ঢাকা, শুক্রবার, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

২৫ হাজার টাকায় গোল্ডেন এ-প্লাস!

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩২১ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৮, ২০১৮
২৫ হাজার টাকায় গোল্ডেন এ-প্লাস! র‍্যাব-৯ এর সংবাদ সম্মেলন ও আটক চারজন

সিলেট: ‘মাত্র ২৫ হাজার টাকায় মিলতো গোল্ডেন এ-প্লাস। সাড়ে ১২ হাজার টাকায় সাধারণ গ্রেড।’ অবিশ্বাস্য! এই চক্রের সদস্য চার তরুণ। তাদের মূল হুতা শওকত হোসেন। তথ্য প্রযুক্তি বিষারদ হলেও স্কুলের গন্ডি পেরুতে পারেনি সে।

এই কিশোর দল প্রশ্নপত্র ফাঁসই করেনি, প্রশ্নপত্র বিক্রি ও চুক্তিতে পরীক্ষার ফলাফল পরিবর্তনের সঙ্গেও জড়িত থাকার প্রমাণও পেয়েছে র‍্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র‍্যাব) সদস্যরা।

** শ্রীমঙ্গলে প্রশ্ন ফাঁসচক্রের ৪ সদস্য আটক

আটকরা হলো- শ্রীমঙ্গলের বিরাইমপুর গ্রামের সাংবাদিক আলী হোসেনের বাড়ির ভাড়াটিয়া মুকবুল আলীর ছেলে মো. শওকত হোসেন (১৯), তার সহোদর মো. সৌরব হোসেন (২১), উপজেলার শ্যামলী আবাসিক এলাকার মুজিবুর রহমানের বাসার ভাড়াটিয়া আব্দুল মালেকের ছেলে মো. আব্দুল কাদির (১৭) এবং হবিগঞ্জের শায়েস্তাগঞ্জ উপজেলার শেরপুর গ্রামের কুদ্দুস মিয়ার ছেলে হৃদয় মিয়া ( ১৭)।

বুধবার (১৮ এপ্রিল) দুপুর ১টার দিকে সিলেটে আটকদের নিয়ে এক সংবাদ সম্মেলন করেন র‌্যাব-৯ এর অধিনায়ক লেফটেনেন্ট কর্নেল আলী হায়দার আজাদ।

সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, আটক এই চার যুবক গত এসএসসি পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস করে এবং চলতি এইচএসসি পরীক্ষায় প্রশ্নপত্র ফাঁসের চেষ্টা চালিয়েছিলো। প্রশ্নপত্র কেনাবেচায় তারা সিলেট কেন্দ্রীক নেটওয়ার্ক গড়ে তুলে। বিভিন্ন জনকে প্রস্তাব দেয় প্রশ্নপত্র কেনার। তাদের ব্যবহৃত ওয়েবসাইড নিবিড় পর্যবেক্ষণের পর বেরিয়ে আসে এমন তথ্য। এরই প্রেক্ষিতে মঙ্গলবার (১৭ এপ্রিল) দিনগত রাত ১১টায় র‌্যাব-৯ শ্রীমঙ্গল ক্যাম্পের একটি বিশেষ দল চক্রের চার সদস্যকে আটক করে।

র‍্যাব কর্মকর্তা বলেন, বয়স কম হলেও তথ্য-প্রযুক্তির দিক থেকে যথেষ্ট জ্ঞান রয়েছে শওকতের। যদিও সে নিজেই মাধ্যমিকের গন্ডি পেরোতে পারেনি। তার বাবা পেশায় দারোয়ানের চাকরি করেন। সে দিনভর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পড়ে থেকে এসব করতে শিখেছে। এমনকি বাংলাদেশের অফিসিয়াল সাইডও হ্যাক ছাড়াও সহস্রাধিক ফেসবুক আইড হ্যাক করে নিজে জয়েন্ট করেছে। এভাবে প্রশ্ন ফাঁসকারী গ্রুপের সঙ্গে সম্পর্ক তৈরি করে সে।

একপর্যায়ে তার বড় ভাইকেও এই কাজে জড়িত করে শওকত। আটক অন্যরা তার কাছ থেকে এসএসসির প্রশ্নপত্র নিয়ে বিক্রি করে। এইচএসসির প্রশ্নপত্রও নেয়, যদিও সেগুলো ভুয়া ছিলো। বিকাশে টাকা নিয়ে তারা প্রশ্ন দিতো।

র‌্যাব অধিনায়ক প্রশ্ন ফাঁস চক্রের আরও ভয়াবহ তথ্য উপস্থাপন করে বলেন, আগামী ৬ মে এসএসসি পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশ হওয়ার কথা রয়েছে। সেই পরীক্ষার ফলাফল পরিবর্তন করে ভুয়া ফল পরিবর্তনের চেষ্টা চালাচ্ছিলো তারা। এরমধ্যে ফলাফল পরিবর্তনের কয়েকটা ডেমো ভার্সন তাদের কাছে পওয়া গেছে। জিজ্ঞাসাবাদে তারা জানায়, গ্রেড পরিবর্তন করে গোল্ডেন এ-প্লাসের জন্য ২৫ হাজার ও সাধারণ গ্রেডের জন্য সাড়ে ১২ হাজার টাকার বিনিময়  পরীক্ষার্থীদের ফলাফল পরিবর্তনের প্রস্তাব দেয়।  

তাদের ব্যবহৃত ফেসবুক আইডিতে পাওয়া যায় অনেক পরীক্ষার্থীর সার্টিফিকেট ও মার্কশীট কপি। তাদের মোবাইল ফোন সার্চ করে দেখা যায় ইমো, ম্যাসেঞ্জার, ফেসবুক আইডি, ভাইবারের মাধ্যমে ভুয়া প্রশ্ন অর্থের বিনিময়ে বিক্রি করেছে।

অভিভাবকদের এ ব্যাপারে সচেতন হওয়ার পরামর্শ দিয়ে র‍্যাবের কর্মকর্তা বলেন, আপনার সন্তান একা ও অবসর সময়ে মোবাইল ফোনে কি করছে তা লক্ষ্য রাখুন। নতুবা ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য এটা হুমকীর কারণ হয়ে দাঁড়াবে।

বাংলাদেশ সময়: ১৯২১ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৮, ২০১৮
এনইউ/জিপি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।