ঢাকা, বুধবার, ১০ বৈশাখ ১৪৩১, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

৫ হাজার ৫০৩ পদে সুপারিশই সাড়ে ৭ হাজার!

মফিজুল সাদিক, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২৩২৩ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৫, ২০১৮
৫ হাজার ৫০৩ পদে সুপারিশই সাড়ে ৭ হাজার!

ঢাকা: নওগাঁ জেলার একটি সংসদীয় আসনের সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগের অত্যন্ত প্রভাবশালী এক নেতা তিনি। ‘একটি বাড়ি একটি খামার’ প্রকল্পে ফিল্ড অফিসার পদে চাকরি দেওয়ার জন্য স্থানীয় ২২ জনের নামে পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় বিভাগের সচিব এস. এম. গোলাম ফারুক বরাবর ডিও লেটার (চাহিদা পত্র) পাঠিয়েছেন তিনি।

এই ডিও লেটারটি বুধবার (২৫ এপ্রিল) দুপুরে ‘একটি বাড়ি একটি খামার প্রকল্পে’র পরিচালক (অতিরিক্ত সচিব) আকবর হোসেনের কাছে পাঠিয়ে দিয়েছেন সচিব এস. এম. গোলাম ফারুক।  

শুধু তিনিই নন, একইভাবে কুড়িগ্রামের একটি আসনের একজন এমপিও ডিও লেটার পাঠিয়েছেন প্রকল্পের আওতায় ফিল্ড অফিসার পদে নিয়োগের জন্য।


 
একটি বাড়ি একটি খামার প্রকল্পটি চলমান। বর্তমানে প্রকল্পে জনবল সংকট চরমে। এটা নিরসনে প্রকল্পের আওতায় ৫ হাজার ৫০৩ জন মাঠ সহকারী ও ফিল্ড সুপারভাইজার নিয়োগ দেয়া হবে। অথচ এই পদের বিপরীতে এমপিসহ অনেক প্রভাবশালী নেতা ডিও লেটারের মাধ্যমে ৭ হাজার ৫৫০টি পাঠিয়েছেন। প্রতিদিনই সারাদেশ থেকে একাধিক এমপি বিভিন্ন ব্যক্তির জন্য ডিও লেটার পাঠিয়ে সুপারিশ করছেন নিয়োগের জন্য।
 
প্রকল্পসংশ্লিষ্ট এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বাংলানিউজকে বলেন, এমপি-মন্ত্রী ও বড় বড় নেতারা প্রতিদিন চাকরির জন্য ডিও লেটার দিচ্ছেন। ৫ হাজার ৫০৩ পদ, অথচ সুপারিশই সাড়ে সাত হাজার ছাড়িয়ে গেছে। এক ব্যক্তি ৪৮ জনকে চাকরি দেওয়ার জন্য সুপারিশ করেছেন- এমন নজিরও আছে।  

‘দক্ষিণাঞ্চলীয় একটি জেলার আওয়ামী লীগের একজন প্রভাবশালী এমপির স্বাক্ষর নকল করেও ডিও লেটার পাঠানোর ঘটনা ঘটেছে। যখন ওই এমপির নিজের পাঠানো আসল ডিও লেটারটি দেখলাম তখন দেখি আগের ডিও লেটারের সঙ্গে এটির সাক্ষর মেলে না। ’
 
প্রকল্পে মাঠ সহকারী ও ফিল্ড সুপারভাইজার নিয়োগের জন্য ২০১৭ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে সার্কুলার দেওয়া হয়।  এরপরে ২০১৭ সালের ১০ নভেম্বর পরীক্ষা নেওয়া হয়। এই দুই পদে নিয়োগের যাবতীয় কার্যক্রম সম্পন্ন হবে ২০১৮ সালের জুন মাসে।
 
পরীক্ষার আগেই তিন হাজার জনের নামে সুপারিশ করা হয়। লিখিত পরীক্ষা শেষ হওয়ার পর আরও সাড়ে চার হাজার জনের নামে সুপারিশ পাঠানো হয়। সব মিলিয়ে সাড়ে ৭ হাজার সুপারিশ ছাড়িয়ে গেছে  একটি বাড়ি একটি খামার প্রকল্পে।  
 
এরই মধ্যে তদবিরের চাপে বিপর্যস্ত প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা। প্রতিদিনই শতাধিক তদবির জমা পড়ছে নানা মহল থেকে।
 
এসব তদবিরে নিয়োগ ঠেকাতে কৌশলী হয়েছেন কর্মকর্তারা। দুই পদে সাড়ে আট লাখ পরীক্ষার্থী অংশগ্রহণ করেছেন। সকল পরীক্ষা এমসিকিউ পদ্ধতিতে হয়েছে।  
 
আধুনিক তথ্যপ্রযুক্তির সুবিধাকে কাজে লাগিয়ে প্রার্থীদের পরীক্ষাগ্রহণ সফলভাবে সম্পন্ন হয়েছে। উত্তরপত্র দেখা হয়েছে একাধিক কর্মকর্তার উপস্থিতিতে এবং সিসি ক্যামেরার পর্যবেক্ষণের আওতায়। এছাড়া ভুয়া পরীক্ষার্থী ঠেকাতে প্রার্থীদের ছবিযুক্ত হাজিরা শিট সরবরাহ করা হয়েছে। এতে করে কেন্দ্রে গিয়ে ছবি দেখে অনেক ভুয়া প্রার্থী দৌড়ে পালিয়েছেন বলেও জানা গেছে।
 
মৌখিক পরীক্ষার দায়িত্ব দেয়া হয়েছে ডিসি অফিসকে। তদবিরের চাপ থেকে মুক্ত করতে নিয়োগের ক্ষেত্রে একটি বাড়ি একটি খামার প্রকল্পের সংশ্লিষ্টরা নিজেদের দূরে রেখেছেন।

এখন উত্তরপত্রের নম্বর এবং মৌখিক পরীক্ষায় ডিসিদের দেয়া নম্বর যোগ করেই নিয়োগ দেওয়া হবে এই দুই পদে।
 
তদবির প্রসঙ্গে প্রকল্পের পরিচালক (অতিরিক্ত সচিব) আকবর হোসেন বলেন, আমরা নিয়োগপদ্ধতি এমনভাবে করেছি, যাতে আমাদের কাছে তদবির করেও কোনো লাভ না হয়।  

এরই মধ্যে কিছু জায়গায় তা নেওয়া হয়ে গেছে। কিছু জায়গায় নেওয়ার বাকি রয়েছে। মৌখিক পরীক্ষা ও লিখিত পরীক্ষার নম্বর এক করে আমরা রেজাল্ট টানিয়ে দেবো। যিনি ভালো করবেন তিনিই চাকরি পাবেন। এখানে আমাদের কোনো হাত নেই। আমাদের কাছে সুপারিশ করা তাই অহেতুক। তারপরও প্রতিদিন প্রভাবশালী নেতারা আমাদের কাছে সুপারিশ করেই যাচ্ছেন।
 
 
প্রকল্পটি গ্রহণের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে, তৃণমূলের দরিদ্র জনগোষ্ঠীকে সংগঠিত করা, তাদের সঞ্চয়ে উৎসাহ দেওয়া, সদস্য সঞ্চয়ের বিপরীতে সমপরিমাণ অর্থবোনাস দেওয়া, সদস্যদের প্রশিক্ষণ দেওয়া। এছাড়া অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড পরিচালনার জন্য পুঁজি গঠনে সহায়তা করা ও আত্মকর্মসংস্থানের মাধ্যমে স্বাবলম্বী করাসহ বহুমুখী কার্যক্রম পরিচালনা।  

এসব উদ্দেশ্য বাস্তবায়নে ১৯৯৮ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ‘একটি বাড়ি একটি খামার প্রকল্প’ হাতে নেয়। বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার ২০০১ সালে প্রকল্পটি বন্ধ করে দেয়। ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করলে প্রকল্পটি ফের চালু করা হয়। বর্তমানে দেশের ৬৪ জেলায় ৪৮৫টি উপজেলায় ৪৫০৩টি ইউনিয়নের ৪০ হাজার ৫২৭টি ওয়ার্ডে প্রকল্পের কার্যক্রম চলমান।  

ওয়ার্ডগুলোর অধীন প্রতিটি গ্রামে ৬০টি গরিব পরিবারের সমন্বয়ে একটি গ্রাম-উন্নয়ন সমিতি গঠন করে প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হচ্ছে। ২৫ লাখ দরিদ্র পরিবার এ প্রকল্পের সঙ্গে সম্পৃক্ত। প্রকল্পের আওতায় সরকার ৩ হাজার ১৩২ কোটি টাকা ব্যয় করছে।
 
প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে ৮ হাজার ১০ কোটি টাকা এবং বাস্তবায়নের মেয়াদকাল ২০২০ সালের জুন পর্যন্ত।
 
বাংলাদেশ সময়: ০৫২৩ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৬, ২০১৮
এমআইএস/জেএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।