নির্মাণাধীন সেতুটি পরিদর্শন করে গিয়ে ফেসবুক পেজে তিনি লিখেছেন, “ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে যোগাযোগ বাড়িয়ে তোলার লক্ষ্যে সীমান্ত এলাকায় নির্মাণাধীন ফেনী ব্রিজ পরিদর্শনে যাই আজ (৩০ এপ্রিল)। এই ব্রিজের কাজ শেষ করার জন্য ২০১৯ পর্যন্ত সময়সীমা দেওয়া হয়েছে।
এই ব্রিজটির মাধ্যমে আমরা সরাসরি চট্টগ্রাম বন্দরকে ব্যবহার করার সুযোগ পাবো। ফলে উত্তরপূর্ব ভারতে আমদানি ও রপ্তানি বাণিজ্য আরো সহজ হয়ে যাবে ও ত্রিপুরা তথা সাব্রুম দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার প্রবেশদ্বার হিসাবে পরিচিতি লাভ করবে। সুতরাং, এই ব্রিজটি নির্মাণ হয়ে গেলে ত্রিপুরায় শিল্প স্থাপনের মাধ্যমে এখানকার উৎপাদিত দ্রব্য যেমন অতি সহজেই বিশ্ব বাজারে বিক্রি করা যাবে তার সাথে, সাথে রাজ্যের আয় বাড়ার পাশাপাশি কর্ম সংস্থানের সুযোগও সৃষ্টি হবে।
অন্যদিকে গোমতি নদীর নাব্যতা বাড়িয়ে সেখানে ছোট আকারের জাহাজ চালানোর মধ্য দিয়ে আমদানি রপ্তানি বাণিজ্য বাড়ানোর দিশাতেও সরকার কাজ করছে। ”
২০১৫ সালের ৬ জুন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর ঢাকা সফরে বাংলাদেশ-ভারত উভয় দেশের প্রধানমন্ত্রী রামগড় স্থলবন্দর চালুর লক্ষ্যে ফেনী নদীর উপর রামগড়-সাব্রুম মৈত্রী সেতু-১ এর ভিত্তি প্রস্তর উদ্বোধন করেন।
বাংলাদেশ-ভারত অভিন্ন সীমান্তে ফেনী নদীর উপর ১৫০ মিটার দৈর্ঘ্য ব্রিজ নির্মাণের জন্য বাংলাদেশের সীমান্ত পিলার নং-২২১৫-৪ আর-বি এলাকাটি পরিদর্শন করে মৈত্রী সেতু-১ নির্মাণ বিষয়ে ২০১৬ সালের ৭ ডিসেম্বর বাংলাদেশ-ভারত উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধি দলের পর্যবেক্ষণ শেষে রামগড় পৌরসভায় দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে মিলিত হয়।
বৈঠকের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৯ সালের মধ্যে বন্দর সেতু নির্মাণ কাজ শেষ করা এবং ভারতীয় অর্থায়নে ১৫০ মিটার দৈর্ঘ্যের মূল সেতু এবং সংযোগ সড়কসহ ৪১২ মিটার দৈর্ঘ্য ও ১৪.৮ মিটার প্রস্থের সেতু নির্মাণের কথা রয়েছে।
বৈঠকে বাংলাদেশ দলের সাত সদস্যের নেতৃত্ব দেন বাংলাদেশ সড়ক ও রেলপথ যোগাযোগ মন্ত্রণালয় বিভাগের যুগ্ম-সচিব (উন্নয়ন) মোহাম্মদ মোস্তফা, ভারতীয় দলের এগার সদস্যের প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেন ত্রিপুরা রাজ্য সরকারের শিল্প ও বাণিজ্য বিভাগের সচিব মি. জেনার।
এ সময় সাউথ ত্রিপুরার প্রজেক্ট ডিরেক্টর পি-চাকমা জানিয়েছিলেন, ১০০ বছর মেয়াদী ১৫০ মিটার দৈর্ঘ্যের এ ব্রিজ নির্মাণের সম্ভাব্য ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ১৩ কোটি টাকা। পরবর্তীতে ১৩ ডিসেম্বর বন্দর এলাকার বাংলাদেশ অংশে সড়ক-জমি ও সীমানা নির্ধারণের কাজ শেষ করা হয়।
২০১৭ সালের বছরের ২ জানুয়ারি খাগড়াছড়ি জেলা প্রশাসনের আয়োজনে জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে রামগড় স্থলবন্দর উন্নয়ন বিষয়ে গণপরামর্শ সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্য বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান তপন কুমার চক্রবর্তী বলেছিলেন, বছরের শেষ দিকে শত কোটি টাকা ব্যয়ে বাংলাদেশ-ভারতের মধ্যে ২৩ তম রামগড় স্থলবন্দর নির্মাণ করবে বিশ্বব্যাংক। আর পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী বন্দর এলাকার ফেনী নদীতে মৈত্রী সেতু-১ নির্মাণ করবে ভারত সরকার।
তিনি আরো জানান, বন্দর অবকাঠামো ও সেতু নির্মাণে বন্দর এলাকার মহামুনি থেকে ১০ একর জমি অধিগ্রণের প্রস্তাব ইতোমধ্যে পরিকল্পনা কমিশনে পাঠানো হয়েছে।
চলতি বছরের ৩ জানুয়ারী নির্মানাধীন ব্রিজটি পরিদর্শন করেন বাংলাদেশের সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের ও ভারতীয় হাইকমিশনার হর্ষ বর্ধন শ্রিংলাসহ দু’দেশের প্রতিনিধি দল।
সর্বশেষ চলতি বছরের ২১ এপ্রিল (শনিবার) সেতুর নির্মাণ কাজ পরিদর্শনে আসেন নৌমন্ত্রী শাজাহান খান।
এ সময় তিনি বলেন, খাগড়াছড়ির রামগড় সীমান্ত নদী ফেনীর উপর নির্মাণাধীন মৈত্রী সেতুর কাজ শেষ হলে বাংলাদেশ-ভারত স্থলবন্দরের কাঠামোগত উন্নয়ন কাজ শুরু করা হবে।
এই সেতু নির্মাণে দু’দেশের অর্থনৈতিক অবস্থার চিত্র পাল্টা দেবে বলেও তিনি আশা ব্যক্ত করেন।
বাংলাদেশ সময়: ১৩৪৩ ঘণ্টা, মে ০৪, ২০১৮
এসএইচডি