে আক্রান্ত পাভেল বাংলানিউজকে বলে, নিজের প্রতি আমি বিরক্ত। চোখ, নাক ও গলা দিয়ে রক্ত বের হয় এক দু'দিন পর পর। চোখ দিয়ে রক্ত বের হলে অসহ্য জ্বালা যন্ত্রণা করে। বিশেষ করে সকালে চোখে রক্ত জমাট বে‍ধে থাকে। এমন অবস্থায় ঘরের বাইরে বের হই না। পড়ালেখা বন্ধ হয়ে আছে।

সে আরো বলে, আমার কি রোগ হয়েছে তা কোনো ডাক্তার বলতে পারছেন না। তার মানে আমি কোনদিনই কি এর থেকে মুক্ত হতে পারব না? আক্ষেপের সুরে পাভেল বলে, আমি আবার মাদ্রাসায় যেতে চাই। পড়ালেখা করতে চাই। আমি শুধু একবার জানতে চাই এ রোগের চিকিৎসা কোথায় করাব।

পাভেলের মা তৈবুন নেছা বাংলানিউজকে বলেন, ছেলের চিকিৎসার জন্য আজ তিন বছর থেকে দৌড়াচ্ছি কিন্তু কোনো সমাধান পাচ্ছিনা। অপারেশন করিয়েও কাজ হচ্ছে না। কোনো চিকিৎসক রোগ শনাক্ত করতে পারছেন না। এমন অবস্থায় কী করব ভেবে পাচ্ছিনা। যখন তখন রক্ত ঝরে তার চোখ মুখ দিয়ে। তাকে নিয়ে আমরা খুব দুঃশ্চিন্তায় আছি।

তিনি আরো বলেন, আমার বড় ছেলে হান্নান মিয়া দুবাই প্রবাসী। তার রোজগারে সংসার চলে। এর মধ্যে প্রায় তিন লাখ টাকা পাভেলের চিকিৎসায় ব্যয় হয়ে গেছে। টানাপড়েনের মধ্যে সংসার চলছে। তবুও আমি শুধু জানতে চাই কোথায় গেলে আমার ছেলেকে সুস্থ করতে পারব। ছেলের চিকিৎসার জন্য তৈবুন নেছা দেশের মানুষের কাছে এ রোগের চিকিৎসালয়ের সন্ধান চান।

বাংলাদেশ সময়: ১২২৬ ঘণ্টা, মে ১৪, ২০১৮ 
আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।