ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৭ রমজান ১৪৪৫

জাতীয়

জালিয়াতি করে হাইকোর্ট থেকে জামিন: ২ আসামির নামে পরোয়ানা

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪২০ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৩, ২০১৮
জালিয়াতি করে হাইকোর্ট থেকে জামিন: ২ আসামির নামে পরোয়ানা

নাটোর: নাটোরের সিংড়া উপজেলার চাঞ্চল্যকর রূপালি হত্যা মামলায় জাল কাগজপত্র তৈরি করে হাইকোর্ট থেকে জামিন নেওয়ার অভিযোগে হাইকোর্টের নির্দেশে দুই আসামির বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছেন আদালত। 

সোমবার (২৩ এপ্রিল) দুপুর ২টার দিকে জেলা ও দায়রা জজ মো. রেজাউল করিম এ পরোয়ানা জারি করেন।  

আদালত সূত্রে জানা যায়, ২০১৬ সালের ২২ ডিসেম্বর বগুড়া থেকে নিখোঁজ হন লালমনিরহাট সদর উপজেলার মোস্তাফি গ্রামের আব্দুর রাজ্জাকের মেয়ে রেজেনা পারভিন ওরফে রূপালি।

তিনদিন পর সিংড়া উপজেলার দোপুকুরিয়া গ্রামের একটি ফসলী জমিতে তার আগুনে ঝলসানো মরদেহ পাওয়া যায়। ওই ঘটনায় সিংড়া থানায় তার স্বামী মো. শাহমিম (২৭) ও শাহমিমের সহযোগী মো. রমিজান আলমের (২৩) নাম উল্লেখ করে মামলা করা হয়।

শাহমিম ও রমিজুলকে গ্রেপ্তারের পর তারা দোষ স্বীকার করে আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেন। তদন্ত শেষে থানার তৎকালীন উপপরিদর্শক (এসআই) দেবব্রত দাস ২০১৭ সালের ৩১ মার্চ দুই আসামির বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। গ্রেপ্তারের পর থেকে আসামিরা জেল হাজতে ছিলেন।  

পরে শাহমিম ও রমিজানের পক্ষে তার আইনজীবী মনছুর রহমান সরকার গত বছরের ১৪ নভেম্বর হাইকোর্টের বিচারপতি একেএম আসাদুজ্জামান ও বিচারপতি রাজিক আল জলিলের দ্বৈত বেঞ্চে জামিনের আবেদন করেন। ওই সময় তিনি হাইকোর্টে শাহমিম ও রমিজানের সঙ্গে মো. শাহ আলম (২৬) নামে আরো একজনকে আসামি উল্লেখ করে ১৬৪ ধারার স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দির জাবেদা নকল উপস্থাপন করেন।  

এছাড়াও জেলা জজ আদালতের আদেশ ও অন্যান্য কাগজপত্র ভিন্নভাবে লিখে হাইকোর্টে দাখিল করেন। মামলার প্রধান আসামি হিসেবে দেখানো হয় শাহ আলমকে। যদিও এ মামলায় মো. শাহ আলম নামে কোনো আসামিই নেই। মামলার মোট আসামি সংখ্যা দুই।  

উচ্চ আদালত দাখিলি কাগজপত্র আপাত দৃষ্টিতে সঠিক বিবেচনা করে গত বছর ১৪ নভেম্বর শাহমিম ও রমিজানকে ছয় মাসের জন্য জামিন দেন। আসামিরা জামিনে মুক্ত হয়ে এলে মামলার বাদী মো. আব্দুর রাজ্জাক বিস্মিত হন। তিনি এরপর হাইকোর্টে আসামিদের দাখিল করা কাগজপত্র উঠিয়ে জালিয়াতির বিষয়টি জানতে পারেন। বিষয়টি তিনি হাইকোর্টের ওই বেঞ্চের ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মো. বাসির উল্লাহকে জানান।  

তিনি ঘটনাটি আদালতের নজরে আনলে আদালত আসামিদের আইনজীবীকে এ ব্যাপারে কারণ দর্শাতে বলেন এবং নাটোরের জেলা ও দায়রা জজ আদালতকে আসামিদের অবিলম্বে গ্রেপ্তারসহ মামলাটি দ্রুত নিষ্পত্তি করার নির্দেশনা দেন। এসময় আসামিদের আইনজীবী নিঃশর্ত ক্ষমা প্রার্থনা করে অব্যাহতি চান এবং এ ঘটনার জন্য আসামিদের এক তদবিরকারককে দায়ী করেন।  

এদিকে সোমবার (২৩ এপ্রিল) হাজিরার তারিখ থাকলেও জামিন পাওয়া আসামিরা আদালতে উপস্থিত হননি। আইনজীবী লোকমান হোসেন বাদল তাদের পক্ষে সময় চেয়ে আদালতে দরখাস্ত দেননি। আদালত সার্বিক বিষয় বিবেচনা করে আসামিদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির নির্দেশ দেন। আগামী ৩০ এপ্রিল মামলার শুনানির পরবর্তী দিন ধার্য করেন।  

আদালতের এপিপি মো. মাসুদ হাসান বাংলানিউজকে জানান, আসামিরা প্রতারণার মাধ্যমে হাইকোর্ট থেকে জামিন নিয়েছেন। ঘটনাটি হাইকোর্টে প্রমাণিত হওয়ার পর তাদের জামিন বাতিল করা হয় এবং নাটোরের বিচারিক আদালতকে আসামিদের গ্রেপ্তার করতে বলা হয়। সে মোতাবেক বিচারক এ আদেশ দেন। ৩০ এপ্রিল মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তার সাক্ষ্যগ্রহণের দিন ধার্য করা হয়েছে। পরে শুনানি শেষে রায় ঘোষণা করা হবে।

বাংলাদেশ সময়: ২০১৬ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৩, ২০১৮
এসআই

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।