বুধবার (১৮ এপ্রিল) দুপুরে লন্ডনের গিল্ড হলে কমনওয়েলথ বিজনেস ফোরাম আয়োজিত ‘এশিয়া নেতাদের গোলটেবিল বৈঠক: এশিয়া কি তার অগ্রগতি ধরতে রাখতে পারবে?’ শীর্ষক অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী এ আহ্বান জানান।
শেখ হাসিনা বলেন, এশিয়ার দেশগুলোর আরও ব্যাপক প্রবৃদ্ধি প্রয়োজন, শুধু একটা দেশের মধ্যে নয়, গোটা এশিয়া অঞ্চলে প্রয়োজন।
তিনি বলেন, এশিয়ার দেশগুলো বিশ্বকে আরও নিরাপদ ও সমৃদ্ধ ভবিষ্যতের পথ দেখাতে পারে, যেখানে অর্থনীতি হবে আরও স্থিতিশীল এবং দ্রুত বিকাশমান।
বিশাল শ্রমশক্তি ও বাজার, প্রচুর প্রাকৃতিক সম্পদের প্রাচুর্য্যের কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, অতীতে বিশ্বকে নেতৃত্ব দিয়েছে এশিয়া, ভবিষ্যতেও এশিয়াই নেতৃত্ব দেবে। কারণ এশিয়ার মানুষগুলোর আছে সহিষ্ণুতা, কঠোর পরিশ্রম করার ক্ষমতা, মেধা এবং দৃঢ় আশাবাদ।
শেখ হাসিনা বলেন, গত সাত বছরে এশিয়ার অর্জন অনেক। বিশ্বের অনেক অর্থনীতিবিদ এবং পণ্ডিত এশিয়ার অর্থনৈতিক সফলতাকে ‘মিরাকল’ হিসেবে উল্লেখ করেছেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, এশিয়ার দেশগুলোকে সতর্কভাবে আশাবাদী হতে হবে। এশিয়াকে তার নিজস্ব চেতনা ধরে রাখতে হবে। কেননা বিশ্বায়নের দ্রুত পরিবর্তন, ডিজিটাল ও স্যোশাল মিডিয়া মানুষকে যেরকম পরস্পরের কাছে আনে একইভাবে কিছু মানুষকে বিচ্ছিন্ন করে দেয়।
তিনি বলেন, সন্ত্রাস, সংঘাত, পুঁজিবাদ এবং অন্যান্য আহুত চ্যালেঞ্জ স্থিতিশীলতার জন্য হুমকি। আমাদের পদে পদে বাধা ও বিপদ আসতে পারে।
শেখ হাসিনা বলেন, অর্থনৈতিক উন্নয়ন যেমন সমৃদ্ধি নিয়ে আসে, তেমনি এটি বৈষম্যও সৃষ্টি করে।
তরুণ, নারীসহ সব নাগরিকের জন্য বেশি করে বিনিয়োগ করার ওপর গুরুত্বারোপ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের চেতনা ও সমন্বিত মেধা দিয়ে এশিয়ার চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবেলা করতে হবে।
গবেষণা, উদ্ভাবন ও প্রযুক্তি ভবিষ্যতের এশিয়াকে পরিচালনা করবে, এজন্য দক্ষ জনশক্তি গড়তে প্রশিক্ষণের ওপর গুরুত্বারোপ করেন প্রধানমন্ত্রী।
অনুষ্ঠানের ‘বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বৃদ্ধি এবং উদ্ভাবনী সহযোগিতা বিষয়ে কমনওয়েলথের ভূমিকা’ শীর্ষক অন্য একটি অংশে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এ সংস্থাটিকে অবশ্যই আন্তঃকমনওয়েলথ বাণিজ্য, বিনিয়োগ বাড়াতে এবং বিপুলসংখ্যক যুব জনশক্তির সৃজনশীল শক্তিকে কাজে লাগাতে সক্ষম হতে হবে।
কমনওয়েলথভুক্ত দেশগুলোতে ৩০ বছরের কম ৬০ শতাংশ জনশক্তিকে বিশাল সম্পদ হিসেবে উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী।
শেখ হাসিনা এ বিশাল সম্পদকে কাজে লাগানো, শ্রমবাজার সৃষ্টি, বাণিজ্য বাজার উন্মুক্ত রাখা, স্বচ্ছতার ওপর গুরুত্বারোপ করার আহ্বান জানান নেতাদের।
এ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী কমনওয়েলথ দেশগুলোর মধ্যে আন্তঃবাণিজ্য ও বিনিয়োগ এবং উদ্ভাবনী সহযোগিতা বাড়াতে বেশ কয়েকটি প্রস্তাব দেন।
তিনি কমনওয়েলথভুক্ত দেশগুলোর খাতভিত্তিক ও শিল্পায়নের সম্ভাবনা ও উৎপাদনশীলতা, বিনিয়োগ নীতি এবং কৌশল, বিনিয়োগ সুবিধার ওপর সমীক্ষা ও পুনর্মূল্যায়ন করার প্রস্তাব দেন।
বাণিজ্য উপকরণ ও সুবিধা উন্নতকরণ এবং অশুল্ক বাধা হ্রাস, অবকাঠামো সুবিধা বৃদ্ধি, মুক্তবাজার সেবা এবং যোগাযোগ বৃদ্ধির প্রস্তাব দেন প্রধানমন্ত্রী।
পাশাপাশি তিনি প্রযুক্তি, সক্ষমতা বৃদ্ধি, প্রাতিষ্ঠানিক সহযোগিতা, ক্ষুদ্র ঋণ এবং ব্লু ইকোনমির উন্নয়নে ফান্ড গঠনের প্রস্তাবও দেন।
অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন ইন্ডিয়ার স্ট্যান্ডার্ড চ্যার্টার্ডের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা জারিন দারুওয়ালা।
অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের পক্ষে আরও উপস্থিত ছিলেন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম, এসডিজি বিষয়ক মূখ্য সমন্বয়ক আবুল কালাম আজাদ।
বাংলাদেশ সময়: ১৯৩১ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৮, ২০১৮
এমইউএম/এসএইচ