ঢাকা, শুক্রবার, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৮ রমজান ১৪৪৫

জাতীয়

কোটা সংস্কারের পক্ষে-বিপক্ষে ‘সাইবার যুদ্ধ’

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৬৩৪ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৫, ২০১৮
কোটা সংস্কারের পক্ষে-বিপক্ষে ‘সাইবার যুদ্ধ’ কোটা সংস্কারের পক্ষে-বিপক্ষে ফেসবুক তৎপরতা

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়: সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে গড়ে ওঠা শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কোটা বাতিলের ঘোষণা দেন। এরপর থেকে শিক্ষার্থীদের কর্মসূচি স্থগিত থাকলেও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আন্দোলনের পক্ষে-বিপক্ষে চলছে ‘সাইবার যুদ্ধ’।

বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের ব্যানারে শিক্ষার্থীদের কোটা সংস্কার আন্দোলনের পিছনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম। ‘কোটা সংস্কার চাই (সকল চাকরির জন্য)’ নামে ফেসবুকে গ্রুপ খুলে সারাদেশে নিজেদের দাবির পক্ষে জনমত গড়ে তোলেন শিক্ষার্থীরা।

গ্রুপটির সদস্য সংখ্যা সাড়ে ১৭ লাখ ছাড়িয়ে গেছে।

অন্যদিকে কোটা সংস্কার আন্দোলন কর্মসূচির বিভিন্ন ঘটনার প্রেক্ষিতে ক্ষমতাসীন দলের ছাত্র সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগও ফেসবুক গ্রুপ খোলে ‘গুজবে কান দিবেন না’। এর পরেই সচেতন শিক্ষার্থীবৃন্দ নামেও আরেকটি গ্রুপ খোলা হয়। যেখানে ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক এসএম জাকির হোসাইনসহ ছাত্রলীগের অনেক শীর্ষ নেতাই এডমিন হিসেবে আছেন। ‘গুজবে কান দিবেন না’ গ্রুপ থেকে বেশি গুজব ছড়ানোর অভিযোগ উঠলে গ্রুপটির নাম পরিবর্তন করে ‘গুজব যাচাই’ রাখা হয়। এরপর থেকে তিনটি গ্রুপই থেকেই পরস্পর বিরোধী পোস্ট দেওয়া হয়। অনেকের ফেসবুক আইডিতে রিপোর্ট করে কিছুদিনের জন্য বন্ধও করে দেন উভয়পক্ষের সমর্থকরা।
কোটা সংস্কারের পক্ষে-বিপক্ষে ফেসবুক তৎপরতাগত ২২ এপ্রিল ‘কোটা সংস্কার চাই’ গ্রুপে উজ্জ্বল শেখ নামে একজন ছাত্রলীগের সাকিব হাসান সুইমের আইডির লিংক দিয়ে লিখেন, ‘নূর ও রাশেদ ভাইয়ের আইডির খাদক, যত পারেন রিপোর্ট করেন। ’ এই পোস্টের স্ক্রিনশট নিয়ে আল হাসান সরকার নামে একজন সচেতন শিক্ষার্থীবৃন্দ গ্রুপে পোস্ট দিয়ে ক্যাপশান দেন, ‘সাকিব হাসান ভাইয়ের আইডিতে রিপোর্ট করা হচ্ছে, ভাইকে সতর্ক করে দিন। ’

দীপ্তি সাহা নামে একজন সচেতন শিক্ষার্থীবৃন্দ গ্রুপে গত ২১ এপ্রিল লেখেন, গুজবে কান দিবেন না এই গ্রুপটি উড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেছে, ওদের ঢিল ওদেরকেই মারবো। মাত্র ১০০ রিপোর্ট হলে গ্রুপ এমনি উড়ে যাবে। কোটা সংস্কার চাই গ্রুপের লিংক দিয়ে রিপোর্ট করার নিয়ম উল্লেখ করে দেন তিনি। ওই পোস্টেই শাহাব উদ্দিন সুজন, মুজতাহিদুল ইসলাম মুর, খোরশেদ আল রুবেলসহ রিপোর্ট করার কথা জানিয়ে কমেন্ট করেন। অনেকে প্রমাণস্বরূপ রিপোর্ট করার স্ক্রিনশট দিয়ে দেন।

কোটা সংস্কার চাই গ্রুপে নাহিদ হাসান শাওন লিখেন, ‘সংবাদ সম্মেলেন শেষে যাওয়ার পথে চানখারপুলের সামনে থেকে এই মাত্র রাশেদ ভাই, ফারুক ভাইসহ কেন্দ্রীয় নেতাকে অজানা লোকে তুলে নিয়েছে। ’ এই পোস্টটি ঘণ্টা পর সচেতন শিক্ষার্থীবৃন্দ গ্রুপে শেয়ার দিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্জেন্ট জহরুল হক শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আসিফ তালুকদার লিখেন, আগের পোস্টটা ডিলিট করে দিয়েছে, এখন এখানে গুজব বলে কমেন্ট দেন।

অন্যদিকে কোটা সংস্কার চাই গ্রুপে দীন মোহাম্মদ লিখেন, হ্যাশ ট্যাগ দিয়ে হোক প্রতিরোধ, জনকণ্ঠ আমাদের নিয়ে ভুয়া নিউজ করেছে তার প্রতিবাদ করা জরুরি। তাদের পেজে গিয়ে রেটিং ১* করে দিন। রিপোর্ট করুন। যে যেভাবে পারেন প্রতিরোধ গড়ে তোলেন। সাথে জনকণ্ঠের ফেসবুক পেজ সংযুক্ত করে দেওয়া হয়েছে।

উভয় পক্ষই থেকেই গ্রুপের মাধ্যমে পাল্টাপাল্টি ফেসবুক আইডিতে রিপোর্ট করা হচ্ছে। এজন্য অনেকে নিজের আইডি বাঁচানোর জন্য কমেন্ট করার আহ্বান জানান। সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের যুগ্ম-আহ্বায়ক নুরুল হক রিপোর্টের কারণে আইডির নাম ইংরেজি থেকে বাংলায় পরিবর্তন করে সবাইকে কমেন্ট করতে বলেন।

জানতে চাইলে সচেতন শিক্ষার্থীবৃন্দ ও গুজব-যাচাই গ্রুপের এডমিন আসিফ তালুকদার বাংলানিউজকে বলেন, কোটা সংস্কার চাই গ্রুপ থেকে ফেইক আইডি দিয়ে উস্কানিমূলক পোস্ট দেওয়া হয়। সেখানে অনেক সদস্য থাকার কারণে ফেইক আইডি বেশি। ফেইক আইডি দিয়ে যেন গুজব না ছড়াতে পারে সেজন্য আমরা ফেইক আইডিতে রিপোর্ট করি। এই গ্রুপে উস্কানিমূলক পোস্ট দিয়ে উপাচার্যের বাসভবনে হামলা করে হয়েছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

কোটা সংস্কার চাই গ্রুপের অ্যাডমিন ও বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের যুগ্ম-আহ্বায়ক নুরুল হক নূর বাংলানিউজকে বলেন, আমাদের গ্রুপে সেরকম রিপোর্ট করা হয় না। আমরা একবার দেখেছিলাম একটি পোস্ট, সাথে সাথে ডিলিট করে দিয়েছি। অসংখ্য মেম্বার সাথে অ্যাডমিন ও মডারেটর অনেক হওয়ার কারণে না দেখে এপ্রুভ করার কারণে হয়তো হতে পারে। অন্যদিকে গুজব যাচাই ও সচেতন শিক্ষার্থী দুই গ্রুপে আমাদের গ্রুপ ও আইডিতে রিপোর্ট করা হচ্ছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তথ্য প্রযুক্তি ইনস্টিটিউটের সহকারী অধ্যাপক ড. বি এম মইনুল হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, বিষয়টা আসলে একটি জটিল প্রক্রিয়া। একটা বিষয় একজনের কাছে অপপ্রচার হতে পারে, আবার অন্যজনের কাছে সেটি নাও হতে পারে। বাংলাদেশে যেহেতু দলীয় দৃষ্টিকোণ থেকে বিবেচনা করা হয়। মিথ্যার ওপর রিপোর্ট করাটা এক ধরনের ক্রাইম। কারণ ফেসবু্ক আইডি ব্যক্তির এক ধরনের ওয়েব প্রোফাইল। যদি অপপ্রচার করে থাকে তাহলে তো ফেসবুকেই অপশন রেখেছে রিপোর্ট করতে। তবে বাংলাদেশে এ ধরনের ফেসবুক বিষয় নিয়ে ভাবা হয়, অন্যান্য দেশে এরকম প্রোপাগান্ডা চালানো হয় না।

বাংলাদেশ সময়: ১২৩২ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৫, ২০১৮
এসকেবি/এমজেএফ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।