ঢাকা, বুধবার, ৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

‘কিছু নিতে গেলেই বুঝি আমার ডান হাতটি নেই’

আবাদুজ্জামান শিমুল, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১১৬ ঘণ্টা, এপ্রিল ২১, ২০১৮
‘কিছু নিতে গেলেই বুঝি আমার ডান হাতটি নেই’ সাহিনা বেগম ডান হাত হারানো ছেলে হৃদয়কে ভাত খাইয়ে দিচ্ছেন। ছবি: বাংলানিউজ

ঢাকা: ‘এখনও মনে হয় না যে আমার ডান হাতটি নেই। হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে শুয়ে যখন কিছু করতে ডান হাতটা বাড়ানোর চেষ্টা করি, তখনই বুঝি আমার হাতটি নেই, বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে।’

গোপালগঞ্জে বেপরোয়া ট্রাকের চাপে হাত হারানো বাসযাত্রী খালিদ হাসান হৃদয় (৩০) ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের বিছানায় আবেগপ্রবণ হয়ে এ কথা বলছিলেন বাংলানিউজকে। গত মঙ্গলবার (১৭ এপ্রিল) সকালে দুর্ঘটনায় হাত বিচ্ছিন্ন হওয়ার পর সেদিন বিকেলে হৃদয়কে ঢামেকে ভর্তি করা হয়।

 

ঢামেকের ১০২ নং ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন হৃদয় শনিবার (২১ এপ্রিল) দুপুরে বাংলানিউজের সঙ্গে আলাপে বলেন, ‘মুখ ধুতে গেলে, খাবার খাওয়ার সময় বা ছোটখাটো কোনো কাজ করার সময় অবচেতনে ডান হাতটি বাড়ানোর চেষ্টা করি। কিন্তু তখন বুঝতে পারি আমার এই হাত কেড়ে নেওয়া হয়েছে। ’

গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার কাড়ারগাতী গ্রামের রবিউল ইসলামের ছেলে হৃদয় এক বছর ধরে টুঙ্গিপাড়া এক্সপ্রেস নামের একটি পরিবহনের হেলপার হিসেবে কাজ করছিলেন। সেদিন টুঙ্গিপাড়া এক্সপ্রেসেরই একটি বাসের পেছনের দিকের সিটে বসে গোপালগঞ্জ যাচ্ছিলেন তিনি। বসেছিলেন জানালায় ডান হাতের কনুই ঠিস দিয়ে। বাসটি বেদগ্রাম অতিক্রমকালে বিপরীত দিক থেকে বেপরোয়া গতিতে আসা একটি ট্রাকের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়ায়। এতে হৃদয়ের ডান হাত বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। সংকটাপন্ন অবস্থায় তাকে গোপালগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে তার অবস্থার অবনতি হলে তাকে ঢামেকে আনা হয়।  

নিজে পরিবহনে কাজ করেও এমন মর্মান্তিক দুর্ঘটনার শিকার হওয়া হৃদয় বলেন, ‘এখন মনে হচ্ছে, যানবাহনগুলো বেপরোয়া গতিতে চলেই এ ধরনের দুর্ঘটনা ঘটাচ্ছে। একটু সাবধানে চলাচল করলে অনেক দুর্ঘটনা কমানো সম্ভব। ’

বাংলানিউজ যখন হৃদয়ের সঙ্গে কথা বলতে যায়, তখন তার মা সাহিনা বেগম হাত হারানো ছেলেকে ভাত খাইয়ে দিচ্ছিলেন। সাহিনা তখন আক্ষেপ করে বলেন, ‘আমার একমাত্র ছেলে হৃদয়। ছোটবেলা থেকে তার চাওয়া-পাওয়া সব দাবি ছিল আমার কাছে। তার দুর্ঘটনার খবরে এলাকার সবাই চোখের পানি ফেলেছে। হৃদয় এলাকায় সবার কাছে খুব প্রিয়। ’

ঢামেক পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল একেএম নাসির উদ্দিন বাংলানিউজকে বলেন, ‘হৃদয়ের অবস্থা এখন ভাল। আগামীকাল (রোববার) হৃদয়কে ওয়ার্ড থেকে কেবিনে নেওয়া হবে।

তিনি জানান, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের ঢামেকে এসে হৃদয়কে দেখে গেছেন। তার চিকিৎসার খোঁজখবর নিয়েছেন। হৃদয়ের সঙ্গে তিনি কথাও বলেছেন। পরে তার পরিবারকে তিনি বলেছেন, হৃদয় সুস্থ হলে তার সঙ্গে যেন দেখা করা হয়। হৃদয়ের সব ব্যবস্থা তিনি করে দেবেন।

বাংলাদেশ সময়: ১৭১২ ঘণ্টা, এপ্রিল ২১, ২০১৮
এজেডএস/এইচএ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।