ঢাকা, শুক্রবার, ৫ বৈশাখ ১৪৩১, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

রানা প্লাজা ধসের ঘটনার বিচারে সদিচ্ছার ঘাটতি: টিআইবি

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২০০ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৬, ২০১৮
রানা প্লাজা ধসের ঘটনার বিচারে সদিচ্ছার ঘাটতি: টিআইবি টিআইবির সংবাদ সম্মেলন

ঢাকা: রানা প্লাজা ধসে ১ হাজার ১৩৮ শ্রমিক নিহত ঘটনার পাঁচ বছরে পেরিয়ে গেলেও দোষীদের বিচার না হওয়ার পেছনে রাজনৈতিক সদিচ্ছার ঘাটতি রয়েছে বলে মনে করে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)।

দুর্ঘটনার পর সংশ্লিষ্টদের সমন্বিত উদ্যোগে তৈরি পোশাক খাতে সুশাসন প্রতিষ্ঠায় উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হলেও অনেক ক্ষেত্রেই এখনো ঘাটতি রয়েছে বলে জানিয়েছে সংস্থাটি।

বিভিন্ন অংশীজন কর্তৃক গৃহীত উদ্যোগের ৩৯ শতাংশ বাস্তবায়িত হলেও ৪১ শতাংশ উদ্যোগের বাস্তবায়ন এখনো চলমান এবং ২০ শতাংশ উদ্যোগের বাস্তবায়ন স্থবির বা ধীর গতিতে হচ্ছে।

মালিকপক্ষ ব্যবসা টিকিয়ে রাখার ওপর গুরুত্ব প্রদানসহ রপ্তানি প্রবৃদ্ধিকে প্রাধান্য দিলেও শ্রমিক অধিকার ও সামাজিক নিরাপত্তাকে পর্যাপ্ত গুরুত্ব দিচ্ছেন না বলেও জানায় টিআইবি।  

বৃহস্পতিবার (২৬ এপ্রিল) সকালে টিআইবির ধানমন্ডিস্থ কার্যালয়ে ‘তৈরি পোশাক খাতে সুশাসন: অগ্রগতি ও চ্যালেঞ্জ’ শীর্ষক গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ উপলক্ষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য তুলে ধরে টিআইবি ৮ দফা সুপারিশ পেশ করে।  

টিআইবি’র বোর্ড অব ট্রাস্টিজের চেয়ারপারসন অ্যাডভোকেট সুলতানা কামাল, নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান, গবেষণা ও পলিসি বিভাগের পরিচালক মোহাম্মদ রফিকুল হাসান, সিনিয়র প্রোগ্রাম ম্যানেজার ও গবেষণাটির তত্ত্বাবধায়ক মো. ওয়াহিদ আলম সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন।  

গবেষণা প্রতিবেদনটি উপস্থাপন করেন টিআইবি’র গবেষণা ও পলিসি বিভাগের অ্যাসিস্ট্যান্ট প্রোগ্রাম ম্যানেজার নাজমুল হুদা মিনা।

গবেষণা প্রতিবেদন অনুযায়ী, রানা প্লাজা দুর্ঘটনার পরবর্তী পাঁচ বছরে সংশ্লিষ্ট অংশীজনের সমন্বিত উদ্যোগের ফলে কারখানা নিরাপত্তা, তদারকি, শ্রমিকের মজুরি, সরকারি প্রতিষ্ঠানের সক্ষমতা ইত্যাদি ক্ষেত্রে বেশ অগ্রগতি লক্ষণীয় হলেও অনেকক্ষেত্রে এখনো ঘাটতি রয়েছে। শ্রমিক অধিকার নিশ্চিতে আইনি সীমাবদ্ধতা এবং যৌথ দরকষাকষির পরিবেশ সৃষ্টিতে রাজনৈতিক সদিচ্ছার ঘাটতির পাশাপাশি মালিক পক্ষের প্রভাব এখনো অব্যাহত রয়েছে।  

অপরদিকে, শ্রমিকের চাকুরিচ্যুতিতে ক্ষতিপূরণ ব্যবস্থা, দুর্ঘটনার জন্য পর্যাপ্ত ক্ষতিপূরণ, মাতৃত্বকালীন সুবিধা, সংগঠন করার অধিকার, মারাত্মক অসুস্থতার জন্য সামাজিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা ইত্যাদি বিষয়ে প্রত্যাশিত অগ্রগতি হয়নি। বায়ার প্রতিষ্ঠানের পরিদর্শনকৃত অধিকাংশ কারখানার নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হলেও জাতীয় উদ্যোগের কারখানাসমূহে কোনো অগ্রগতি হয়নি।

সংবাদ সম্মেলনে ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, সার্বিক বিবেচনায় তৈরি পোশাক খাতের উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হলেও এখনো অনেক চ্যালেঞ্জ রয়েছে। অর্জিত অগ্রগতির বাস্তব সুফল থেকে শ্রমিকরা এখনো বঞ্চিত। শ্রম আইনে শ্রমিকদের ইউনিয়ন করার অধিকার দেওয়া হলেও নিবন্ধনপ্রাপ্ত শ্রমিক ইউনিয়নগুলো কার্যকরভাবে শ্রকিকদের অধিকার কতটুকু রক্ষা করতে পারছে সে বিষয়ে যথেষ্ট সন্দেহ রয়েছে। মালিক পক্ষের নিয়ন্ত্রণে থাকা শ্রমিক ইউনিয়নগুলোই প্রাধান্য বিস্তার করছে এবং শ্রমিকদের বাস্তব অধিকার প্রাপ্তির ক্ষেত্রে এসব সংগঠনের প্রতিবাদ করতে দেখা যায়।  

রানা প্লাজা দুর্ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্তদের এখনো যথাযথ ক্ষতিপূরণ দিতে না পারা অত্যন্ত উদ্বেগজনক এবং বিষয়টি সরকার, মালিকপক্ষ এবং বায়ারদের একটি ত্রিমুখী ব্যর্থতা বলে উল্লেখ করে ইফতেখারুজ্জামান বলেন, জাতিসংঘ ঘোষিত টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যসমূহ অর্জন করতে হলে অবশ্যই তৈরি পোশাক খাতের উন্নয়ন করতে হবে।

অ্যাডভোকেট সুলতানা কামাল বলেন, মালিকপক্ষ যা কিছুই করছে সেটা তাদের রপ্তানি বৃদ্ধি ও ব্যবসা টিকিয়ে রাখার লক্ষ্যে করছে, শ্রমিকদের স্বার্থ রক্ষার জন্য নয়। তৈরি পোশাক খাতে মালিকপক্ষের শ্রমিক অধিকারসুলভ মানসিকতার ঘাটতির কারণেই এখনো খাতটিতে সুশাসনের প্রকট ঘাটতি রয়েছে।

বাংলাদেশ সময়: ১৭৫৬ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৬, ২০১৮
এমজেএফ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।