স্কুল তার ভালো লাগে, লেখাপড়া করতেই হবে। সিদ্ধান্ত নেয় কিছু একটা করার।
সপ্তাহে তিনদিন স্কুলে যায়, আর বাকি দিনগুলোতে ফেরি করে বাদাম বিক্রি করে সাকিব। নিজের লেখাপড়ার পাশাপাশি ছোট দুই ভাই-বোনের খরচ পড়ার খরচও যোগান দিয়ে যাচ্ছে পল্লি মঙ্গল মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সপ্তম শ্রেণির এই অদম্য শিক্ষার্থী। সে নড়াইলের কালিয়া উপজেলার আতলিয়া গ্রামের ইকবাল সিকদারের ছেলে। অন্য শিশুরা যখন পরিপাটি পোশাক পরে ক্লাসে মগ্ন থাকে। ঠিক তখন বাদামের ডালা গলায় ঝুলিয়ে পথে পথে ঘুরে বেড়ায় সাকিব। চোখে মুখে তার রাজ্যের চিন্তা, কিন্তু কণ্ঠে দৃঢ় প্রত্যয়। যে কোনো মূল্যে তাকে লেখাপড়া শিখতেই হবে। লেখাপড়া শেখাতে চায় ছোট বোন চতুর্থ শ্রেণির ছাত্রী সুরাইয়া ও প্রথম শ্রেণির ছাত্র ছোট ভাইকেও।
গেল সপ্তাহে নড়াইল শহরেই দেখা হয় সাকিবের সঙ্গে। তখন এক দোকানির কাছে বাদাম বিক্রি করছিল সে। অন্য ফেরিওয়ালাদের চেয়ে বেশ পরিপাটি বেশভূষা দেখে খানিকটা খটকা লাগে। কৌতূহল থেকেই জিজ্ঞাসা। আর এক প্রশ্নেই বেরিয়ে আসে তার সংগ্রামের কাহিনী।
বাংলানিউজকে সে জানায়, বসতভিটা ছাড়া কোনো জমি নেই তাদের। অসুস্থ বাবা দিনমজু্র দিয়ে সংসার চালান। শরীরও চলে না, আবার সব সময় কাজও থাকে না। যেদিন কাজ থাকে না সেদিন তাদের উপোস থাকতে হয়।
যেদিন তার পড়া বন্ধ করে দেওয়া হয়, সেদিন তার কাছে জমানো ছিলো ১০০ টাকা। পরদিন সেই টাকা দিয়ে বাদাম কিনে বাড়ি ফিরে পরিকল্পনার কথা জানায় মাকে। মাকে দিয়ে বাদাম ভাজিয়ে তা নিয়ে বেরিয়ে পড়ে রাস্তায়।
এখন সপ্তাহে তিনদিন স্কুলে যায় সে। অন্য দিনগুলোতে ১৪ কিলোমিটার পারি দিয়ে নড়াইল শহরে হাজির হয় বাদাম বিক্রি করতে। দৈনিক ১২০ থেকে ২০০ টাকা আয় হয়। দুপুরে খেলে তেমন মুনাফা জমে না। এ কারণে এসব দিনে দুপুরে তাকে উপোস থাকতে হয়। সকালে বাড়ি থেকে খেয়ে বের হয়, আবার রাতে বাড়ি ফিরে খেয়ে ক্লান্ত শরীরে ভাইবোনদের সঙ্গে বই নিয়ে বসে।
তার বাবা ইকবাল সিকদার জানান, শারীরিক অসুস্থতার কারণে প্রতিদিন কাজ করতে পারেন না। দিনমজুরের কাজ করে পরিবারের পাঁচ সদস্যের খাবার জোগাড় করে ছেলে-মেয়েদের লেখাপড়া করানো তার পক্ষে সম্ভব না। যে কারণে ছেলের লেখাপড়া বন্ধ করে দিয়েছিলেন। এখন ছেলের আগ্রহ দেখে খুশি তিনি।
বাংলাদেশ সময়: ০৮৫৬ ঘণ্টা, এপ্রিল ২১, ২০১৮
এসআই/এসআই