ঢাকা, শুক্রবার, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৮ রমজান ১৪৪৫

জাতীয়

ময়লার স্তরে যেতে পারছে না ‘রোড সুইপার’!

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৮৩১ ঘণ্টা, এপ্রিল ২০, ২০১৮
ময়লার স্তরে যেতে পারছে না ‘রোড সুইপার’! রাজধানীর সড়ক পরিষ্কার করছে ‘রোড সুইপার’, ইনসেটে ‘সসার ড্রেন’

ঢাকা: রাজধানীর সড়কে ধুলোবালি-আবর্জনা পরিষ্কার করতে নামানো হয়েছে অত্যাধুনিক ‘রোড সুইপার’। ধুলোবালি থেকে শুরু করে কঠিন বর্জ্য নিমিষেই পরিষ্কারে যন্ত্রটির সক্ষমতা থাকলেও ঢাকার সড়কের ‘অবকাঠামোগত’ কারণে বর্জ্যের স্তরে যেতে পারছে না। এর ফলে ব্যয়বহুল এই যন্ত্রের যথাযথ ব্যবহার নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। তবে সিটি করপোরেশন কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে সড়কের অব্যবস্থাপনাকেই দায়ী করেছে।

‘রোড সুইপার’ যন্ত্রটি চালু করার পর মুহূর্তের মধ্যে রাস্তার ধুলোবালি-বর্জ্য এর পাইপ দিয়ে শুষে নেওয়ার কথা। কিন্তু উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) বিভিন্ন এলাকায় নতুনভাবে নির্মিত ‘সসার ড্রেন’র (ইউশেপ আকৃতির ড্রেন) সঠিক জায়গায় পৌঁছাতে পারছে না যন্ত্রটি।

অন্যদিকে রাজধানীর রাস্তার কিছুদূর পরপর বৈদ্যুতিক খুঁটি ও রাস্তার মধ্যে নির্মাণ সামগ্রী ফেলে রাখায় এর সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত করা কঠিন হয়ে যাচ্ছে।
 
এরইমধ্যে যন্ত্রটি পরীক্ষামূলকভাবে কাজ শুরু করেছে। ফলাফলের উপর নির্ভর করছে এর ‘ভবিষ্যৎ’।

ডিএনসিসির প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা কমডোর আব্দুর রাজ্জাক বাংলানিউজকে বলেন, ঘণবসতিপূর্ণ এলাকা হিসেবে রাজধানীতে গুণগত বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় যেতেই হবে। রোড সুইপারটি পরীক্ষামূলক ভালোই ফল দিচ্ছে। তারপরেও রাস্তায় যেসব প্রতিবন্ধকতা রয়েছে সেগুলো দূর করতে হবে। ঝাড়ু দিয়ে রাস্তার ধূলা পরিপূর্ণভাবে অপসারণ করা যায় না। তাই গুণগত আধু‌নিক যন্ত্র দিয়ে বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় যাওয়ার তাগিদ দেন তিনি।

কাভার্ডভ্যানের মতো দেখতে রোড সুইপারটির ইঞ্জিন দুই ভাগে বিভক্ত। একটির কাজ পথ মাড়ানো। অন্যটির কাজ রাস্তা ঝাড়ু দেওয়া। সুইপার যন্ত্রটির সামনের দিকে রয়েছে দু’টি সাকশন (শোষণ) পাইপ। প্রতিটি পাইপ একসঙ্গে দেড় ফুট ব্যাসের জায়গার ময়লা-আবর্জনা শুষে নিতে পারে। যন্ত্রটি চালু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে রাস্তার ময়লা সাকশন পাইপের মাধ্যমে ওপরে অবস্থিত গার্বেজ ট্যাঙ্কারে জমা হয়। আরেকটি ইঞ্জিনের মধ্যমে গাড়িটি ধীরে ধীরে চলার সঙ্গে সঙ্গে রাস্তার সব ময়লা-আবর্জনা শুষে ট্যাঙ্কে নিয়ে যাবে।  

তবে সিটি করপোরেশনের এই উদ্যোগের সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করে স্থপতি মোবাশ্বের হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, রাজধানীর রাস্তার বাস্তবতার সঙ্গে রোড সুইপার যায় না। যেখানে রাস্তার মাঝখানে ইলেকট্রিক পোল, নির্মাণ সামগ্রী; সেখানে কিভাবে সাক করে রাস্তা পরিষ্কার করবে। এটা অর্থের অপচয় ছাড়া কিছুই না। কিছুদিন পর এটা এমনিতেই কাজে আসবে না।
 
মেশিনটির বিষয়ে আরো জানা যায়, এর ট্যাঙ্কে ছয় টন বর্জ্য ধারণ করতে পারে। এছাড়া একটি পৃথক পানির ট্যাঙ্কও রয়েছে। প্রয়োজনে ট্যাঙ্ক থেকে পৃথক পাইপের মাধ্যমে রাস্তায় পানি ছিটিয়েও রাস্তা পরিষ্কার করা যাবে। একটি রোড সুইপার ৩৬ জন পরিচ্ছন্নতাকর্মীর সমান কাজ করে।

বর্তমানে প্রতিদিন রাত ১২টা থেকে সকাল ৬-৭টা পর্যন্ত যন্ত্রটি চালানো হচ্ছে, যা প্রয়োজনে আরও বাড়ানো সম্ভব।  যন্ত্রটি দিয়ে প্রতিরাতে সাড়ে ৩ টন থেকে সাড়ে ৫ টন ধুলাবালি পরিষ্কার করা হচ্ছে।  এটি আপাতত মানিক মিয়া এভিনিউ, খেজুরবাগান, ক্রিসেন্ট লেক, বিজয় সরণি, ইন্দিরা রোড, গণভবন, সংসদ ভবনের আশপাশে পরিচ্ছন্নতার কাজে ব্যবহৃত হচ্ছে।
 
উন্নতমানের এ রোড সুইপারটির চ্যাসিস জাপানের হিনো কোম্পানির। আর সুইপার মেশিনটি ব্রিটেনের বিখ্যাত জনস্টন কোম্পানির। তিন বছরের কর্মক্ষমতার গ্যারান্টি দেওয়া যন্ত্রটির দাম চার কোটি ৯৫ লাখ টাকা।

জ্বালানিবান্ধব ‘রোড সুইপার’টি পরিচালনার জন্য থাইল্যান্ডের একটি টেকনিক্যাল টিম তিনজনকে প্রশিক্ষণ দিয়েছে বলেও জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

জানা যায়, পরিবেশ অধিদপ্তরের ‘ক্লাইমেট চেঞ্জ ট্রাস্ট ফান্ড থ্রি-ইয়ার’ নামক একটি প্রকল্পের অধীনে ২০১২ সালে স্বল্প ক্ষমতাসম্পন্ন ছয়টি সুইপার মেশিন আমদানি করা হয়। কিন্তু ব্যবহার করতে গিয়ে বিকল হয়ে যাওয়ায় সেগুলো আর ‘সচল’ করা সম্ভব হয়নি।
 
বাংলাদেশ সময়: ১৪২৮ ঘণ্টা, এপ্রিল ২০, ২০১৮
এসএম/জেডএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।