ঢাকা, বুধবার, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের ফেনীতে নিত্য যানজটে দুর্ভোগ

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪৩২ ঘণ্টা, এপ্রিল ২২, ২০১৮
ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের ফেনীতে নিত্য যানজটে দুর্ভোগ যানজটের চিত্র-ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

ফেনী: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) সমাজ বিজ্ঞানের শিক্ষার্থী নাজিফা তাসনিম খানম তিশা ঢাকা থেকে ৯ ঘণ্টায় ফেনী পৌঁছানোর কষ্টের কথা লিখেছেন তার ফেসবুক ওয়ালে।

তিনি লিখেছেন, অতঃপর ঘরে ফেরার কাহিনী। বুধবার (১৯ এপ্রিল) ঢাকা থেকে ফেনীর উদ্দেশে বাস ছাড়ে বিকেল ৩টায়।

ফেনীর ট্রাংক রোডে যখন পা রাখি তখন বৃহস্পতিবার (২০ এপ্রিল) হয়ে গেছে। ঘড়ির কাঁটায় রাত ১২টা।
 
বুধবার ঢাকা থেকে রওনা দেওয়ার পর একটানে কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম পৌঁছে যাই বিকেল সাড়ে ৫টার মধ্যেই। চৌদ্দগ্রাম থেকে ফেনীর মহিপাল স্বাভাবিক দিনে ৪০ মিনিট লাগলেও সেদিন জ্যামের কারণে আসতে লেগেছে সাড়ে পাঁচ ঘণ্টা।

ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে দুর্ভোগের এমন গল্প শুধু তিশারই নয়-এ পথে যাতায়াত করা প্রতিটি যাত্রীর। ঢাকা থেকে ফেনী তিন/চার ঘণ্টার পথ পাড়ি দিতে এখন সময় লাগে ১০/১১ ঘণ্টা।  

রোববার (২১ এপ্রিল) সকাল ১১টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত সড়কের বিভিন্ন এলাকায় সরেজমিন গিয়েও দেখা যায় এ চিত্র। যানজটের চিত্র-ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কমযাত্রী এবং গাড়ির চালকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, মহাসড়কে ফেনীর মোহাম্মদ আলী থেকে লালপুল প্রায় ১২ কিলোমিটার। এ রাস্তায় প্রতিদিন ঘণ্টার পর ঘণ্টা যানজটে পড়ে থাকতে হয় তাদের। এতে নষ্ট হয় কর্ম ঘন্টা, পোহাতে হয় দুর্ভোগ। যানজটে আটকা পড়ে ভোগান্তিতে পড়তে হয় অ্যাম্বুলেন্সের রোগীদেরও।

দূরপাল্লার বাস-কাভার্ডভ্যানসহ একাদিক পরিবহনের যাত্রীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, মহাসড়কের এ অংশের যানজটের মূল কারণ ফতেহপুর এলাকার রেল ক্রসিংয়ের ওভারপাসের নির্মাণ কাজ।

সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, যানজট নিরসনে মহাসড়কের এ অংশে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের অধীনে ওভারপাসটির কাজ শুরু হয় ২০১২ সালের ফেব্রুয়ারি। প্রায় ১শ’ কোটি টাকা ব্যয়ে প্রকল্পটি বাস্তবায়নের দায়িত্ব পায় শিপু বিপিএল নামে একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। দায়িত্ব পেয়ে তিন বছরের মাথায় কাজের অর্ধেকটাও শেষ করতে না পারায় ৬০ কোটি ৫১ লাখ ১৮ টাকা ব্যয়ে নতুন করে দায়িত্ব পায় আল আমিন কনস্ট্রাকশন নামে আরেকটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান।

গেল বছরের মার্চ থেকে তারা দায়িত্ব পাওয়ার পর কাজের কিছুটা অগ্রগতি এলেও যানজট লেগেই আছে। কারণ নির্মাণ কাজের জন্য ফোর লেনের দুই লেনই ব্যবহার হচ্ছে না পরিবহন চলাচলের কাজে। দীর্ঘ পাঁচ বছর অতিক্রম করলেও শেষ হয়নি ওভারপাসটির নির্মাণ কাজ। যার কারণে মহাসড়কের ফেনী অংশে যানজট এখন নিত্য সঙ্গী।

অপরদিকে এ পথে যানজটের কারণে ফেনী বিকল্প সড়ক হিসেবে শহরের ট্রাংক রোড দিয়ে কিছু যান চলাচল করতো। সে সড়কটিতেও এখন মেরামতের কাজ চলাতে দুর্ভোগ চরম আকার ধারণ করেছে। এ পথে চলাচলকারী যাত্রী ও চালকদের দাবি, যানজট পুরোপুরি নিরসন করতে না পারলেও তা যেন সহনীয় মাত্রায় নিয়ে আসা যায়, তার জন্য উদ্যোগী হবেন কর্তৃপক্ষ।

শাহ আলম নামে এক বাস চালক বলেন, ওভারপাসটির এখানে কোনো বাইপাস সড়ক তৈরি করা ছাড়াই লেন বন্ধ করে কাজ করছে, যার কারণে প্রতিদিন তৈরি হচ্ছে যানজট।

আবদুল করিম নামে আরেক কাভার্ডভ্যান চালক বাংলানিউজকে জানান, চার লেনের গাড়ি যদি দুই লেনে চলে তাহলেতো যানজট হবেই। এছাড়া রাস্তার বিভিন্ন অংশে তৈরি হয়েছে খানাখন্দ, সেসব খানাখন্দে গাড়ি বিকল হয়ে পড়ায় মাঝে মধ্যে তৈরি হয় যানজট।
 
এদিকে ফেনী মহিপাল হাইওয়ে থানা পুলিশের পরিদর্শক (ওসি) আবদুল আউয়াল জানান, প্রতিদিন মহাসড়কের যানজট নিরসনে পুলিশ নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে।

এ ব্যাপারে কথা বলতে ফতেহপুর রেলক্রসিং ওভারপাসটির নির্মাতা প্রতিষ্ঠান আল আমিন কনস্ট্রাকশনের কাউকে পাওয়া যায়নি।

সম্প্রতি ওভারপাসটির নির্মাণ কাজের অগ্রগতি দেখতে আসেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।

তিনি বলেন, চলতি বছরের ১৫ মের মধ্যে এর কাজ অর্ধেক সম্পন্ন হবে। জুলাইয়ের মধ্যে পুরোপুরি কাজ শেষ হবে বলে আশা করা যাচ্ছে।

গাড়ির চালক ও সাধারণ যাত্রীদের দাবি, তাদের যেন অসহনীয় যানজট থেকে রেহাই দেওয়া হয়।

বাংলাদেশ সময়: ২০২৮ ঘণ্টা, এপ্রিল ২২, ২০১৮
এসএইচডি/আরবি/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।