ঢাকা, শুক্রবার, ৬ বৈশাখ ১৪৩১, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

দ. এশিয়ায় শান্তি প্রতিষ্ঠায় ভূমিকা রাখতে চায় বাংলাদেশ

মহিউদ্দিন মাহমুদ, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮৪২ ঘণ্টা, এপ্রিল ২০, ২০১৮
দ. এশিয়ায় শান্তি প্রতিষ্ঠায় ভূমিকা রাখতে চায় বাংলাদেশ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা/ফাইল ফটো

লন্ডন থেকে: দক্ষিণ এশিয়ায় শান্তিপূর্ণ পরিবেশ তৈরির জন্য সংশ্লিষ্ট সবাইকে বাংলাদেশ সহযোগিতা করতে চায় বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, শান্তিপূর্ণ পরিবেশে আমরা যেন ভালো পড়শী হিসেবে পাশাপাশি থাকতে পারি এবং নিজেদের জনগণের কল্যাণে গঠনমূলক নীতি অনুযায়ী কাজ করতে পারি।

শুক্রবার (২০ এপ্রিল) ব্রিটিশ রাজপ্রাসাদ উইন্ডসর ক্যাসেলে কমনওয়েলথভুক্ত দেশগুলোর সরকারপ্রধানদের সম্মেলনে (চোগম) রিট্রিট সেশনে বক্তৃতায় প্রধানমন্ত্রী এ কথা বলেন। সেশনে সভাপতিত্ব করেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী টেরিজা মে।

সেশনের ৪ নম্বর এজেন্ডা ‘কমনওয়েলথ সচিবালয় পরিচালনা ও অর্থায়ন’ বিষয়ে আলোচনায় প্রধানমন্ত্রী বলেন, কমনওয়েলথভুক্ত দেশগুলোর স্বার্থে কাজ এগিয়ে নিতে আমরা সচিবালয়ের ভূমিকাকে গুরুত্বের সঙ্গে দেখি। আমরা মনে করি, সদস্য দেশগুলোর যথাযথ দৃষ্টিভঙ্গিও এক্ষেত্রে সমান গুরুত্বপূর্ণ। কমনওয়েলথ সচিবালয় পরিচালনার অর্থায়নের প্রশ্নে হাই লেভেল গ্রুপের পর্যালোচনার প্রেক্ষাপট থেকে কিছু বলতে চাই।

প্রথমত, হাই লেভেল গ্রুপকে হতে হবে আরও বেশি প্রতিনিধিত্বমূলক, যেখানে কমনওয়েলথের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে সদস্য রাষ্ট্র থাকবে। বোর্ড অব গভর্নর্সের সঙ্গে উন্মুক্ত আলোচনার মাধ্যমে সদস্য দেশগুলোর সঙ্গে বিস্তৃত পরামর্শের জন্য কর্মকৌশল থাকতে হবে। দ্বিতীয়ত, উদ্ভাবনী উপায়ে অর্থায়নসহ পৃথক অর্থায়নের কর্মকৌশল ও বিকল্প নির্ধারণে হাই লেভেল গ্রুপ নজর দিতে পারে। তৃতীয়ত, বেসরকারি খাতের অংশীদারিত্ব ও প্রকল্প সহ-অর্থায়ন আরেকটি বিকল্প উপায় হতে পারে।

আলোচনার পঞ্চম এজেন্ডা ‘বৈশ্বিক প্রেক্ষিত’ নিয়ে আলোচনায় প্রধানমন্ত্রী বলেন, কিছু অত্যন্ত গুরত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে নিজের অভিমত ব্যক্ত করতে চাই। প্রথমত আরও সমৃদ্ধ ভবিষ্যতের জন্য বাণিজ্য, বিনিয়োগ ও যোগাযোগ গুরুত্বপূর্ণ। আমি যোগাযোগ বিষয়ের ঘোষণার (ডিক্লারেশন অন কানেক্টিভিটি) খসড়াকে স্বাগত জানাই। আমরা দক্ষিণ এশিয়ায় শান্তিপূর্ণ পরিবেশ তৈরির জন্য সংশ্লিষ্ট সবাইকে সহযোগিতা করতে চাই, যেখানে আমরা ভালো পড়শী হিসেবে পাশাপাশি থাকতে পারবো এবং নিজেদের জনগণের কল্যাণে গঠনমূলক নীতি গ্রহণ করবো।

কমনওয়েলথে যোগাযোগের আলোচনা গুরুত্ব পাওয়ায় সাধুবাদ জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, যোগাযোগকে আমরা বিস্তৃত পরিসরে দেখি। আমরা মতামত, জ্ঞান, প্রযুক্তি, সংস্কৃতি, সড়ক-রেল-আকাশ, পণ্য, সেবা ও বিনিয়োগের যোগাযোগে বিশ্বাসী। নিয়ম মেনে বাণিজ্যিক যোগাযোগ এবং স্বচ্ছ, অংশগ্রহণমূলক ও সুস্থ বহুজাতিক বাণিজ্যিক কার্যক্রম সবার জন্য গুরুত্বপূর্ণ।

‘এই জায়গা থেকে বাংলাদেশ তার পড়শী ভারত, ভুটান ও নেপালের সঙ্গে মিলে উপ-আঞ্চলিক যোগাযোগ প্রকল্প বাস্তবায়নে কাজ করে যাচ্ছে। আমরা যোগাযোগ বিষয়ক কর্মসূচির দ্রুত বাস্তবায়ন পরিকল্পনাকে বিশেষভাবে দেখি এবং কমনওয়েলথ অংশীদারদের বহুখাতের অবকাঠামোগত প্রকল্প নিয়ে কাজ করার আহ্বান জানাই। ’

সাইবার ইস্যু বিষয়ে আলোচনায় প্রধানমন্ত্রী বলেন, সাইবার জগতে আমরা যেমন সুযোগ-সুবিধা পাচ্ছি, তেমনি চ্যালেঞ্জের মুখেও পড়তে হচ্ছে। সেজন্য একদিকে আমাদের প্রয়োজন অবাধ, বহুমুখী ও নিরাপদ ইন্টারনেট নিশ্চিতে কাজ করা। পাশাপাশি দরকার সাইবার আক্রমণের ঝুঁকি এবং ইন্টারনেটের মাধ্যমে জঙ্গিবাদ ছড়িয়ে পড়া ঠেকাতে কাজ করা। এটা আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। এক্ষেত্রে আমাদের সরকারের নীতি ‘জিরো টলারেন্স’।

‘সেই অবস্থান থেকে আমরা কমনওয়েলথ সাইবার ডিক্লারেশনকেও স্বাগত জানাই। এই ডিক্লারেশনে সাইবার জগত দেখভালে যে নীতি ও দিক-নির্দেশনা রয়েছে, তা তাৎপর্যপূর্ণ। ’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি (আইসিটি) খাতের উন্নয়ন বাংলাদেশের জাতীয় অগ্রাধিকার। আমরা এরইমধ্যে নিজেদের ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ গড়ার ভিশন বাস্তবায়ন করেছি। আমরা মনে করি, অবাধ আইসিটি খাত এবং সংশ্লিষ্ট ক্ষেত্রে সক্ষমতা তৈরি ডিজিটাল বিভাজন কমানোর মৌলিক শর্ত, একইভাবে এটা দারিদ্র্য নির্মূলীকরণ, টেকসই উন্নয়ন অর্জন ও অংশগ্রহণমূলক প্রবৃদ্ধির ক্ষেত্রেও গুরুত্বপূর্ণ। এক্ষেত্রে আমি কমনওয়েলথ সচিবালয়কে ডিক্লারেশনটির দ্রুত বাস্তবায়নে আহ্বান জানাই।

কমনওয়েলথ সংস্কারের পরামর্শ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের চোগম’র প্রতিপাদ্য ভবিষ্যতের কথা বলে, জনগণের মঙ্গলজনক ভবিষ্যতের কথা বলে। সেকেলে পরিকল্পনার উপর চলতে থাকা সংগঠনের বর্তমান যে অবস্থা ও সক্ষমতা, তা আমাদের প্রত্যাশা পূরণের জন্য অপর্যাপ্ত। তাই, আমাদের এ সংস্থাকে প্রত্যাশার দিকে রূপান্তর করতে হবে, সেটা হতে পারে পুনর্বার যাত্রাও।

‘এক্ষেত্রে আমি তিনটি প্রস্তাবনা দিচ্ছি। এক, কমনওয়েলথ উন্নয়ন তহবিল এবং এসডিজি অর্জনে অভিজ্ঞতা বিনিময়ের জন্য প্লাটফর্ম গঠন। দুই, রাজনৈতিক মূল্যবোধের সুরক্ষা ও প্রচারণায় কমনওয়েলথ পার্লামেন্টারি অ্যাসোসিয়েশনের ভূমিকা আরও জোরদার করা এবং তিন, প্রয়োজনীয় সংস্কারের জন্য খ্যাতিমান ব্যক্তিত্বদের নিয়ে একটি বিশেষজ্ঞ মহল গঠন।

বাংলাদেশ সময়: ১৭৪২ ঘণ্টা, এপ্রিল ২০, ২০১৮
এমইউএম/এইচএ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
welcome-ad