ঢাকা, মঙ্গলবার, ৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

ঢামেকে ‘মৃত’ ঘোষিত নবজাতক নড়ে উঠলো কবরস্থানে

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৮৫৩ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৩, ২০১৮
ঢামেকে ‘মৃত’ ঘোষিত নবজাতক নড়ে উঠলো কবরস্থানে শারমিন আক্তার জন্ম দেন শিশুটিকে। ছবি: বাংলানিউজ

ঢাকা: ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে সদ্যজাত এক শিশুকে চিকিৎসকরা ‘মৃত’ ঘোষণা করলেও কবরস্থানে নিয়ে গোসল দেওয়ার সময় নড়েচড়ে উঠেছে সে। তাৎক্ষণিক শিশুটিকে শ্যামলীর ঢাকা শিশু হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। সেখানে চিকিৎসাসেবা দেওয়া হচ্ছে তাকে।

সোমবার (২৩ এপ্রিল) সকালে ঢামেকে শিশুটির জন্ম দেন শারমিন আক্তার (২০) নামে এক গৃহবধূ। তার স্বামীর নাম মিনহাজ উদ্দিন।

তাদের বাড়ি ঢাকার ধামরাইয়ের শ্রীরামপুরে। গত শনিবার (২১ এপ্রিল) শারমিনকে ঢামেকের ১০৫ নং ওয়ার্ডের ৪ নং বেডে ভর্তি করা হয়।

শারমিনের ভাই শরিফুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, সকাল ৮টায় তার বোনের বাচ্চা জন্মগ্রহণ করে। কিন্তু ঢামেকের চিকিৎসকরা জানান, শিশুটি মৃত। তখন তার মরদেহ দাফনের জন্য আজিমপুর গোরস্থানে নিয়ে যাওয়া হয়।

আজিমপুর গোরস্থানের মহরার হাফিজুল ইসলাম বাংলানিউজকে জানান, শিশুটিকে দাফনের আগে গোসলের জন্য নেন ড্রেসার জেসমিন।  গায়ে পানি ঢালা হলে সে নড়েচড়ে ওঠে এবং শ্বাস নিতে থাকে। তখন স্বজনরা নবজাতকটিকে আজিমপুর ম্যাটার্নিটি হাসপাতালে নিয়ে যায়।

সেখানকার চিকিৎসকদের পরামর্শে শিশুটিকে নিয়ে যাওয়া হয় শিশু হাসপাতালে। এ হাসপাতালের সিনিয়র জনসংযোগ কর্মকর্তা আব্দুল হাকিম সাংবাদিকদের বলেন, আমাদের হাসপাতালের ডাক্তাররা শিশুটিকে দেখেছেন। তাকে বেডে নেওয়া হয়েছে।

পরে শিশু হাসপাতালের পরিচালক অধ্যাপক ডা. আব্দুল আজিজ সংবাদ সম্মেলন করে বলেন, বাচ্চাটিকে কার্ডিয়াক আইসিউতে (হৃদরোগের নিবিড় পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রে) লাইফ সাপোর্টে রাখা হয়েছে। যতক্ষণ পর্যন্ত বাচ্চাটি নিজে শ্বাস-প্রশ্বাস নিতে না পারবে, ততক্ষণ পর্যন্ত তাকে এভাবে রাখা হবে। শিশুটির আগের থেকে এখন ভালো আছে, তবে এখনও আশঙ্কামুক্ত নয়।

তিনি জানান, বাচ্চাটি সাত মাসে প্রিম্যাচিউর অবস্থায় ভূমিষ্ঠ হয়েছে। প্রিম্যাচিউর বাচ্চাদের অনেক সময় শ্বাস-প্রশ্বাস বোঝা যায় না। তবে ঢামেকের চিকিৎসকরা এ বিষয়ে বলতে পারবেন। বাচ্চাটিকে প্রথমে যখন আমাদের এখানে আনা হয়, তখন তার শ্বাস-প্রশ্বাসের পরিমাণ ছিল ১০-১২, কিন্তু এখন ৭০-৮০ তে রয়েছে।

সংবাদ সম্মেলনে হাসপাতালের উপ-পরিচালক ডা.মো. আবু তায়েব বলেন, আমরা জেনেছি- গতকাল রাতে ঢামেকের চিকিৎসকরা শিশুটির মা বাবাকে বলেছেন যে, পেটের ভেতরে শিশুটির কোনো নড়াচড়া নেই, সে মারা গেছে। সকালে ওষুধ প্রয়োগ করে বাচ্চাটিকে ভূমিষ্ঠ করানো হয়। পরে চিকিৎসকরা বাচ্চাটির কোনো রেসপন্স না পাওয়ায় তাকে মৃত ঘোষণা করেন। সাধারণত কোনো বাচ্চা ভূমিষ্ঠ হওয়ার তিন মিনিটের মধ্যে রেসপন্স করতে হয়। আর যদি ১৫ মিনিটের মধ্যেও রেসপন্স না করে, তাহলে সে শিশু সার্ভাইব (বাঁচতে পারে না) করে না।

সংবাদ সম্মেলনে শিশুটির মামা শরিফুল বলেন, প্রথম যখন আমার বোনকে ভর্তি করি তখন ডাক্তারা তাকে দেখে বলেন, ‘গাছ নেবেন না ফল নেবেন’। তখন বোনকে বাঁচাতে বলি আমরা। বাচ্চাটি ভূমিষ্ঠ হওয়ার পর ডাক্তারা বলেন যে সে পেটেই মারা গিয়েছে। পরে তাকে একটি বক্সের ভেতরে রাখা হয়। এরপর আজিমপুরে নিয়ে যাওয়া হয়।

তিনি বলেন, মেয়ে শিশুটি কবর দেওয়ার সময় একটা নাম দিতে হয়। তখন আমি নাম দিই ‘মিম’।

বাংলাদেশ সময়: ১৪৪৫ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৩, ২০১৮
এজেডএস/এমএসি/এইচএ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।