ঢাকা, শুক্রবার, ৬ বৈশাখ ১৪৩১, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

সমুদ্র ও স্থলবন্দরে দুর্নীতি বন্ধে একগুচ্ছ সুপারিশ

রহমান মাসুদ, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০২০২ ঘণ্টা, এপ্রিল ২২, ২০১৮
সমুদ্র ও স্থলবন্দরে দুর্নীতি বন্ধে একগুচ্ছ সুপারিশ চট্টগ্রাম বন্দর

ঢাকা: দেশের সমুদ্রবন্দর ও স্থলবন্দরকেন্দ্রিক দুর্নীতি রোধে একগুচ্ছ  সুপারিশ করেছে রাষ্ট্রীয় দুর্নীতি দমন সংস্থা (দুর্নীতি দমন কমিশন) দুদক। দুদকের এই সুপারিশে প্রধান সমুদ্রবন্দর ‘চট্টগ্রাম বন্দর’ ও স্থল বন্দরগুলোর দুর্নীতি রোধের বিষয়টিই মূলত স্থান পেয়েছে।

এরই মধ্যে নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয় ও রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদের কাছে এসব সুপারিম পৌঁছে দিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। দুদক তাদের দীর্ঘ অনুসন্ধানের মাধ্যমে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে এই সুপারিশ তৈরি করেছে।


 
এতে বলা হয়েছে, দেশের আমদানি-রপ্তানির সিংহদ্বার চট্টগ্রাম বন্দর। এই বন্দরে ‘কথিত’ বহুমাত্রিক দুর্নীতি রয়েছে বলে সমালোচনা রয়েছে। বন্দরের জেটিতে প্রবেশের অনুমতি থেকে শুরু করে যন্ত্রপাতি কেনা, কনটেইনার হ্যান্ডলিং, পাইলটিং, ড্রেজিং, নির্মাণ ও উন্নয়নকাজ, জাহাজের বার্থ অ্যালোকেশন, নিজস্ব তহবিল ব্যবস্থাপনা, পেনাল রেন্ট মওকুফ, বন্দরের ভূমি ইজারা দেওয়া ইত্যাদিসহ নানা খাতে হরেক রকম অনিয়ম-দুর্নীতি হওয়ার অভিযোগ রয়েছে। সেইসঙ্গে এসব অভিযোগের সত্যতাও রয়েছে। এসব অনিয়ম-দুর্নীতির উৎস চিহ্নিত করা এবং নিরসনের জন্যই দুদক’র এই সুপারিশ।
 
দুদক তার সুপারিশের প্রথমেই রেখেছে বন্দর ব্যবস্থাপনা ও কার্যক্রম পরিচালনায় দৈনন্দিন যান্ত্রিক ক্রয়, সংগ্রহ ও মেরামতের জন্য লিমিটেডে টেনডারিং মেথড বা এলটিএম’কে নিরুৎসাহিত করে উন্মুক্ত দরপত্র ব্যবস্থা চালু করাকে। যেক্ষেত্রে একান্ত অপরিহার্য, সেক্ষেত্রে কঠোর মনিটরিংসহ পাবলিক প্রকিউরমেন্ট অ্যাক্ট এবং  বিধিমালা পরিপালন নিশ্চিত করার ওপর জোর দিয়েছে দুদক।
 
এছাড়া ড্রেজার কিংবা নৌযান কেনাসহ সকল কেনাকাটার কার্যক্রমে ই-টেন্ডার প্রক্রিয়া অনুসরণ বাধ্যতামূলক করারও সুপারিশ দুদকের। এসকল প্রক্রিয়ায় টেকনিক্যাল কমিটিতে বিশেষজ্ঞ প্রকৌশলীদের অন্তর্ভুক্ত করার কাথাও বলা হয়েছে।
 
দুদক তার দীর্ঘ অনুসন্ধানে দেখেছে, বিভিন্ন কারণে পেনাল রেন্ট  জরিমানা সীমা ১ হাজার টাকা অতিক্রম করলে মওকুফের জন্য সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন প্রয়োজন পড়ে। যা সময়সাপেক্ষ; তাছাড়া কন্টেইনারের মালামাল ছাড় করানোর ক্ষেত্রে আমদানিকারকদের হয়রানি ও দুর্নীতির শিকার হতে হয়। এ সুযোগে কোনো কোনো সিন্ডিকেট জরিমানা আরোপের পরিবেশ তৈরি করে। তা মওকুফের ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্টরা অনৈতিক বাণিজ্যে জড়িয়ে পড়ে। ফলে আমদানিকৃত পণ্যের দাম কয়েকগুণ বেড়ে যায় এবং বন্দরে কন্টেইনারের জট সৃষ্টি হয়।
 
এজন্য এক্ষেত্রে মন্ত্রণালয়ের পরিবর্তে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান’র নেতৃত্বে পোর্ট শিপিং বিশেষজ্ঞদের নিয়ে একটি উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন কমিটি গঠন করে জরিমানা মওকুফের এখতিয়ার চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের ওপর ন্যস্ত করার সুপারিশ করেছে দুদক।
 
বার্থ অ্যালোকেশনের ক্ষেত্রে ‘ফাস্ট ইন ফার্স্ট আউট’ মেথড বা এফআইএফও অনুসরণ করার মাধ্যমে বন্দরে জাহাজের সিরিয়াল রক্ষায় কঠোর হতে বলেছে দুদক। এক্ষেত্রে অনিয়ম বন্ধে কঠোর অনুশাসন নিশ্চিত করারও সুপারিশ করেছে তারা।
 
স্থলবন্দরের ক্ষেত্রে দেওয়া সুপারিশে দুদক বলেছে, স্থলপথে পণ্য আমদানি-রপ্তানি সহজতর ও উন্নততর করতে বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। সরকার স্থলবন্দরের অবকাঠামো উন্নয়ন, পণ্য হ্যান্ডলিং ও সংরক্ষণে আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারসহ বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কার্যক্রম পরিচালনা করলেও দুর্নীতি অনিয়মের কারণে এ বন্দরগুলো কাঙ্ক্ষিত সাফল্য অর্জনে করতে পারছে না।
 
এজন্য স্থল বন্দরগুলোতে মালামাল হ্যান্ডলিংয়ে গতিশীলতা ও স্বচ্ছতা বাড়াতে পর্যায়ক্রমে অটোমেশন সিস্টেম চালুর সুপারিশ করেছে দুদক। একই সঙ্গে দুর্নীতি বন্ধে স্থলবন্দরে পণ্য হ্যান্ডলিংয়ের কাজে বন্দরের নিজস্ব ইক্যুইপমেন্ট (ক্রেন,ফর্কলিফ্ট) সংগ্রহের কথাও বলা হয়েছে সুপারিশে।
 
বন্দরের সার্বিক নিরাপত্তাসহ অপারেশনাল কার্যক্রম (আন্তর্জাতিক প্যাসেঞ্জার টার্মিনালসহ) মনিটরিং ও তদারকির জন্য পৃথক মনিটরিং সেল গঠনের কথাও বলেছে দুদক। একই সঙ্গে বন্দরের শুল্ক ও মাশুল ফাঁকি বন্ধ করতে বন্দরের ‘ওয়ে ব্রিজ স্কেল’এ আমদানি পণ্যবাহী ট্রাক ও খালি ট্রাকের ওজন পরিমাপ নিশ্চিত করার কথা বলা হয়েছে।
 
বহুল আলোচিত ‘বন্দরের পাচারকারী চক্র’কে চিহ্নিত করে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশও করেছে রাষ্ট্রের সাংবিধানিক এ প্রতিষ্ঠানটি।  

এতে বলা হয়েছে, বন্দরের যে সকল কর্মকর্তা-কর্মচারী এ চক্রকে সহযোগিতা করে যাচ্ছে, তাদের্ও চিহ্নিত করে বিভাগীয় ব্যবস্থা নিতে হবে। কোনো কর্মকর্তা-কর্মচারীর বিরুদ্ধে দায়িত্ব অবহেলা বা দুর্নীতির অভিযোগ পাওয়া গেলে তা সঙ্গে সঙ্গে বিচারিক প্রক্রিয়ার মধ্যে নিয়ে আসতে হবে। এজন্য কাস্টম ইন্টেলেজেন্স বা সিআইসি’র মতো আলাদা একটি সার্ভেইলেন্স ইউনিট (নজরদারি ইউনিট) তৈরিরও সুপারিশ করেছে দুদক।
 
দুদক চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ বাংলানিউজকে বলেন, স্থলবন্দরের দুর্নীতি বন্ধে সড়ক ও রেলপথ ট্রাফিক জ্যামমুক্ত রাখারও সুপারিশ করা হয়েছে। এতে পচনশীল পণ্য ও মালামাল দ্রুত পারাপারের দুর্নীতি বন্ধ হবে। এছাড়া মালামাল হ্যান্ডলিংয়ে নজরদারির কথাও বলেছি আমরা।
 
বাংলাদেশ সময়: ০৮০২ ঘণ্টা, এপ্রিল ২২, ২০১৮
আরএম/জেএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
welcome-ad