ঢাকা, বুধবার, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

দুই বছরেও শেষ হয়নি এক কিলোমিটার রাস্তার কাজ

খোরশেদ আলম সাগর, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮২৬ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৮, ২০১৮
দুই বছরেও শেষ হয়নি এক কিলোমিটার রাস্তার কাজ রাস্তা পাকা করণের কাজ চলছে/ ছবি: বাংলানিউজ

লালমনিরহাট: দুই বছরেও এক কিলোমিটার রাস্তা পাকা করণের কাজ শেষ করতে পারেনি একটি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান। ফলে প্রতি নিয়ত ঘটছে দুর্ঘটনা। এতে জনসাধারণের ভোগান্তি পৌঁছেছে চরমে।

পায়ের আঘাতেই মাটিতে মিশে যাচ্ছে রাস্তায় বিছানো ইট। কাজের গতি ও মান নিয়ে ব্যাপক অভিযোগ রয়েছে এলাকাবাসীর।

পাঁচ বার চিঠি দিয়েও কাজের মান বা গতি বাড়াতে পারেনি প্রকল্প বাস্তবায়নকারী লালমনিরহাট সদর উপজেলা প্রকৌশল বিভাগ।

সদর উপজেলা প্রকৌশলীর কার্যালয় সূত্র জানা যায়, সদর উপজেলার পঞ্চগ্রাম ইউনিয়নের ঐতিহ্যবাহী সিঁন্দুরমতি এলাকার যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নকল্পে ওই ইউনিয়নের  বাবুর কালীরপাঠ থেকে সিঁন্দুরমতি বাজার পর্যন্ত গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পে এক কিলোমিটার রাস্তা পাকা করার জন্য ২০১৬/১৭ অর্থ বছরে ৫৬ লাখ ৫৭ হাজার ১৮০ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। কাজটি বাস্তবায়নে দরপত্র আহ্বান করে উপজেলা প্রকৌশল বিভাগ।

দরপত্র অনুযায়ী সর্বোচ্চ কমিশনে ৫২ লাখ এক হাজার ৫০৮ টাকায় কাজ করতে চুক্তিবদ্ধ হন কুড়িগ্রামের মোস্তফা ট্রেডার্স নামের একটি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান। শুরুতে নিম্নমানের কাজের অভিযোগে সতর্ক করে দিয়ে নিম্নমানের ইট বালু সড়িয়ে দেয় প্রকৌশল বিভাগ। পুনরায় নিম্নমানের কাজের অভিযোগে উচ্চতর তদন্ত টিম নামে কাজটি পরিদর্শনে। এভাবে শেষ হয় চুক্তিকালীন এক বছর মেয়াদ। রাস্তা পাকা করণের কাজ চলছে/ ছবি: বাংলানিউজ দীর্ঘদিন কাজ বন্ধ রেখে এক বছর মেয়াদ বাড়িয়ে নেন ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান। মেয়াদ অনুযায়ী চলতি বছরের জুনের মধ্যে কাজ শেষ করার কথা থাকলেও এখন পর্যন্ত ৫০ শতাংশ কাজ শেষ করতে পারেননি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানটি। জনদুর্ভোগ লাঘবে কাজের গতি ও গুণগত মান বাড়াতে দুই বছরে পাঁচবার চিঠি দেওয়া হলেও কোনো কাজে আসেনি বলে উপজেলা প্রকৌশলীর দাবি।  

স্থানীয়রা জানান, রাস্তা কেটে কয়েক মাস ফেলে রাখা হয়। এরপর নিম্নমানের বড় বড় খোয়া ও বালুর পরিবর্তে কাদামাটি ফেলে রোলার না দিয়ে আরো কয়েক মাস ফেলে রাখা হয়। ফলে পথচারীরা এ রাস্তায় চলাচল করতে গিয়ে প্রতিদিনই দুর্ঘটনার শিকার হন। রাস্তায় ব্যবহৃত খোয়া পা দিয়ে চেপে ধরলে মাটির সঙ্গে মিশে যাচ্ছে। এমন ইটের তৈরি এ রাস্তার স্থায়িত্ব নিয়ে জনমনে প্রশ্ন উঠেছে। উচ্চতর তদন্ত করে রাস্তাটি উপযুক্ত ভাবে নির্মাণ করে জনদুর্ভোগ থেকে মুক্তি দিতে এলজিইডি লালমনিরহাটের প্রধান নির্বাহী প্রকৌশলী বরাবরে স্থানীয়রা লিখিত আবেদন করেছেন।

সিঁন্দুরমতি এলাকার বাসিন্দা স্ট্যাম্প বিক্রেতা আমিনুর রহমান বাংলানিউজকে  জানান, কাজে গতি নেই বললেই চলে। খোয়ার ডাম্পিং ছয় ইঞ্চির স্থলে দেওয়া হয়েছে আড়াই থেকে তিন ইঞ্চি। রাস্তাটি ১০ ফুট প্রস্থের স্থলে করা হচ্ছে নয় ফুট।  

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সদর উপজেলা প্রকৌশল কার্যালয়ের এক কর্মকর্তা জানান, এ কাজে ব্যবহৃত সরঞ্জামের ৭০ ভাগই নিম্নমানের। কিন্তু ঠিকাদার বাইরের জেলার হওয়ায় তেমন কোনো পদক্ষেপ নিতে পারছেন না তারা।

পঞ্চগ্রাম ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান দেলওয়ার হোসেন মাস্টার বাংলানিউজকে জানান, পুরো উত্তরাঞ্চলের হিন্দু সম্প্রদায় পুণ্যস্নানে সিঁন্দুরমতি আসেন। এমন একটি জন গুরুত্বপূর্ণ সড়কে নির্মাণকাজে শুধু ধীরগতিই নয়, কাজের মান একেবারেই নিম্নমানের।  

এ বিষয়ে উপজেলা প্রকৌশল কার্যালয় ও উপজেলা সমন্বয় কমিটিতে আলোচনা করা হয়েছে। কিন্তু কোনো কাজ হয়নি।

ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানটির প্রোপাইটার গোলাম মোস্তফা বাংলানিউজকে জানান, তদন্ত করে যতটুকু কাজ পাবে, ততটুকু বিল নেওয়া হবে। বর্ধিত মেয়াদের মধ্যে নির্মাণকাজ শেষ এবং কাজের মান সঠিক রয়েছে বলে তিনি দাবি করেন।  

সদর উপজেলা প্রকৌশলী মোখলেছুর রহমান বাংলানিউজকে জানান, জনদুর্ভোগ লাঘবে কাজের মান ও গতি বাড়াতে ঠিকাদারকে পাঁচবার চিঠি দেওয়া হয়েছে। সর্বোচ্চ কমিশনে কাজ নেওয়ার পরও যেন লোকসান না হয় সেজন্য ঠিকাদার এমন গড়িমসি করছেন। এখন পর্যন্ত অর্ধেক বিল দেওয়া বাকী রয়েছে। তবে কাজ বুঝে ‍না  নিয়ে বাকী বিল দেওয়া হচ্ছে না বলে জানান তিনি।

বাংলাদেশ সময়: ০০২৩ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৯, ২০১৮ 
আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
welcome-ad