অগোছালো সেই ভূমি অফিস ভবনের চেহারা পাল্টে গেছে। এখন পরিপাটি সাজানো-গোছানো।
এখানেই শেষ নয়। দালাল তাড়িয়ে আর ঘুষ-দুর্নীতিকে বিদায় দিয়ে সেবার মাধ্যমে গত আটমাসে নজির সৃষ্টি করেছেন সহকারী কমিশনার (ভূমি) হোসাইন মুহাম্মদ আল-মুজাহিদ।
বিভিন্ন সময় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) অতিরিক্ত দায়িত্ব পালনকালেও কাজের এই মানুষটি দেখিয়েছেন তার রুচি-দক্ষতা। উপজেলা পরিষদ চত্বর, অফিসার কোয়ার্টার এলাকার জরাজীর্ণ ময়লার ভাঙাড় পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করে বিভিন্ন প্রজাতির অর্ধশত জাতের ফুলের চারা রোপণের মাধ্যমে গড়ে তুলেছেন বাগান। ছেলে-মেয়েদের খেলার স্থানেও বসানো হয়েছে নানা সরঞ্জাম। এতে মনোরম পরিবেশ ফিরে পেয়েছে বিশাল আয়তনের উপজেলা পরিষদ চত্বর।
হোসাইন মুহাম্মদ আল-মুজাহিদ ২০১৭ সালের ২৭ আগস্ট যোগ দেওয়ার পর থেকেই বদলাতে থাকে ভূমি ব্যবস্থাপনার দৃশ্যপট। কাজ শুরুর দিনেই অফিসকে দালালমুক্ত ঘোষণা করেন তিনি। সেবাপ্রত্যাশীরা যেন দালালের কারণে হয়রানির শিকার না হন এজন্য নিজের কক্ষে জনসাধরণের যাতায়াত নির্বিঘ্ন করেন। যে কোনো প্রয়োজনে সরাসরি তার কাছে আসতে শুরু করেন সেবাপ্রত্যাশীরা।
এমনকী উপজেলার প্রত্যেকটি ইউনিয়ন ভূমি অফিসে দায়িত্বরতদের ঘুষ-দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি মেনে চলতে কড়া হুঁশিয়ারি দেন। এতে অল্প দিনেই তিনি সাধারণ মানুষের দৃষ্টিতে ন্যায়পরায়ণ-নিষ্ঠাবান কর্মকর্তা হিসেবে পরিচিতি অর্জন করেছেন।
মণিরামপুর উপজেলা ভূমি অফিসের সামনে টাঙানো সিটিজেন চার্টারে বড় অক্ষরে লেখা, অফিসটিতে কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান নামজারি-জমা খারিজ-জমা একত্রীকরণ তথা রেকর্ড সংশোধন করা হয়। এ সেবার জন্য সরকার নির্ধারিত ফরমে নিজের ছবি লাগিয়ে আবেদন করতে হয়। এছাড়া কৃষি-অকৃষি খাস জমি বন্দোবস্ত, ভূমি উন্নয়ন কর আদায়, অর্পিত সম্পত্তি ব্যবস্থাপনা, দেওয়ানি মোকদ্দামা তথ্যবিবরণী প্রস্তুত ও পাঠানো, রেন্ট সার্টিফিকেট মোকদ্দমা পরিচালনা, গুচ্ছগ্রাম ও আদর্শ গ্রাম প্রকল্প বাস্তবায়ন, আবাসন ও আশ্রয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন, মিস মোকদ্দমা পরিচালনা, জরিপ কাজের তদারকি, জমির শ্রেণী পরিবর্তনসহ বিভিন্ন কাজ হয় এ অফিসে।
এসব সেবা সহজে সাধারণ মানুষকে দিতে ইতোমধ্যে দেওয়ালে নামজারি বোর্ড, মিসকেস বোর্ড টাঙানো হয়েছে।
ভূমি অফিসে জমির নামপত্তনের কাজে অফিসে আসা মশ্মিমনগর গ্রামের জামির মোড়ল (৫৬) বাংলানিউজকে বলেন, আগে টাকা ছাড়া কাজ হতো না, টাকা না দিলি কতো ঘুরা-ঘুরিছি। কিন্তু এসিল্যান্ড স্যারের কাছে গেলি বললো, কারো টাকা দিও না, সরকারি ফি দিয়ে ফরম জমা দিয়ে যাও, হয়ে যাবে। ঠিক তাই হয়ে গেছে।
তিনি আরও বলেন, দেশের সব অফিসে এমন সেবা পেলি মানুষ বড় উপকার পাবে।
একই দিন অফিসে আসা ষাটোর্ধ্ব আসমা বিবি বাংলানিউজকে বলেন, আমার বাড়ির রাস্তা বন্ধ করে দেচ্ছে এক প্রতিবেশী, তাই স্যারের কাছে এসেছি। স্যার বলেছেন, আপনি বাড়ি যান। নিজে না হলেও অন্য অফিসার পাঠায়ে দেখবেন। তাই শুনে বাড়ি যাচ্ছি। আমি স্যারের জন্যে দোয়া করি।
এ বিষয়ে মণিরামপুর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) হোসাইন মুহাম্মদ আল-মুজাহিদ বাংলানিউজকে বলেন, অর্থ বরাদ্দে নানা ধরনের সীমাবদ্ধতা থাকা শর্তেও স্থানীয় এমপি স্বপন কুমার ভট্টাচার্য এবং ইউএনও মুহাম্মদ ওবায়দুর রহমান স্যারের সহযোগিতায় সবকিছু সম্ভব হয়েছে।
দুর্নীতি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, দুর্নীতির ঊর্ধ্বে থেকে আমি সর্বোচ্চ সেবা দেওয়ার চেষ্টা করে যাচ্ছি, বাকিটা সেবাপ্রাপ্তরা বলতে পারবেন।
বিনয়ী এই কর্মকর্তা তার আগের কর্মস্থল বান্দরবানেও সততা ও কর্মদক্ষতার নানান নজির রেখে এসেছেন। নীলাচল, চিম্বুক, জীবননগর, প্রান্তিক লেক, বনপ্রপাতসহ বিভিন্ন পর্যটন স্পট ঢেলে সাজাতে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন তিনি। বছর তিনেকে অনেক পরিবর্তন করে ফেলেছেন এসব স্পট। এসব জায়গায় অসংখ্য গাছও লাগিয়েছেন প্রকৃতিপ্রেমী মুজাহিদ। দাপ্তরিক কাজের বাইরেও নিজের আন্তরিক তাগিদ থেকে কেউ চাইলে যে অনেক কিছু করতে পারেন তার উদাহরণ একজন হোসাইন মুহাম্মদ আল-মুজাহিদ।
বাংলাদেশ সময়: ১৫৪০ ঘণ্টা, এপ্রিল ২১, ২০১৮
এএ