ঢাকা, বুধবার, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

সবার জন্য উচ্চতর শিক্ষা ‘রদ চায়’ দুদক

রহমান মাসুদ, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০৫৪ ঘণ্টা, এপ্রিল ২০, ২০১৮
সবার জন্য উচ্চতর শিক্ষা ‘রদ চায়’ দুদক দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)

ঢাকা: দেশের সম্ভাবনাময় তরুণ প্রজন্মকে মানবসম্পদে পরিণত করে জনতাত্ত্বিক লাভ পেতে গুণগত শিক্ষার ওপর গুরুত্ব আরোপ করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। 

এজন্য প্রচলিত শিক্ষা ব্যবস্থার পরিবর্তে কর্মমুখী শিক্ষাকে গুরুত্ব দিয়ে জনসংখ্যাকে মানবসম্পদে পরিণত করার জন্য সরকারের কাছে সুপারিশ করেছে রাষ্ট্রীয় দুর্নীতি দমন প্রতিষ্ঠানটি।
 
এরই মধ্যে শিক্ষামন্ত্রণালয় ও রাষ্ট্রপতির কাছে জমা দেওয়া দুদকের এক সুপারিশে বলা হয়েছে, দেশের শিক্ষা ব্যবস্থায় সাধারণ শিক্ষার ক্ষেত্রে উচ্চতর ডিগ্রি (স্নাতক ও স্নাতকোত্তর) গ্রহণের পথ এতোটাই অবারিত হয়েছে যে, সরকারি-বেসরকারি নিয়োগের ক্ষেত্রে লাখ লাখ চাকুরিপ্রার্থী দ্বারে দ্বারে ঘুরে বেড়াচ্ছেন।

এদের একটা বড় অংশ দেশের উন্নয়নে সম্পৃক্ত হতে পারছেন না।  

অন্যদিকে অনেকে ঘুষ-দুর্নীতি এবং প্রতারণার মাধ্যমে চাকুরি পাওয়ার আশায় দুর্নীতির জালে জড়িয়ে পড়ছেন এবং প্রতারণার শিকার হচ্ছেন। ।
 
দুদক বলছে, সরকারি নিয়োগে দায়িত্বপ্রাপ্ত কিছু কর্মকর্তা এবং অযোগ্য চাকুরিপ্রার্থীরা দেশে নিয়োগে দুর্নীতির প্রধান উৎস। পক্ষান্তরে, দেশের বিভিন্ন উৎপাদনশীল প্রতিষ্ঠানে কারিগরি জ্ঞানসম্পন্ন মানবসম্পদের অভাব। চাহিদা মতো জনবল না পাওয়ার কারণে দেশ দক্ষ বিদেশি নাগরিকদের  কর্মক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে। সাধারণ শিক্ষার ক্ষেত্রে মানবসম্পদের ছড়াছড়ি হলেও পণ্য উৎপাদন ও সেবা খাতে কারিগরি জ্ঞানসম্পন্ন মানবসম্পদের অভাব রয়েছে।
 
এ প্রেক্ষাপটে শিক্ষাক্ষেত্রে কর্মকৌশল গ্রহণের সুপারিশও করেছে দুদক। এতে বলা হয়েছে, সর্বোচ্চ মেধাবীদের জন্যই কেবল উচ্চ শিক্ষার দ্বার উন্মুক্ত রাখা যেতে পারে। এসএসসি বা এইচএসসি পরীক্ষায় প্রাপ্ত গ্রেডিং পয়েন্ট বিন্যাস করে একটি বেঞ্চমার্ক নির্ধারণের কথা বলেছে সংস্থাটি।
 
দুদকের সুপারিশ অনুযায়ী, নির্ধারিত বেঞ্চ মার্কের কম নম্বর পাওয়া শিক্ষার্থীগণ সাধারণ বিশ্ববিদ্যালয়, প্রকৌশল, চিকিৎসা ও কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পাবেন না। তাদের বিভিন্ন কারিগরি শিক্ষা যেমন পলিটেকনিক, মনোটেকনিক এবং ভোকেশনাল শিক্ষার সুযোগ দিয়ে কারিগরি জ্ঞানসম্পন্ন মানবসম্পদে পরিণত করা যেতে পারে। কেবল এভাবেই মানবসম্পদ ব্যবস্থাপনায় পরিবর্তন এনে তরুণদের সুশিক্ষিত করে সক্ষম এবং দক্ষ মানবসম্পদ সৃষ্টি করা যেতে পারে।
 
তবে এজন্য বেঞ্চমার্কের কম নম্বর পাওয়া শিক্ষার্থীদেরকে কারিগরি শিক্ষাদানের জন্য প্রতি উপজেলায়, জেলায়, শহর অথবা মহানগরীর পর্যাপ্ত সংখ্যক বিদ্যালয় / মহাবিদ্যালয় / বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে এখনই ঢেলে সাজানোর মহাপরিকল্পনা গ্রহণে সরকারকে তাগিদ দিয়েছে দুদক।  

এটা করা গেলে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে দক্ষ মানবসম্পদের চাহিদা মিটিয়ে বিশ্ব শ্রমবাজারেরও চাহিদা মেটানো যাবে বলে মনে করে প্রতিষ্ঠানটি। এতে বাংলাদেশের জন্য জনতাত্ত্বিক লাভ অর্থনৈতিক সমৃদ্ধিতে আরও দৃশ্যমান হতে পারে।
 
অন্যদিকে সুপারিশে সরকারকে অধিক হারে শিক্ষাখাতে বিনিয়োগের পরামর্শ দিয়েছে তারা। দুদক মনে করে,শিক্ষায় অর্থব্যয় হচ্ছে সর্বোত্তম বিনিয়োগ। এজন্য প্রাথমিক শিক্ষাকে শিক্ষার মূল ভিত্তি হিসেবে বিশেষভাবে উল্লেখ করা হয়েছে।  

সুপারিশে বলা হয়েছে, প্রাথমিক শিক্ষকগণ হবেন শিক্ষার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশীজন। তাদের জীবন-মান এবং ক্যারিয়ার প্লানিং যুগোপযোগী করা সমীচীন। এ প্রেক্ষাপটে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকগণকে ২য় শ্রেণি এবং প্রধান শিক্ষকগণকে প্রথম শ্রেণির পদমর্যাদা প্রদান করা যেতে পারে।  

এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয় ব্যতীত এমপিওভুক্তসহ সকল স্তরে শিক্ষক নিয়োগের জন্য আলাদা কমিশন গঠন করা যেতে পারে। এছাড়া জাতীয় শিক্ষানীতি অনুসারে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত প্রাথমিক শিক্ষা বাস্তবায়ন করা জরুরি বলে প্রতীয়মান হয়।
 
প্রশ্নপত্র ফাঁস রোধে সকল পাবলিক পরীক্ষার প্রশ্ন সৃজনশীল ও বর্ণনামূলক হতে হবে বলেও মত দিয়েছে দুদক। এক্ষেত্রে পরীক্ষায় বিদ্যমান বহু নির্বাচনী প্রশ্ন প্রণয়ন পদ্ধতি বাতিল করা যেতে পারে এবং পরীক্ষাকেন্দ্রের সংখ্যা যতদূর সম্ভব কমিয়ে আনতে হবে বলে মনে করছে প্রতিষ্ঠানটি। এজন্য প্রতিটি উপজেলায় সর্বোচ্চ দুইটির বেশি পরীক্ষা কেন্দ্র না ও  পরীক্ষা কেন্দ্রগুলো উপজেলা শহরেই রাখার কথা বলা হয়েছে।
 
এর আগে প্রশ্নফাঁস, নোট-গাইড, কোচিংবাণিজ্য বন্ধ করা এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অবকাঠামো নির্মাণ, এমপিওভুক্তি, নিয়োগ ও বদলির ক্ষেত্রে দুর্নীতি রোখার ব্যাপারে সরকারকে ৩৯ দফা সুপারিশসহ প্রতিবেদন দিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন।
 
গত বছরের ১৩ ডিসেম্বর ‘যে সব শিক্ষক অবৈধভাবে কোচিং করিয়ে সম্পদ অর্জন করেছেন, তাদের এবং কোচিং সেন্টারের মালিকদের অবৈধ সম্পদ খতিয়ে দেখার ঘোষণা দেয় দুর্নীতিবিরোধী সংস্থাটি’।
 
দুদক সচিব মো. শামসুল আরেফিন স্বাক্ষরিত এই সুপারিশমালা সেদিন মন্ত্রিপরিষদ সচিব বরাবর পাঠানো হয়। ‘শিক্ষা সংক্রান্ত প্রাতিষ্ঠানিক টিমের’ অনুসন্ধানী প্রতিবেদনের ভিত্তিতে ওই ৩৯টি সুপারিশ করা হয়।
 
বাংলাদেশ সময়: ১৬৪৯ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৯, ২০১৮
আরএম/জেএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।