ঢাকা, শুক্রবার, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

সিলেটে গরিবের চাল নিয়ে নয়-ছয়

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬০১ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৪, ২০১৮
সিলেটে গরিবের চাল নিয়ে নয়-ছয়

সিলেট: সিলেটের ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলার কয়েকটি ইউনিয়নে গরিবের চাল ও টাকা নয়-ছয়ের অভিযোগ উঠেছে।

ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, টোকেন বাণিজ্যের মাধ্যমে এ কর্মকাণ্ডে জড়িত স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান, ইউনিয়ন প্রশাসক ও তাদের লোকজন। ভুক্তভোগীদের প্রতিবাদে এ বিষয়ক দু’একটি ঘটনা দৃশ্যমান হলেও বিপুল পরিমাণ লুটপাট চলছে নীরবে।

স্থানীয়রা জানান, কার্ড দেখিয়ে চাল আনতে গেলে ৫০০ থেকে ১০০০ টাকা চাঁদা দাবি করেন ঘিলাছড়া ইউনিয়নের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান আশরাফ চৌধুরী বাবুলের অনুসারী উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের নেতা সুহেল আহমেদ ও দানিয়াল। টাকা না দিলে চাল সংকট দেখিয়ে তাদের ফিরিয়ে দেওয়া হয়। এর প্রতিবাদ করলে হামলা করেন চেয়ারম্যানের লোকজন।

এ হামলার ঘটনা রোববার (২২ এপ্রিল) সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে ওঠে নিন্দার ঝড়।

চেয়ারম্যান আশরাফ চৌধুরী বাবুলের বিরুদ্ধে ২৮ বস্তা চাল সরিয়ে নেওয়ার অভিযোগও রয়েছে। শনিবার (২১ এপ্রিল) ভোরে একটি ট্রলিযোগে চালের বস্তাগুলো চেয়ারম্যানের বাড়িতে নিয়ে যেতে দেখেছেন বলে দাবি করেন স্থানীয় অনেকে।

চেয়ারম্যান আশরাফ বাংলানিউজকে অবশ্য বলেন, মেয়াদের শেষ সময়ে একটি পক্ষ তার বিরুদ্ধে বদনাম রটাচ্ছেন। তাছাড়া তালিকায় নাম নেই এমন অনেকে জোরপূর্বক চাল নেওয়ার চেষ্টা করেন। এ কারণে চাল বিতরণ বন্ধ করে দিয়েছেন।

ঘিলাছড়া ইউনিয়ন ছাড়াও উপজেলার ৫নং উত্তর ফেঞ্চুগঞ্জ ইউনিয়নে ২০ এপ্রিল (শুক্রবার) পাচারকালে দুই পিকআপ ভ্যানে ধরা পড়ে ভিজিএফ’র ৬৬ বস্তা চাল। এগুলো বাজারে বিক্রি করার জন্য নেওয়া হচ্ছিল। ঘটনাটি খতিয়ে দেখতে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটিও করেছে উপজেলা প্রশাসন।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গত বছর বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক ও দুস্থদের মধ্যে প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ তহবিল থেকে ৫টি ইউনিয়নে ভিজিএফ কর্মসূচির আওতায় তিন মাস চাল বিতরণের কথা। এরমাধ্যমে কার্ডের বিপরীতে ৩০ কেজি চাল ও ৫০০ টাকা করে পাওয়ার কথা উপকারভোগীদের। কিন্তু চাল ওজনে কম দেওয়া, ৫০০ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ ছাড়াও বিভিন্ন ব্যক্তির কাছে এক হাজার টাকায় কার্ড বিক্রির অভিযোগ জানান অনেকে।

গরিবের চাল ছয়-নয় করার ঘটনায় সমালোচনার মুখে পড়া আশরাফ বাবুলকে এর আগেও অর্থ আত্মসাতের জন্য সাময়িক বরখাস্ত করে স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়। তবে উচ্চ আদালতের বরখাস্ত স্থগিতাদেশে নিজ পদে বহাল থাকেন তিনি। এদিকে সবশেষ ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে বিপুল ভোটের ব্যবধানে পরাজিত হন। কিন্তু দায়িত্ব হস্তান্তর না হওয়ায় এখনও চেয়ারম্যান পদে বহাল রয়েছেন আশরাফ।  

ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাসুদ রানা বাংলানিউজকে বলেন, উত্তর ফেঞ্চুগঞ্জ ইউনিয়নে ৬৬ বস্তা চাল পাচারের ঘটনায় তদন্ত কমিটি সাত দিনের মধ্যে প্রতিবেদন দেবে। এরপর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এছাড়া ঘিলাছড়া ইউনিয়নে চাল ও টাকা বিতরণ নিয়ে একটি ঝামেলা হয়। ট্যাগ অফিসার তা জানতে পেরে পুলিশ পাঠিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন।

প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা বাঁধন কান্তি সরকার বাংলানিউজকে বলেন, দুস্থরা বিশেষ বরাদ্দের টাকা কার্ডের বিপরীতে তিন মাস পাবেন। গত দুই মাস যাবত তা বিতরণ হচ্ছে। এ মাসেই শেষ হবে কর্মসূচি। সুষ্ঠুভাবে বণ্টনের জন্য প্রতি উপজেলায় একজন করে ট্যাগ অফিসার দেওয়া আছে। তাদের উপস্থিতিতে বিতরণ হওয়ার কথা।

উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার কার্যালয়ের তথ্যমতে, উপজেলার ৫টি ইউনিয়নে তিন হাজার ১৬২টি কার্ডের বিপরীতে ৯৪ দশমিক ৮৬০ মেট্রিকটন চাল ও নগদ ১৫ লাখ ৮১ হাজার টাকা বিশেষ বরাদ্দ দেওয়া হয়। এরমধ্যে ১নং ফেঞ্চুগঞ্জ ইউনিয়নে ৭৭৫ কার্ডের বিপরীতে ২৩ দশমিক ২৫০ মেট্রিকটন চাল ও ৩ লাখ ৮১ হাজার টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়।  

একইভাবে ২নং মাইজগাঁও ইউনিয়নে ৫২০টি কার্ডে ১৫ দশমিক ৬শ’ মেট্রিকটন চাল ও ২ লাখ ৬০ হাজার টাকা, ৩নং ঘিলাছড়া ইউনিয়নে ৮শ’ কার্ডে ২৪ মেট্রিকটন চাল ও ৪ লাখ টাকা, ৪নং উত্তর কুশিয়ারা ইউনিয়নে ৫১৭ কার্ডে ১৫
দশমিক ৫১০ মেট্রিক টন চাল ও ২ লাখ ৫৮ হাজার ৫০০ টাকা এবং ৫নং উত্তর ফেঞ্চুগঞ্জ ইউনিয়নে ৫৫০ টি কার্ডে ১৬ দশমিক ৫০০ মেট্রিক টন চাল ও ২ লাখ ৭৫ হাজার টাকা বিশেষ বরাদ্দ দেওয়া হয়।

বাংলাদেশ সময়: ২১৪৫ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৪, ২০১৮
এনইউ/এনএইচটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।