ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৭ রমজান ১৪৪৫

জাতীয়

অভাবের সংসারে নকল পা কেনা বিলাসিতা!

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০১৪৫ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৪, ২০১৮
অভাবের সংসারে নকল পা কেনা বিলাসিতা! ছেলেকে সঙ্গে নিয়ে বসে আছেন সুমি।

সাভার (ঢাকা): সকাল প্রায় ৮টা, ২৪ এপ্রিল, ২০১৩। হঠাৎ বিটক শব্দে ধসে পড়ে সাভার বাজার বাসস্ট্যান্ড সংলগ্ন বহুতল ভবন ‘রানা প্লাজা’।

ভবনটিতে ছিল বেশ কয়েকটি পোশাক কারখানা। আর সেই কারখানাগুলোতে কাজ করছিলেন কয়েক হাজার শ্রমিক।

ভবন ধসের পরপরই ইট-পাথরের স্তূপে চাপা পড়েন অন্তত তিন হাজার শ্রমিক। এদের মধ্যে মারা যান এক হাজার ১৩৬ জন। আহত দুই হাজারেরও বেশি শ্রমিক। সুমির নকল পা-টি নষ্ট হয়ে গেছে।  নতুন করে কেনার সামর্থ্য নেই। দুর্ঘটনার পরই সরকার ও বিভিন্ন সংস্থা থেকে নিহত শ্রমিকদের পরিবার ও আহত শ্রমিকদের আর্থিক সহায়তা দেয়া হয়। পাশাপাশি তাদের পুনর্বাসনের ঘোষণাও দেয়া হয়। কিন্তু ভবন ধসের পাঁচ বছর পেরিয়ে গেলেও এখনও করা হয়নি পুনর্বাসনের ব্যবস্থা।

রানা প্লাজা: ফাটলের কথা জানতেন লাইন চিফরা

ওই ভবন ধসে আহতদের একজন আরতি বালা দাশ। তিনি সেদিনে কথা তুলে ধরে বাংলানিউজকে বলেন, চাকরি হারানো বা বেতন না পাওয়ার ভয়ে মা আর আমি সেদিন কাজে যোগ দিয়েছিলাম। এরপরই ধসে পড়ে ভবনটি। লাশ আর ইট-পাথরের মধ্যে তিনদিন আটকে থাকার পর উদ্ধার করা হয় আমাকে। আমি আহত হলেও মারা যান আমার মা কীর্তন বালা দাশ। এ ঘটনায় অনুদানের দুই লক্ষ টাকা ছাড়া কিছুই মেলেনি।

নিজে উদ্ধার হলেও কেটে ফেলতে হয়েছে আরতির ডান পা। পায়ে নুপুর পড়াটা তার শখ। কিন্তু তার এ শখ পুরণ করতে এখন তাকে নকল পায়ে নুপুর পরতে হয়।

পরে তিনি ভালোবেসে বিয়ে করেছেন মামুন মিয়া নামে এক যুবককে। নিজ ধর্ম ছেড়ে হয়েছেন মুসলমান। তার নাম এখন সুমি আক্তার। তাদের ঘর আলো করে আছে দুই বছরের ছেলে সিয়াম ইসলাম।

স্বামী মামুন সাভারের পাশ দিয়ে বয়ে চলা বংশী নদীতে নৌকা চালিয়ে যা আয় করেন তা দিয়ে কোনো রকমে চলে তাদের সংসার। আরতি ওরফে সুমির নকল পা-টি নষ্ট হয়ে গেছে। নতুন একটি নকল পা কিনতে ৪০ হাজার টাকার প্রয়োজন। অভাবের সংসারে এতো টাকা দিয়ে নকল পা কেনাটা বিলাসিতা।


ছেলের দেখাশোনা করা ও হালকা কাজ করা ছাড়া কিছুই করার নেই সুমির। অভাবের সংসারে ঘরে বসে থাকা কতটা কষ্টের সেটা বলতে গিয়ে আবেগ আপ্লুত হয়ে পরেন তিনি। এখন কোনো কাজ করতে গেলে মাথায় চলে আসে সেদিনের ভয়াবহ স্মৃতি।  

অভিযোগের সুরে তিনি বলেন, এখনো আমি সম্পূর্ণ সুস্থ হইনি। চিকিৎসা চলছে। সরকার থেকে যে ধরনের সহায়তা করার কথা ছিল, তা আজও করা হয়নি। নিজের পকেটের টাকা দিয়ে করতে হচ্ছে যাবতীয় চিকিৎসা। বেঁচে থাকার জন্য অন্তত চিকিৎসা ব্যয়টুকু চাই সরকারের কাছে।

শুধু তিনি নন। এমন অসংখ্য শ্রমিক পঙ্গু হয়ে হারিয়েছেন কর্মক্ষমতা। আবার অনেকে কাজ করতে পারলেও কাজ পাচ্ছেন না। ফলে অর্থকষ্টে মানবেতর জীবনযাপন করতে হচ্ছে তাদের।

বাংলাদেশ গার্মেন্টস অ্যান্ড শিল্প শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি রফিকুল ইসলাম সুজন বলেন, শ্রমিকদের সামান্য অনুদান দেয়া হয়েছে। এখনো তাদের কোনো ক্ষতিপূরণ দেয়া হয়নি। নিশ্চিত করা হয়নি এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত কারো প্রাপ্য শাস্তি।

নিহতদের স্বজন ও আহতরা কা অবিলম্বে পুনর্বাসনে যথাযথ পদক্ষেপ নিতে সরকারের প্রতি জোর দাবি জানান তিনি।

অসহায় মানুষগুলোর কথা বিবেচনা করে আর কালক্ষেপণ না করে দ্রুত পুনর্বাসনের দাবি সব পোশাক শ্রমিকের।

বাংলাদেশ সময়: ২১৪৪ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৪, ২০১৮
এসআই

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।