চলতি মাসে কালবৈশাখী ঝড় হলেও গোটা মৌসুমে আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় তরমুজের ফলন ভালো হয়েছে বলে জানিয়েছেন কৃষকরা।
ফলন ভালো হওয়ায় স্থানীয় চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে পাঠানো হচ্ছে উপকূলীয় জেলা পটুয়াখালীর তরমুজ।
স্থানীয় কৃষকরা জানান, বেলে-দোআঁশ মাটিতে তরমুজ চাষের জন্য বেশ উপযোগী। তাই পটুয়াখালী জেলার উপকূলীয় উপজেলাগুলোতে এর চাষ ভালো হয়। জেলার বিভিন্ন উপজেলায় এবার জাম্বু জাগুয়ার, বিগ ফ্যামিলি, সুইট ড্রাগন, সুগার বেবি ও ব্লাক ডায়মন্ড নামে ৫ ধরনের তরমুজ চাষ হয়েছে। যার ফলন ভালো হওয়ার পাশাপাশি বাজার দর ভালো থাকায় কৃষকের মুখে হাসি ফুটেছে।
এদিকে ব্যবসায়ীরা জানান, পাইকার থেকে আড়তদার ও খুচরা বাজারসহ সব জায়গাতেই গতবছরের থেকে এ বছর আকার আকৃতি ভেদে তরমুজের ভালো দর পাওয়া যাচ্ছে। খুচরা বাজারে ১০০ টাকা থেকে শুরু করে ৩০০ টাকা পর্যন্ত তরমুজের দর পাওয়া যাচ্ছে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর বরিশাল অঞ্চলের হিসাব অনুযায়ী এ বছর পটুয়াখালী জেলায় ৮টি উপজেলার মধ্যে একমাত্র দুমকি উপজেলা ছাড়া বাকি ৭টি উপজেলায় ১৩ হাজার ৭১৮ হেক্টর জমিতে তরমুজ আবাদ করা হয়েছে। এরমধ্যে সবচেয়ে বেশি তরমুজ আবাদ হয়েছে রাঙ্গাবালী উপজেলায়। এ উপজেলায় ৮ হাজার ৫০০ হেক্টর জমিতে তরমুজ আবাদ করা হয়। এছাড়া জেলার গলাচিপায় ৪ হাজার হেক্টর, কলাপাড়ায় ৫১৫ হেক্টর, দশমিনায় ৪০০ হেক্টর, বাউফলে ২৭৫ হেক্টর, পটুয়াখালী সদরে ১৮ হেক্টর ও মির্জাগঞ্জে ৫ হেক্টর জমিতে তরমুজ আবাদ করা হয়।
কলাপাড়া উপজেলার তরমুজ চাষি ফরিদ মিয়া জানান, এক একর জমিতে তরমুজ চাষ করেছেন তিনি। নিয়মানুযায়ী এর পরিচর্যাও করেছেন। আবহাওয়া ভালো থাকায় তরমুজের এবার বাম্পার ফলন হয়েছে।
তিনি বলেন, চলতি মাসে বেশ কয়েকবার কালবৈশাখী ঝড় হলেও তরমুজ ক্ষেতে এর কোনো প্রভাব পড়েনি। ইতোমধ্যে তিনি লাখ টাকার ওপরে তরমুজ বিক্রি করেছে বলেও জানান।
রাঙ্গাবালী উপজেলার কাজির হাওলা গ্রামের তরমুজ চাষি আব্দুল করিম হাওলাদার বলেন, রাঙ্গাবালীর তরমুজ খেতে সুস্বাদু, আকাড় বড় ও রং লাল টুকটুকে হওয়ায় রাজধানীর ক্রেতাদের কাছে খুবই পরিচিতি লাভ করেছে এ তরমুজ। একারণেই এখানকার তরমুজের চাহিদা বেশি। কদর বেশি থাকায় এলাকার মানুষের এখন প্রধান অর্থকরী ফসল তরমুজকেই বলা যায়। দিনে দিনে তাই বাড়ছে তরমুজ চাষির সংখ্যা।
চলতি তরমুজ মৌসুমে উপজেলার পাঁচটি ইউনিয়নে ৮ হাজার ৫০০ হেক্টর জমিতে প্রায় ৫ হাজার চাষি তরমুজ আবাদ করেছে বলে জানিয়েছেন রাঙ্গাবালী উপজেলা কৃষি অফিস। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় প্রতি হেক্টরে ৩৫ মেট্রিকটন হারে ২ লাখ ৯৭ হাজার ৫শ’ মেট্রিকটন ফলন উৎপাদন হওয়ার আশা করা হচ্ছে।
এ ব্যাপারে রাঙ্গাবালী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা (অতিরিক্ত দায়িত্বে) আব্দুল মান্নান বাংলানিউজকে বলেন, রাঙ্গাবালীর জমি তরমুজ আবাদে উপযোগী। একারণে ফলন ভালো হওয়ায় চাষিদের তরমুজ আবাদে আগ্রহ বাড়ছে।
জেলা কৃষি কর্মকর্তা হৃদয়েশ্বর দত্ত বাংলানিউজকে বলেন, এবার পটুয়াখালীতে তরমুজের বাম্পার ফলন হয়েছে। তরমুজের বাম্পার ফলন ও ভালো বাজার দর পাওয়ার জন্য পটুয়াখালী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর চাষিদের করণীয় সব পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছে।
বাংলাদেশ সময়: ১২২৭ ঘণ্টা, এপ্রিল ২০, ২০১৮
এমএস/আরআইএস/