বাংলানিউজের কাছে এভাবেই কথাগুলো বলছিলেন, রাজধানীতে দুই বাসের রেষারেষিতে প্রাণ হারানো সরকারি তিতুমীর কলেজের স্নাতক (পাস) তৃতীয় বর্ষের ছাত্র রাজীব হোসেনের ছোট দুই ভাই হাফেজ মো. মেহেদী হাসান (১৫) ও হাফেজ মো. আব্দুল্লাহ (১৪)।
কান্নাজড়িত কণ্ঠে মেহেদী হাসান বলেন, মা-বাবার স্মৃতি আমাদের দুই ভাইয়ের মনে নেই।
‘দুর্ঘটনার এক সপ্তাহ আগেও তিনি আমাকে টেবিল কিনে দিয়েছেন। যদি কখনো ভাই আমাদের ওপর রাগ করতেন, তবে আমরা কোরআন তেলওয়াত করলে তার সব রাগ চলে যেত,’ পাশ থেকে বলছিলেন সবার ছোটভাই মো. আব্দুল্লাহ।
সে বলে, ভাই আমাদের এতোটাই ভালোবাসতেন যে, প্রতিনিয়ত চোখের সামনে রাখার জন্য মাদ্রাসার পাশেই বাসা নিয়েছিলেন।
রাজীবের ছোট দুই ভাই জানান, পড়াশোনার পাশাপাশি কাজ করে তাদের খরচও চালাতেন রাজীব। কিন্তু দুর্ঘটনায় মর্মান্তিক মৃত্যুতে অকূল পাথারে পড়েছেন তারা।
মেহেদী বলেন, ভাই পড়াশোনা চালিয়ে যেতে চাই। ভাইয়ের স্বপ্ন পূরণ করতে চাই। সরকার যেনো আমাদের দুই ভাইয়ের প্রতি সহায়তার হাত বাড়িয়ে দেন।
আরো পড়ুন >>> রাজীবের দুই ভাইয়ের পড়ালেখার দায়িত্ব নেবে সরকার
রাজীবের মামা জাহিদুল ইসলাম বলেন, আমরা আছি, তারপরও ওরা এখন পুরোই এতিম। ভাইকে হারিয়ে অভিভাবকহীন। আশাকরি এতিম দুই সন্তানের জন্য সরকার কোনো ব্যবস্থা নেবেন।
গত ৩ এপ্রিল রাজধানীর কারওয়ান বাজারের পান্থকুঞ্জ পার্কের সামনে বিআরটিসি বাসের সঙ্গে স্বজন পরিবহনের বাস টক্কর দিতে গেলে দুই বাসের চাপায় পড়ে ডান হাত বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় রাজীবের।
পরে তাকে তাৎক্ষণিক নিকটস্থ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে অবস্থার অবনতি হলে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) ও হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
সেখানে সরকারের তত্ত্বাবধানে রাজীবের চিকিৎসা চলছিল। কিন্তু গত সোমবার (১৬ এপ্রিল) দিনগত রাত ১২টা ৪০ মিনিটে তাকে মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসকরা।
রাজীকের বাড়ি পটুয়াখালী জেলার বাউফলে। শৈশবে মা-বাবাকে হারিয়ে মতিঝিলে খালার বাসায় থেকে এসএসসি ও এইচএসসি পাস করেন তিনি।
এরপর স্নাতক (পাস) কোর্সে ভর্তি হন মহাখালীর তিতুমীর কলেজে। পাশাপাশি কম্পিউটারের দোকানে কাজ করে যাত্রাবাড়ীতে একটি মাদ্রাসায় দুই ভাইয়ের পড়াশোনার খরবচও নির্বাহ করতে তিনি।
বাংলাদেশ সময় : ১৬২৫ ঘন্টা, এপ্রিল ১৮, ২০১৮
এমএস/ওএইচ/