কিন্তু এই বিকল্প সড়ক এখন প্রতিবন্ধকতায় ঠাসা! কোথাও বসেছে অস্থায়ী বাজার, আবার কোথাও ফুটপাত দখল করে বসানো হয়েছে চা’য়ের দোকান। ফলে ফুটপাত ছেড়ে পথচারীদের হাঁটতে হয় মূল সড়ক দিয়ে।
সম্প্রতি সরেজমিনে ঘুরে ও ভুক্তভোগী স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে সড়কটির এমন চিত্র পাওয়া গেছে।
সরেজমিনে দেখা যায়, সড়ক ও সড়কসংলগ্ন ফুটপাতে গড়ে উঠেছে দোকানপাট, রিকশা গ্যারেজ ও বাজার। সড়কের অন্তত পাঁচ জায়গায় রাখা হয়েছে সিটি করপোরেশনের ময়লার কনটেইনার।
বাড়িঘরের নির্মাণ-সামগ্রী রাখায় ফুটপাত দিয়ে পথচারীদের চলাচল বন্ধ। সড়কের প্রস্থ কমে যাওয়ায় তৈরি হয় যানজটের। এই সড়কের প্রধান বাহন লেগুনা ও রিকশা। অনেক সময় রিকশা ও লেগুনার জটলা তৈরি হয় সড়কে। মোহাম্মদপুর আদাবর থেকে মিজানুর রহমান ভ্যানে করে কাঁচা আমসহ বিভিন্ন পণ্য নিয়ে এসেছেন এই ৬০ ফুটে। ভোর ছয়টা থেকে শুরু করে প্রতিদিনই এখানে ভ্যানে করে বিভিন্ন পণ্য বিক্রি করেন তিনি।
জানালেন, ভোর ছয়টা থেকে বেলা ১২টা পর্যন্ত ছয় ঘণ্টা ব্যবসা করার জন্য তাকে ৫০ টাকা চাঁদাও দিতে হয়। তবে শুক্রবার এ চাঁদার হার ১০ টাকা বেড়ে দিতে হয় ৬০ টাকা।
বাংলানিউজকে মিজানুর বলেন, বাজার আল্লাহর আজান (ফজরের নামাজের আজান) দিলে শুরু। কখনও সকাল ১১টায় শেষ আবার কখনও বেলা ১২টা বাজে। ছয় ঘণ্টা বাজার বসাইতে রানা ভাইকে আল্লাহর ৩০টা দিন ৫০ টাকা করে দেয়া লাগে।
তবে এই রানা ভাই কে তা নির্দিষ্ট করে জানাতে পারেননি তিনি।
শুধু সবজি কিংবা ফলমূল-ই নয়, সড়কের উপরে বসা এ বাজারে মেলে মাছ, মাংস থেকে শুরু মসলাপাতিও। ফলে নামে ৬০ ফুট প্রশস্তের সড়ক হলেও পথচারী ও গাড়ি চলাচলের জন্য এখন ৩০ ফুটও নেই!
সড়ক আটকে মুরগি বেচাকেনা করছেন আরিফ নামে এক ব্যক্তি। কাছে গেলেই তিনি বলেন, আমরা তো আর সারা দিন এখানে মুরগি বিক্রি করবো না। একটু পরেই বেচাকেনা শেষ বাড়ি চলে যাবো।
দোকানিদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, কয়েক ক্যাটাগরিতে এই সড়কে চাঁদার মাধ্যমে বাজার বসতে দেওয়া হয়েছে। যেমন চলন্ত ভ্যান থামিয়ে কোনো পণ্য বিক্রি করলে চাঁদা ৫০ টাকা। এছাড়া সড়কজুড়ে বসে সবজি বিক্রি করলে ১০০, মাছ বিক্রি করলে ১২০ ও মসলা বিক্রি করলে ১০০ টাকা চাঁদা দিতে হয়। সড়কে জায়গা বাড়িয়ে নিলে বাড়তি টাকা দিতে হয় এই অস্থায়ী ব্যবসায়ীদের।
৬০ ফুট সড়কের পাবনা গলির মাথার বাসিন্দা শরিফুল ইসলাম। বাজারের কারণে ৬০ ফুট সড়কে বা ফুটপাতে চলাচল করতে গিয়ে প্রতিবন্ধকতার শিকার শরিফুলরা। বাংলানিউজকে শরিফুল বলেন, বাজার বসবে বাজারে, সড়কে কেন? এটা যেন দেখার কেউ নাই। সকালে বাচ্চাদের স্কুলে নিয়ে যাই রিকশায়, কিন্তু বাজারের কারণে রিকশার চাকা ঘুরে না। অনেক সময় বাচ্চাকে হাঁটিয়ে স্কুলে নিতে হয়।
সড়কের বাজার বসা নিয়ে কথা হয় ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলর (১৩ নম্বর ওয়ার্ড) হারুন-অর-রশিদের সঙ্গে।
তিনি বলেন, ‘সড়ক দখল করে এই বাজার উচ্ছেদে বহুবার বলা হয়েছে, কোনো কাজে আসে না। অনেক ‘মিটিং-সিটিং’ও করছি। এখন সকাল ৬টা থেকে ৯টা পর্যন্ত বাজার বসে বলে আমি জানি। ’
এ বিষয়ে লেগুনা চালক আল-আমিনেরও একই কথা। বললেন, যেখানে পাশাপাশি দু’টা লেগুনা চলার কথা। ভ্যানে করে বাজার বসার কারণে একটাও চলতে পারে না। সকাল থেকে বাজার শুরু হয়। অফিস টাইমে আমরা লেগুনা টানতেই পারি না।
এদিকে পশ্চিম আগারগাঁও ও বিএনপি বাজার এলাকায়ও গিয়ে দেখা যায়, সড়কটির ফুটপাতের একই অবস্থা। দখল করে তৈরি করা হয়েছে নানা ধরনের দোকান। এর মধ্যে কাঠের আসবাব তৈরি, গাড়ি, মোটরসাইকেল ও রিকশা মেরামতের কাজ চলছে সড়কের ওপরেই।
সড়কের পাকা মসজিদ ও ভাঙা ব্রিজ অংশ কয়েকটি দোকান গড়ে উঠেছে। এখানে রাত-দিন ২৪ ঘণ্টা সড়ক দখল করে বেচাকেনা চলে বলে জানালেন স্থানীয়রা।
স্থানীয় অধিবাসী ও দোকানিরা বলেন, রাজনৈতিক দলের স্থানীয় নেতা ও থানা-পুলিশের সহায়তায় সড়কে এসব দোকান গড়ে ওঠেছে। এতে গুটিকয়েক মানুষের পকেট ভরলেও ভোগান্তিতে রয়েছেন স্থানীয়রা।
রাজধানীর মিরপুর গ্রামীণ ব্যাংকের প্রধান কার্যালয় সংলগ্ন পোস্ট অফিসের পাশ থেকে সরাসরি আগারগাঁও পর্যন্ত নতুন রাস্তা নির্মাণ করছে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি)।
২৪০ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত সড়কটিতে যান চলাচল শুরু হয় ২০১৪ সালের শেষ দিকে। ৬০ ফুট প্রশস্ত নতুন এ রাস্তাটির দৈর্ঘ্য ৩ দশমিক ৬৩ কিলোমিটার। যার দু’পাশে ৫ ফুট করে ১০ ফুট ফুটপাথ আর মূল রাস্তা ৫০ ফুট প্রশস্ত। অথচ এ সড়কের সুফল পাচ্ছেন না সাধারণ মানুষ।
বাংলাদেশ সময়: ০৯২৭ ঘণ্টা, এপ্রিল ২১, ২০১৮
এমআইএস/এসএইচ