ঢাকা, বুধবার, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

বিলোনিয়া স্থলবন্দরে অবকাঠামোর অভাবে কার্যক্রমে স্থবিরতা

সোলায়মান হাজারী ডালিম, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫৩৩ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৯, ২০১৮
বিলোনিয়া স্থলবন্দরে অবকাঠামোর অভাবে কার্যক্রমে স্থবিরতা বিলোনিয়া স্থলবন্দর, ছবি: বাংলানিউজ

ফেনী: ফেনী জেলার পরশুরাম উপজেলায় ২০০৯ সালের ৪ অক্টোবরে বাংলাদেশ-ভারত দুই দেশের মধ্যে আমাদানি-রপ্তানি সহজতর ও বেগবান করতে শুরু হয় বিলোনিয়া স্থলবন্দরের কার্যক্রাম। শুরুর সময়টাতে এ স্থলবন্দর নিয়ে বেশ আগ্রহও ছিল এপার-ওপারের ব্যবসায়ীদের। 

বেশ ঘটা করে কার্যকম শুরু হলেও পর্যাপ্ত অবকাঠামোর অভাব, অবকাঠামোর উন্নয়ন না করা, লোকবলের অভাব, শেড, গুদাম ও মালামাল পরিমাপের যন্ত্র সংকট ও ওয়ারহাউজ নির্মাণ না করাসহ বিভিন্ন সমস্যা থেকেই যায়। একারণে ব্যবসায়ীরা এ বন্দর নিয়ে দিনকে দিন আগ্রহ হারিয়ে ফেলতে শুরু করেন।

দীর্ঘ ৯ বছরে যেখানে বন্দরটির অনেক দূর এগিয়ে যাওয়ার কথা থাকলেও নানাবিধ সংকটের কারণে এবং পূর্ণাঙ্গ ও পর্যাপ্ত অবকাঠামোর অভাবে বন্দরের কার্যকমে গতি আসেনি। উল্টো দেখা দিয়েছে স্থবিরতা।
সম্প্রতি বন্দরটি পরিদর্শন করতে আসে ভারত-বাংলাদেশের দু’দল সংবাদকর্মী, ছবি: বাংলানিউজতবে হতাশাই শেষ কথা নয়। সরকার চাইলেই নেতিবাচক অবস্থা কাটিয়ে ওঠা সম্ভব। ব্যবসায়ীরাও মনে করছেন, প্রয়োজনীয় অবকাঠামো নির্মাণ এবং সুযোগ সুবিধা বাড়ানো হলে বন্দরটি পুরো মাত্রায় সচল হয়ে উঠবে এবং দুই দেশের বাণিজ্য প্রসারের গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে।  

শুক্রবার (২০ এপ্রিল) বন্দরটির উন্নয়নকাজের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করতে আসছেন সরকারের নৌ-পরিবহন মন্ত্রী শাজাহান খান। মন্ত্রীর এ সফর বন্দরের কার্যকমকে অনেক দূর এগিয়ে নেবেন বলে আশা করছেন ব্যবসায়ীরা।  

ফেনী চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি আইনুল কবির শামীম বলেন, প্রতিষ্ঠার নয় বছর পেরিয়ে গেলেও বন্দরটিতে ব্যবসা-বাণিজ্য করার মত তেমন কোনো অবকাঠামো নেই। ব্যবসায়ীরা তাদের মালামাল এনে রাখার মত কোনো শেড, গুদাম নেই। রাস্তাঘাটের অবস্থাও খারাপ। সব মিলিয়ে এ বন্দরের প্রতি ব্যবসায়ীদের তেমন কোনো আগ্রহ নেই।  

আইনুল করিম শামীম আরো বলেন, বন্দরে যদি পর্যাপ্ত গুদাম, শেডসহ অবকাঠামো তৈরি করা হয়, রাস্তাগুলো চওড়া করা হয় এবং ফেনী-বিলোনিয়া রেল লাইনটি ফের সচল করা যায় তাহলে এ বন্দরের কার্যক্রমে গতি আসবে। ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসার ঘটবে। এব্যাপারে মন্ত্রীর সফর ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে এমন আশা করাই যায়। আমরা সে আশাতেই বুক বেঁধে আছি।
বন্দরে প্রবেশপথ, ছবি: বাংলানিউজ
বন্দরটিতে গিয়ে দেখা যায়, অবকাঠামো সংকট, জমি অধিগ্রহণে জটিলতা, আমদানি-রপ্তানিকারকদের হয়রানির শিকার হওয়া, ভারতের কাস্টমস কর্মকর্তাদের অসহযোগিতাসহ নানা সমস্যা। এসবের ফলে ব্যবসায়ীরা মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন এই বন্দর থেকে। নানামুখী সমস্যার কারণে কোনো রকমে ঢিমেতালে চলছে এর কার্যক্রম।  

বিলোনিয়া স্থলবন্দরের কোনো কাস্টমস অফিস নেই। পুরাতন একটি পরিত্যক্ত ভবনে মাত্র একজন কর্মকর্তা ও একজন অফিস পিয়ন দিয়েই চলে বিলোনিয়া শুল্ক স্টেশনের কার্যক্রম। তাদের অভিযোগ, এখানে শুধু রপ্তানি কার্যক্রম চলছে। আমদানির সুযোগ ও চাহিদা থাকলেও ভারতের সরকার ও কাস্টম কর্মকর্তাদের নানান বাধার কারণে আমদানি করা যাচ্ছে না।  

কয়েকজন ব্যবসায়ীর সাথে কথা বলে জানা যায়, এ বন্দর দিয়ে বাংলাদেশ থেকে রপ্তানি হচ্ছে সিমেন্ট, ইট, পাথর এবং শুটকি মাছ। এখানে সিঅ্যান্ডএফ অনুমোদিত প্রায় ৮টি ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান এসব পণ্য রপ্তানি করছে।  

এদিকে ভারত থেকে গবাদিপশু, মাছের পোনা, তাজা ফলমূল, গাছ গাছালির বীজ, কয়লা, গম, চুনা পাথর, পেঁয়াজ, মরিচ, হলুদ ও আদা আমদানির অনুমোদন রয়েছে। তবে বিলোনিয়া স্থলবন্দরের অবকাঠামোগত উন্নয়ন না হওয়ায় কোনো পণ্য পাঠাচ্ছে না ভারত। অবকাঠামোর দিক থেকে এই স্থলবন্দর এখনো এখনও চলছে খুঁড়িয়ে। একারণে ভারতের ব্যবসায়ীরা এই বন্দর দিয়ে বাণিজ্য করতে মোটেই আগ্রহী হতে পারছেন না।

বন্দরের শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি মোঃ ইব্রাহিম জানান, এ বন্দরে প্রতিদিন প্রায় অর্ধ শতাধিক ট্রাক থেকে পণ্য লোড-আনলোড করা হয়। অব্যবস্থাপনা ও নানাবিধ ভোগান্তির কারণে অতিরিক্ত সময় ব্যয় হয়। নাজুক রাস্তাঘাটের কারণে মালবাহী ট্রাকের চালকরাও এ বন্দরে আসতে চান না। শ্রমিকরাও পাচ্ছেন না ন্যায্য পারিশ্রমিক। এছাড়া আবাসন সমস্যা তো আছেই। এসব কারণে কিছুদিন কাজ করার পর শ্রমিকরা অন্যত্র চলে যান।

বন্দরের রাজস্ব কর্মকর্তা জুবায়েল খান বলেন ২০১৩-১৪ অর্থবছরে ৪৬১০৬৭১.০৬ মার্কিন ডলার, ২০১৪-১৫ অর্থবছরে ৫৮৭১৬০৬.৭২ মার্কিন ডলার, ২০১৫-১৬ অর্থবছরে ৫৬১৪২২২.০৮ মার্কিন ডলার, ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ৬৫৪৩৪৬৭.৪০ মার্কিন ডলার, সর্বশেষ ২০১৭ থেকে ২০১৮ এর মার্চে ৪৩৫৯৬৪১ মার্কিন ডলার মূল্যের দ্রব্য রপ্তানি হয়েছে।  

২০১৬-১৭ অর্থ বছরে ভ্রমণ কর আদায় হয়েছে ১০৯১৫০০ টাকা, ২০১৫-১৬ অর্থবছরে ১১৯২৫০০ টাকা ও ২০১৭ থেকে মার্চে ১৩৯৩৫০০ টাকা আদায় হয়েছে। এ রাজস্ব কর্মকর্তা জানান পূর্ণাঙ্গ অবকাঠামো থাকলে আরো অনেক বেশি উপকৃত হতে পারতো বাংলাদেশ।  

বাংলাদেশ সময়: ২১২৩ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৯, ২০১৮ 
এসএইচডি/জেএম 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।