ঢাকা, মঙ্গলবার, ১০ বৈশাখ ১৪৩১, ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

হাতঘড়িতে লুকানো ডিভাইসে এটিএম কার্ডের তথ্যচুরি!

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৯৫৭ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৫, ২০১৮
হাতঘড়িতে লুকানো ডিভাইসে এটিএম কার্ডের তথ্যচুরি! জব্দ হওয়া বিভিন্ন সরঞ্জামসহ প্রতারক শরিফুল ইসলাম, ছবি: বাংলানিউজ

ঢাকা: রাশিয়ায় পড়াশোনা করতে গিয়ে শেখেন অভিনব প্রতারণার কৌশল। দেশে ফিরে চাকরি নেন একটি সুপারশপে। গ্রাহকরা কার্ড দিয়ে অর্থ পরিশোধের সময় নিজের হাতঘড়িতে সংযুক্ত বিশেষ ডিভাইসের মাধ্যমে কার্ডের সব তথ্য হাতিয়ে নিতে থাকেন এবং লিখে রাখতে থাকেন ওই কার্ডের পিন নম্বর। তারপর সেসব দিয়ে ডুপ্লিকেট কার্ড বানিয়ে হাতিয়ে নিতে থাকেন বিপুল পরিমাণ অর্থ। 

অভিনব পন্থায় পাঁচ ব্যাংকের কার্ড জালিয়াতি করার এ মূল হোতা শরিফুল ইসলাম (৩৩)। মঙ্গলবার (২৪ এপ্রিল) রাতে রাজধানীর মিরপুর থেকে তাকে আটক করে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)।

বুধবার (২৫ এপ্রিল) দুপুরে সিআইডি কার্যালয়ে তাকে নিয়ে সংবাদ সম্মেলন করা হয়। এতে কথা বলেন সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার (এসএসপি) মোল্যা নজরুল ইসলাম।  

তিনি বলেন, শরিফুলকে আটক করার সময় তার কাছ থেকে একটি ল্যাপটপ, বিভিন্ন ব্যাংকের ১ হাজার ৪শ’ ক্লোন কার্ড, একটি ম্যাগনেটিক স্ট্রিপ কার্ড রিডার ও রাইটার, তিনটি মেশিন, সচল ডিজিটাল হাতঘড়ি (গ্রাহকদের তথ্য চুরিতে ব্যবহৃত), দু’টি মিনি কার্ড রিডার ডিভাইস, পাসপোর্ট ১৪টি, মোবাইল ফোন সেট (৮টি), ডাচ্ বাংলা ব্যাংকের নেক্সাস ক্রেডিট কার্ড একটি, পরচুলা একটি  ও একটি কালো রংয়ের সানগ্লাস এবং তিনটি এনআইডি কার্ড জব্দ করা হয়।

আরো পড়ুন>> কার্ড জালিয়াতির হোতা শরিফুল ৪ দিনের রিমান্ডে

মোল্যা নজরুল বলেন, এ বছরের মার্চের দ্বিতীয় সপ্তাহে সংঘটিত পাঁচ (ব্রাক ব্যাংক, সিটি ব্যাংক, ইবিএল ব্যাংক, ইউসিবিএল ব্যাংক, ব্যাংক এশিয়া) ব্যাংকের কার্ড জালিয়াতি ঘটনার তদন্তে আমরা জানতে পারি যে, ব্যাংকের গ্রাহকরা যখন বিভিন্ন সুপারশপ ও ডিপার্টমেন্ট স্টোর থেকে পণ্য ক্রয়ের পর কার্ড পাঞ্চ করার সময় একটি চক্র সুকৌশলে গ্রাহকদের তথ্য চুরি করে ক্লোন কার্ড তৈরি করে এটিএম বুথ থেকে টাকা চুরি করে নিচ্ছে। সেই অভিযোগে শরিফুলকে মিরপুর থেকে আটক করা হয়।

তিনি বলেন, তদন্তে আমরা জানতে পারি, প্রতারক শরিফুল ইসলাম একটি ডিপার্টমেন্টাল শপের বনানী শাখায় কাজ করতেন। হাতঘড়িতে থাকা বিশেষ স্ক্যানিং ডিভাইজের মাধ্যমে তিনি গ্রাহকদের এটিএম কার্ডের তথ্য চুরি করতেন। এরপর বাসায় গিয়ে ল্যাপটপ এবং ডিভাইসের মাধ্যমে কাস্টমারের তথ্যাবলী ভার্জিন কার্ড বা খালি কার্ডে স্থাপন করে ক্লোন এটিএম কার্ড বানান। পরে যেকোনো এটিএম বুথ থেকে টাকা তুলে নিতেন। বুথে টাকা তোলার সময় সিসি ক্যামেরায় যাতে তাকে চেনা না যায় তার জন্য  শরিফুল পরচুলা এবং চশমা ব্যবহার করতেন।

‘ওই সুপারশপে চাকরি করলেও তার মূল পেশা ছিলো কার্ড জালিয়াতি। এ জালিয়াতির মাধ্যমে অর্জিত অবৈধ টাকায় তিনি বিলাসবহুল জীবন-যাপন করতেন। তিনি ব্যক্তিগত চলাচলের জন্য টয়োটা এলিয়ন মডেলের গাড়ি ব্যবহার করেন এবং তার ব্যাংক অ্যাকাউন্ট পর্যালোচনা করে এ পর্যন্ত কয়েক কোটি  টাকার সন্ধান পাওয়া গেছে। ’

শরিফুল ইসলাম মেহেরপুরের গাংনী জেলার হেমায়েতপুর গ্রামের ইয়াজ উদ্দিন বিশ্বাসের ছেলে। ২০০৩  সালে এইচএসসি পাস করে উচ্চতর ডিগ্রি অর্জনের জন্য রাশিয়ার পিপলস ফ্রেন্ডশিপ ইউনিভার্সিটিতে মাইনিং ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে তিন বছর মেয়াদী ডিগ্রি নিতে যান। ২০১০ সালে বাংলাদেশে ফিরে আসেন।

মোল্যা নজরুর ইসলাম বলেন, ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ার সময় শরিফুল তার রাশিয়ান রুমমেট ইভানোভিচের কাছ থেকে ক্রেডিট কার্ড প্রতারণার অভিনব কৌশল শেখেন। দেশে আসার পরপরই তিনি কার্ড জালিয়াতি শুরু করেন। ২০১৩ সালে এ সংক্রান্ত দু’টি মামলা হয় এবং মামলা দু’টিতে শরিফুল ১৮ মাসের কারাভোগ করেন। এরপর তিনি কিছুদিন স্টুডেন্ট কনসালট্যান্সি ফার্ম খোলেন, সেখানে তেমন সুবিধা করতে না পেরে রুমমেটের কাছ থেকে শেখা কৌশল আবারও কাজে লাগানোর সিদ্ধান্ত নেন।

বাংলাদেশ সময়: ১৫২৬ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৫, ২০১৮
পিএম/ওএইচ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।