ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

বিশ্বে বাংলাদেশের পোশাক কারখানা এখন রোল মডেল

মফিজুল সাদিক, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৫২৫ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৪, ২০১৮
বিশ্বে বাংলাদেশের পোশাক কারখানা এখন রোল মডেল বিজিএমইএ সভাপতি মো. সিদ্দিকুর রহমান/ ছবি: বাংলানিউজ

ঢাকা: বছর ঘুরে ফের আসছে সেই ভয়াবহ ২৪ এপ্রিল। দিনটি দেশের পোশাক শিল্পের ইতিহাসে একটি শোকাবহ দিন। ২০১৩ সালের এইদিনে সাভারের রানা প্লাজা ধসে ১ হাজার ১৩৬ শ্রমিকের মৃত্যু হয়। আহত হন আরও অনেকে। 

দিবসটি এলেই সবার চোখে ভেসে ওঠে সেই ভয়াবহ দিনের দৃশ্যপট। মূলত এরপর থেকেই পোশাক শিল্প নিয়ে শুরু হয় নতুন করে চিন্তা ভাবনা।

 

বিশ্বজুড়েও নিরাপদ পোশাক কারখানা নিয়ে কথা ওঠে। এক পর্যায়ে যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের পোশাকের জিএসপি সুবিধা বাতিল করে।  যা এখনও বহাল রয়েছে। তবে এখন আর সেই পরিস্থিতিতে নেই বাংলাদেশের পোশাক শিল্প।  

নিরাপত্তা থেকে শুরু করে সব বিষয়েই প্রয়োজনীয় উন্নয়নমূলক পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। সরকারের সহযোগিতায় এসব কার্যক্রম বাস্তবায়ন করেছে তৈরি পোশাক মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ।  

শনিবার (২১ এপ্রিল) রাজধানীর কারওয়ান বাজারের বিজিএমইএ ভবনে বাংলানিউজকে এসব কথা জানালেন সংগঠনটির সভাপতি মো. সিদ্দিকুর রহমান।

বাংলানিউজ: রানা প্লাজা দুর্ঘটনার পাঁচ বছর পূর্তিতে বিজিএমইএ-এর কী ধরনের কর্মসূচি থাকে?
 
সিদ্দিকুর রহমান: আমরা কখনই সাভারে যাই না। প্রতিবছর এদিন সকালে আমরা জুরাইন কবরস্থানে যাই। সেখানে নিহতদের আত্মার মাগফেরাত কামনা করি। এবারও সে কর্মসূচি পালন করবো। পোশাক শিল্পের ইতিহাসে সবচেয়ে মর্মান্তিক এ দুর্ঘটনায় অনেক মূল্যবান প্রাণ ঝরে যায়। আমি বেদনার্ত হৃদয়ে তাদের রুহের মাগফেরাত কামনা করছি। আহতদের প্রতি সহমর্মিতা প্রকাশ করছি। প্রিয়জন হারানো প্রতিটা পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানাচ্ছি।  
 
বাংলানিউজ: রানা প্লাজা দুর্ঘটনার পর বাংলাদেশের পোশাক কারখানার কর্ম-পরিবেশ নিয়ে দেশে ও বিদেশে নানা প্রশ্ন ওঠেছে। বর্তমানে দেশের পোশাক কারখানাগুলো কতটুকু নিরাপদ কর্ম পরিবেশ গড়ে ওঠেছে?
  
সিদ্দিকুর রহমান: রানা প্লাজা দুর্ঘটনার পরপরই শোককে শক্তিতে পরিণত করে শ্রমিকদের জন্য ঝুঁকিমুক্ত কর্ম পরিবেশ নিশ্চিত করেছি। বিশ্বে বাংলাদেশের পোশাক কারখানা এখন সব থেকে নিরাপদ। আমরা এখন বিশ্বে নিরাপদ কর্মপরিবেশ সৃষ্টিতে রোল মডেল। নিরাপদ কর্মপরিবেশ রক্ষায় নানা উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। বাংলাদেশের পোশাক কারখানায় কাজের পরিবেশ উন্নয়নে ইউরোপ ও আমেরিকার ক্রেতাদের দুই জোট অ্যাকর্ড ও অ্যালায়েন্সের কার্যক্রম চলছে। আমরা পরিদর্শকদের ট্রেনিং দিচ্ছি ও রেমিডিয়েশেন কো-অর্ডিনেশন (আরসিসি) সেল করেছি।  পোশাক শিল্পের জন্য বাংলাদেশ অ্যাকশন প্ল্যান ২০১৩ বাস্তবায়িত হচ্ছে।
 
বাংলানিউজ: বর্তমানে পোশাক কারখানাগুলোর অবস্থা কী, বিস্তারিত বলবেন?
 
সিদ্দিকুর রহমান: সব মিলিয়ে বর্তমানে দেশে প্রায় তিন হাজার পোশাক কারখানা চলছে। গত পাঁচ বছরে বাংলাদেশের পোশাক শিল্প অনেক পরিণত। আমরা বিজিএমইএ থেকে অনেক যাচাই-বাছাই করে নতুন কারখানাগুলোকে বিজিএমইএ-এর সদস্যপদ দিচ্ছি। সেই সঙ্গে সাব-কন্ট্রাকটিং কারখানাগুলোর জন্য নীতিমালা তৈরি করে দিয়েছি।  বাংলাদেশ এখন সবুজ শিল্পায়নে অগ্রণী ভূমিকা পালন করছে। লিড সার্টিফাইড ১০টি কারখানার মধ্যে ৭টি কারখানার অবস্থানই বাংলাদেশে। ইউনাইটেড স্টেটস গ্রিন বিল্ডিং কাউন্সিল থেকে আমাদের ৬৭টি কারখানা সনদ পেয়েছে। এগুলোর মধ্যে ১৩টি প্লাটিনাম কারখানা। আরও ২৮০টি কারখানা সনদ পাওয়ার পথে রয়েছে।  

বাংলানিউজ: রানা প্লাজা ধসে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারকে বিজিএমইএ কিভাবে সহায়তা করছে?
 
সিদ্দিকুর রহমান: দুর্ঘটনায় যারা নিহত হয়েছেন ও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন, সবাইকে সহায়তা দেওয়া হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসন করা হচ্ছে। রানা প্লাজা দুর্ঘটনায় আহতদের মধ্যে যারা এখনও সুস্থ স্বাভাবিক জীবনে ফিরে যেতে পারেননি, বিজিএমইএ নিয়মিতভাবে তাদের চিকিৎসার বিষয়টি ফলো-আপ করে যাচ্ছে। দুর্ঘটনায় এতিম হওয়া ৬৭ শিশুর দায়িত্ব নিয়েছে বিজিএমইএ। তাদের বিভিন্ন হোমসে রাখা হয়েছে। শ্রমিকদের অনাথ ১০ ছেলেকে ওল্ড রাজশাহী ক্যাডেট অ্যাসোসিয়েশনের (ওআরসিসিএ) চট্টগ্রাম শাখা এবং ৩৭জনকে গাইবান্ধার ওআরসিসিএ হোমসে রাখা আছে। আর ২০ জন মেয়ে রয়েছেন সাভারের আঞ্জুমান এতিমখানায়। প্রতি মাসে এসব শিশুর সকল ব্যয় বহন করছে বিজিএমইএ।
  
বাংলানিউজ: রানা প্লাজা ঘটনায় নতুন করে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের সদস্যরা সহায়তা নিতে আসে কি? 
 
সিদ্দিকুর রহমান:  নতুন করে বিজিএমইএ-তে সহায়তা নিতে আসার কোনো প্রশ্ন উঠে না। কারণ রানা প্লাজা দুর্ঘটনার পাঁচবছর হতে যাচ্ছে। সহায়তা নিতে কেউ বাকি থাকার কথা নয়।
 
বাংলানিউজ: রানা প্লাজার ধসের পর বাংলাদেশের পোশাক খাত কতটা ঘুরে দাঁড়াতে পেরেছে? 
 
সিদ্দিকুর রহমান: আমি মনে করি পোশাক খাত শতভাগ ঘুরে দাঁড়িয়েছে। এখন নতুন নতুন ক্রেতা আসছে বাংলাদেশে। চলতি অর্থবছরে এ খাত থেকে ৩০ বিলিয়ন ডলার রফতানি আয় হবে বলে আশা করছি। রানা প্লাজার ক্ষত কাটিয়ে  পোশাক খাত পুরোপুরি ঘুরে দাঁড়িয়েছে।
 
বাংলানিউজ: বাংলাদেশের কারখানায় শ্রমিক নিরাপত্তার বিষয়টি ক্রেতারা কিভাবে নিচ্ছে?
 
সিদ্দিকুর রহমান: শ্রমিক নিরাপত্তার বিষয়টি জিরো টলারেন্সে নামিয়ে এনেছি। এ জন্য সব ধরনের পদক্ষেপ নিয়েছে  বিজিএমইএ। আমাদের পক্ষ থেকে সব কিছুই করেছি। আরও একটা রানা প্লাজা দেশে যাতে না ঘটে সে পদক্ষেপ চলমান রয়েছে।
 
বাংলানিউজ: পোশাক শিল্পে দক্ষ বাংলাদেশিদের কর্মসংস্থান বাড়ানোর কোন ধরনের উদ্যোগ নিয়েছেন? 
 
সিদ্দিকুর রহমান:  প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে পোশাক শিল্পে এক কোটি মানুষ জড়িত। চট্টগ্রামের মীরসরাই অর্থনৈতিক অঞ্চল হচ্ছে। এ খাতে ৫০০ একর জমিতে পোশাক শিল্প গড়ে উঠবে। ৫০ কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছে বিজিএমইএ। আশা করছি আরও এক কোটি মানুষের কর্মসংস্থান হবে এখানে। আমাদের প্রত্যাশা দুই কোটি মানুষের কর্মসংস্থান হবে পোশাকখাতে। তার আগে সবাইকে সহযোগিতা করতে হবে।
  
বাংলানিউজ: বাংলানিউজের পক্ষ থেকে আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।  
 
সিদ্দিকুর রহমান: বাংলানিউজ পরিবারকেও ধন্যবাদ।

** রানা প্লাজা: ফাটলের কথা জানতেন লাইন চিফরা​
** অভাবের সংসারে নকল পা কেনা বিলাসিতা!​
** রানা প্লাজা ধসে ২০ এতিম কন্যার মা ইয়াসমিন
 
বাংলাদেশ সময়: ১১১৫ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৪, ২০১৮
এমআইএস/এমএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
welcome-ad