ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

মশা নিধনে সিসিকের ‘আইওয়াশ’

নাসির উদ্দিন, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৩২৩ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৯, ২০১৮
মশা নিধনে সিসিকের ‘আইওয়াশ’ মশার যন্ত্রণায় অতিষ্ঠ নগরবাসী। ছবি: আবু বকর

সিলেট: সিলেট মহানগরে সিটি করপোরেশনের মশক নিধন কার্যক্রম শেষ হলেও কমেনি উপদ্রুপ। ফলে মশার যন্ত্রণায় অতিষ্ঠ নগরবাসী।

ভুক্তভোগীরা বলছেন, মশক নিধনের নামে ‘আইওয়াশ’ চালিয়েছে সিটি করপোরেশন। মশার প্রজনন বিস্তার ঘটে-এমন জায়গা বাদ দিয়েই শেষ হয়েছে ওষুধ ছিটানো কার্যক্রম।

 

মশার যন্ত্রণা থেকে ‍মুক্তি পেতে প্রয়োজনীয় উদ্যোগের দাবি জানিয়েছেন তারা।     

সিসিকের পরিকল্পনা অনুযায়ী, ২৭টি ওয়ার্ডে একযোগে ছড়া, স্ল্যাব, ড্রেন, আন্ডারগ্রাউন্ড ড্রেন, ডোবা, হাউজ, সেফটি ট্যাংক ও জঙ্গলে এ কার্যক্রম চালানোর কথা। কিন্তু এই কার্যক্রম সঠিকভাবে মাঠ পর্যায়ে হয়নি বলে অভিযোগ উঠেছে।  

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সিলেট সিটি করপোরেশনের (সিসিক) এক কর্মকর্তা বাংলানিউজকে বলেন, মশার প্রজনন রোধে সব ওয়ার্ডে একযোগে কার্যক্রম চালাতে হয়। নইলে প্রজনন বিস্তার রোধ সম্ভব না। এক সঙ্গে কার্যক্রম না চালানোও এক ধরনের ছলছাতুরি।  

সিলেট নগরের বিভিন্ন এলাকার বাসিন্দারা জানান, শুধুমাত্র রাস্তার পাশের খাল কিংবা নালায় মশার ওষুধ ছিটানো হয়েছে। যেসব স্থানে মশার প্রজনন হয় সেখানে কিংবা অলিগলিতে বদ্ধ বা মজা পুকুরে কোনো ধরনের ওষুধ ছিটানো হয়নি।  

নগরের নয়াসড়কের বাসিন্দা কামাল হোসেন জনি বলেন, মশক নিধন কার্যক্রম শেষ হলেও মশার উপদ্রুপ কমেনি। বিভিন্ন সময় বলা হলেও সিসিকের মশার ওষুধ ছিটানো দেখিনি।  

‘মশার কামড় দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই চুলকানি শুরু হয়। ক্ষতিকারক জেনেও মানুষ বাধ্য হয়ে মশার যন্ত্রণা থেকে রেহাই পেতে কয়েল ব্যবহার করছেন; যদিও মশা উৎপাত কমছে না। এতে নানা ধরনের অসুখের আশঙ্কা বেড়ে যায়। ’

নগরের গোয়াইটুলা এলাকার বাসিন্দা ব্যবসায়ী হেলাল আহমদ বলেন, মশার ওষুধ কেবল প্রধান সড়কের আশপাশে ছিটানো হয়েছে। বাসা-বাড়ির অলিগলির ড্রেনে ছিটানো হয়নি। যে কারণে মশার উপদ্রুপ কমেনি।

এদিকে মশার উপদ্রবে শহরে কয়েলের চাহিদা বেড়ে গেছে বলে জানান রিকাবিবাজারের আব্দুল গণি স্টোরের ব্যবসায়ী শাহিন আহমদ।  

দুইদিন আগে সিসিকের মশক নিধন কার্যক্রম শেষ হলেও সরেজমিন দেখা যায়, নগরের অলিগলির ড্রেন, ডোবায় মশার প্রজনন ঘটছে। এ কারণে মশাবাহিত রোগের প্রাদুর্ভাবও বাড়ছে।

এ বিষয়ে সিলেটের সিভিল সার্জন ডা. হিমাংশু লাল রায় বাংলানিউজকে বলেন, মশাবাহিত রোগ ডেঙ্গু, চিকুনগুনিয়ার বাহক এডিস মশা। সিলেটে এসব রোগের ব্যাপক প্রাদুর্ভাব না থাকলেও হতে কতক্ষণ? এই ভয়াবহতার বাইরে বলতে পারবো না।  
মশার যন্ত্রণায় অতিষ্ঠ নগরবাসী
‘এ ক্ষেত্রে জনসচেনতা প্রয়োজন। পাশাপাশি সিসিকের প্রধান কাজ নালা-নর্দমা পরিষ্কার রাখা। যাতে মশার প্রজনন বিস্তার না ঘটে। তাই এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেওয়া জরুরি। ’

সিসিক সূত্র জানায়, গত ২০১৬-১৭ অর্থবছরের ৩০০ লিটার ওষুধ আগে থেকেই ছিল। সেই ওষুধ ছাড়াও মশা নিয়ন্ত্রণে ১০ লাখ টাকার ওষুধ কেনা হয়। এর বাইরে আরও ৪ লাখ টাকার ওষুধ স্পট কোটেশনে কেনা হয়েছে-দেখিয়েছে সিসিক। যদিও কাজের কাজ কিছুই হয়নি।  

এ বিষয়ে সিসিকের সহকারী স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ধ্রুব পুরকায়স্ত বাংলানিউজকে বলেন, দরপত্রের মাধ্যমে ১০ লাখ টাকার ওষুধ কেনা হয়েছে। ৪ লাখ টাকার ওষুধ কেনা হয় স্পট কোটেশনে। এর মধ্যে ১ হাজার ১০০ লিটার ওষুধ নগরের ২৭টি ওয়ার্ডে ছিটানো হয়।  

যোগাযোগ করা হলে সিসিকের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. মো. জাহিদুল ইসলাম বলেন, গত ২৩ মার্চ থেকে ১৫ এপ্রিল পর্যন্ত মশা নিধনে ওষুধ ছিটানো হয়। প্রধান সড়কগুলোর আশপাশে ও উড়ন্ত মশা নিধনে ফগার মেশিন ব্যবহার করা হয়েছে।  

আর স্প্রে মেশিন দিয়ে ওয়ার্ডগুলোতে মশার ওষুধ ছিটানো হয়েছে বলে দাবি করেন তিনি।

এ বিষয়ে সিসিক মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী বাংলানিউজকে বলেন, সব ওয়ার্ডে কাউন্সিলরদের তত্ত্বাবধানে মশার ওষুধ ছিটানো হয়েছে। বাসা-বাড়ির আনাচে-কানাচে ডোবা, নালা, নর্দমাসহ সব জায়গায় ওষুধ ছিটানোর কথা।  

যদি কোনো এলাকা থেকে অনিয়মের অভিযোগ আসে কিংবা সঠিকভাবে ছিটানো না হয় সেক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানান তিনি।  
 
বাংলাদেশ সময়: ০৯২০ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৯, ২০১৮
এনইউ/এমএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।