বৃহস্পতিবার (১৯ এপ্রিল) সন্ধ্যায় উদ্ধার হওয়া মরদেহটি কক্সবাজার সদর উপজেলার ঝিলংজা ইউনিয়নের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের ঘাটপাড়া এলাকার মৃত হাজী আবু ছৈয়দের ছেলে মুহাম্মদ খালেদের বলে শনাক্ত করেছেন তার স্বজনরা। ৬ মাস আগে সদরের খুরুশকুল ইউপির তেতৈয়ার নতুন ঘোনারপাড়ার ছৈয়দুল হকের মেয়ে জোবাইদার সাথে খালেদের পারিবারিকভাবে বিয়ে হয়।
স্ত্রীর পরকীয়ার জেরে শ্বশুর বাড়িতে তিনি হত্যার শিকার হয়েছেন বলে দাবি করেছেন নিহতের স্বজনরা। এ ঘটনায় নিহতের স্ত্রী, বোন ও এক সৎ ভগ্নিপতিকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে পুলিশ।
নিহত খালেদের ভাই আবদুল্লাহ বলেন, শনিবার (১৪ এপ্রিল) শ্বশুরালয়ে গেলে সেখানে পরিকল্পিতভাবে তাকে হত্যার পর বস্তাবন্দি করে ১০ কিলোমিটার দূরে নিয়ে ফেলে দেওয়া হয়।
নিহত খালেদের ছোট ভাই আবদুল মান্নান জানান, তারা ৮ ভাইয়ের মাঝে খালেদ ৫ম। গত বছরের ২০ নভেম্বর সদরের খুরুশকুল ইউনিয়নের তেতৈয়ার নতুন ঘোনারপাড়া এলাকার ছৈয়দুল হকের মেয়ে জোবাইদা হকের সাথে খালেদের বিয়ে হয়। বিয়ের পর কিছুদিন স্বাভাবিক আচরণ করলেও মাস দুয়েক পর থেকেই জোবাইদা তার ভাই (খালেদ) ও পরিবারের অন্যদের সাথে বাজে আচরণ করতেন। এর কারণ খুঁজতে গিয়ে জানতে পারি বিয়ের আগে অন্য পুরুষের সাথে তার সম্পর্ক ছিল। এ কারণে দর্ব্যবহার করতেন তার ভাইয়ের সাথে। ইতিমধ্যে জোবাইদা অন্তঃসত্ত্বা হন।
আব্দুল মান্নান জানান, মাতৃত্বকালীন সমস্যার কারণে সম্প্রতি তাকে হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেবার কথা বলে সেখান থেকে তার বাবা-মা তাকে (জোবাইদাকে) বাবার বাড়িতে নিয়ে যান। সেখানে তিনমাসের গর্ভের সন্তান নষ্ট করেন জোবাইদা। এ নিয়ে খালেদের সাথে মুঠোফোনে বাকবিতণ্ডা হয় জোবাইদার। একপর্যায়ে পুরোনো প্রেমিককে দিয়ে খালেদকে গালিগালাজ করান তিনি। এমনকি বউয়ের দাবি নিয়ে শ্বশুরালয়ে গেলে মেরে ফেলার হুমকি দেওয়া হয়। এসব কথাবার্তা মোবাইল ফোনে রেকর্ড রয়েছে।
নিহত খালেদের ভাই আরো জানায়, সন্তান নষ্ট করা ও স্ত্রীর পরকীয়ার ব্যাপারে কথা বলতে শনিবার শ্বশুরবাড়ি যান খালেদ। সেদিন মোবাইল ফোনে এটা পরিবারকে জানান তিনি। পরেরদিন রোববার থেকে তার মোবাইল ফোন বন্ধ পাওয়ায় ভাবী জোবাইদাকে ফোন করে খোঁজ নেওয়া হয়। কিন্তু জোবাইদা দাবি করেন খালেদ সেখানে যাননি।
ঝিলংজা ইউপির স্থানীয় সদস্য আবদুর রশিদ জানান, খালেদ কর্মঠ ছেলে। সারাদিন রাজমিস্ত্রির কাজ করে এসে সন্ধ্যায় এলাকায় একটি পানের দোকান করতেন। পারিবারিক কলহের কথা শুনেছি কিন্তু এতটা প্রকট তা জানা ছিল না।
ঝিলংজা ইউপি চেয়ারম্যান টিপু সুলতান বলেন, ধারণা করা হচ্ছে খালেদকে হত্যার পর নিজেদের আড়াল করতেই মরদেহটি বস্তাবন্দি করে প্রায় ১০ কিলোমিটার দূরে নিয়ে খালে ফেলে আসে নরপশুরা। এর উপযুক্ত বিচারদাবি করছি আমরা।
এ বিষয়ে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা কক্সবাজার সদর থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) দেবাশীষ বলেন, এ ঘটনায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নিহতের স্ত্রী জোবাইদা ও তার বোন মোবারেকা এবং তাদের আরেক সৎ বোনের স্বামী ফারুককে থানায় আনা হয়েছে।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে জোবাইদার বড় ভাই মোহাম্মদ আবছারের মোবাইলে যোগাযোগ করা হয়। ফোন রিসিভি করে সাংবাদিক পরিচয় জেনে বলেন, আবছার একটু দূরে রয়েছেন। তিনি এলে কলব্যাক করে কথা বলবেন জানিয়ে লাইনটি বিচ্ছিন্ন করে দিয়ে আর কল রিসিভ বা ব্যাক করেননি।
কক্সবাজার সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ফরিদ উদ্দিন খন্দকার জানান, লাশ উদ্ধারের পরই অজ্ঞাত আসামি দিয়ে একটি মামলা করা হয়েছিল। এখন পরিচয় মিলেছে এবং তার হত্যার পেছনে স্ত্রীর হাত থাকতে পারে ধারণা করা হচ্ছে।
বাংলাদেশ সময়: ১৬০৪ ঘণ্টা, এপ্রিল ২১, ২০১৮
টিটি/এমজেএফ