ঢাকা, মঙ্গলবার, ১০ বৈশাখ ১৪৩১, ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

যানজটে বাড়ছে ব্যাকপেইন

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৩১৭ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৮, ২০১৮
যানজটে বাড়ছে ব্যাকপেইন যানজটে ভুগছে রাজধানীবাসী। ছবি; বাংলানিউজ

ঢাকা: মসজিদ আর রিকশার নগরী হিসেবে খ্যাত বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকা তার জৌলুস হারিয়ে পরিণত হয়েছে ভোগান্তির শহরে। যানজট ও উন্নয়ন কর্মযজ্ঞের কারণে রাজধানীবাসীর শান্তি বিঘ্নিত হওয়া শুরু হয়েছে।

যানজটের সমস্যায় অনেক আগে থেকেই ভুগছে রাজধানীবাসী।  কিন্তু বর্তমানে এর হার বেড়েছে অসহনীয় পর্যায়ে চলে গেছে।

একারণে বহুজাতিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান নামবিও’র সম্প্রতি প্রকাশিত ‘ওয়ার্ল্ড ট্রাফিক ইনডেক্স ২০১৮’ নামে একটি গবেষণাপত্র প্রকাশ করেছে। এতে দেখানো হয়েছে যানজটের শীর্ষে ২য় অবস্থানে রাজধানী ঢাকা।

এদিকে আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুসারে ঢাকায় যে পরিমাণ রাস্তা আছে সে অনুসারে  প্রতিদিনি ২ লাখ ১৬ হাজার গাড়ি চলাচল করতে পারে। কিন্তু বর্তমানে চলছে ১২ লাখের উপরে। আর এর সিংহভাগ মানুষ গণপরিবহন বা বাসে চলাচল করছেন। অতিরিক্ত যাত্রী পরিবহন করে বাড়তি মুনাফা লাভের আশায় এ বাসে সিটগুলো এত কাছাকাছি বসানো হয় যাত্রীদের বসে থাকা যথেষ্ট কষ্টকর হয়। যানজটের কারণে দীর্ঘসময় এসব বাসের সিটে বসে থাকার কারণে ব্যাকপেইনের হার বেড়ে যাচ্ছে বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা।

রাজধানীর সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন হাসপাতালগুলোতে খোঁজ নিয়ে জানা যায় সম্প্রতি এই ধরনের রোগীর সংখ্যা উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। তবে যাদের আগে থেকেই ব্যাকপেইনের সমস্যা নেই, বিশেষ করে তরুণ বা যুবকদের এ সমস্যায় ভোগার সম্ভাবনা খুব কম বলেও জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।

ঢাকা মেডিকেল কলেজের অর্থোপেডিক বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. আব্দুস সালাম বাংলানিউজকে জানান, ব্যাকপেইন হবার অনেকগুলো কারণ আছে। বিশেষ করে বাংলাদেশে মহিলাদের এ সমস্যায় বেশি ভুগতে দেখা যায়। এছাড়া বয়সকালে যখন হাড়ের কর্মক্ষমতা স্বাভাবিক নিয়মানুসারে কমে যায় তখন এ সমস্যা প্রকট আকার ধারণ করে। তবে বর্তমানে যানজটের কারণে ব্যাকপেইন একটা অন্যতম কারণ হতে পারে। যেখানে মিরপুর থেকে মতিঝিল যেতে সময় লাগার কথা আধা ঘণ্টা সেখানে সময় লাগছে দুই বা কখনও তিন ঘণ্টা। আবার বাসের সিটগুলো একেবারেই বসার যোগ্য নয়। ব্যকপেইন সৃষ্টির জন্য অধিকাংশ বাসের আঁটোসাটো সিটকে দায়ী করা যেতে পারে। বড় বাসের সংখ্যাও কম। থাকলেও আবার সিটগুলো চাপানো থাকে। ফলে চেপে বসতে গিয়ে মেরুদণ্ডে যথেষ্ট পরিমাণ চাপের সৃষ্টি হয়। এ কারণে ব্যাকপেইন হতে পারে। তবে এক্ষেত্রে কর্মজীবী মহিলা রোগীর সংখ্যাই বেশি লক্ষ্য করা যাচ্ছে। এ রোগ সারাতে ঔষধ খাওয়ার চেয়ে ব্যায়াম করা সবচেয়ে বেশি উপকারী। নিয়মিত ব্যায়াম ব্যাকপেইন নির্মূল করতে পারে।

ব্যাকপেইন সৃষ্টি হওয়ার ক্ষেত্রে তরুণদের ঝুঁকি কম থাকার কথা চিকিৎসকরা বললেও এ ধরনের সমস্যায় পড়া তরুণ রোগীদের সংখ্যাও একেবারে কম নয়। নিয়মিত গণ-পরিবহনে চলাচল করেন একাধিক তরুণ যাত্রীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে এতথ্য।

রাজধানীর ইন্টারটেক নামের একটি কোম্পানিতে কর্মরত তৌহিদ অভি (২৮) বাংলানিউজকে জানান, আমার অফিস ডিউটিতে দাঁড়িয়ে ও বসে দুইভাবেই কাজ করতে লাগে। টানা বসে বা দাঁড়িয়ে কাজ করতে হয় না। কিন্তু টানা অনেকক্ষণ অস্বস্তিকর অবস্থায় বসে থাকতে হয় বাসে। বাসের সিটগুলো আড়ষ্ট হওয়ায় ব্যাকপেইনের জন্য আদর্শ । আমি চিকিৎসকের শরণাপন্ন  হলে তিনি আমাকে একথাই বলেন। আমার সারাদিনের সিডিউল নিয়ে নিরীক্ষা করে মুখ্য কারণ হিসেবে দীর্ঘক্ষণ বাসযাত্রাকেই দায়ী করেছেন তিনি। প্রতিদিন আমার বাসা মিরপুর থেকে ধানমণ্ডিতে অফিসে যেতে দু’ঘণ্টা লেগে যায়। আবার অফিসের কাজে প্রায়ই উত্তরা যেতে হয়। এক্ষেত্রে ধানমণ্ডি থেকে উত্তরা যেতে সময় লাগে প্রায় তিন ঘণ্টা। এমন অসহনীয় যানজটে বসে থাকতে গিয়েই আমার সর্বপ্রথম মেরুদণ্ডে ব্যথা অনুভব করি।

এদিকে রাজধানীর উন্নয়নযজ্ঞকে কেন্দ্র করে পুরো শহরের কোথাও না কোথাও রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ি চলছেই। একারণে রাস্তায়  যানবাহন চলার সময়  প্রচণ্ড ঝাঁকুনির সৃষ্টি হয়। ধুলাবালির প্রকোপও একারণে  অনেক বেশি। আর যানজটে অতিরিক্ত হর্ন বাজানোর ফলে সৃষ্ট শব্দদূষণের হারও বেড়েছে অনেক।  সব মিলিয়ে আস্বস্তির বিভিন্ন রোগ ধীরে ধীরে তীব্র আকার ধারণ করে মারাত্মক পর্যায়ে চলে যেতে পারে বলে মত প্রকাশ করছেন বিশেষজ্ঞরা।

ওষুধ খাওয়ার পরিমাণ অতিরিক্ত হারে বেড়ে গেছে। একে একপ্রকার হুমকিস্বরূপ বলে আখ্যা দিয়েছেন ডাক্তারসহ ফার্মাসিস্টরা।

এ বিষয়ে কমিউনিটি ফার্মাসিস্ট আব্দুল্লাহ আল ফয়সাল বাংলানিউজকে জানান, মানুষের ছোট ছোট রোগের পরিমাণ অনেক বেড়ে গেছে। ডাক্তারের কাছে না গিয়ে নিজেরাই ঔষুধ কিনে খাচ্ছেন অনেকে। এতে ক্ষতিটা হবে দীর্ঘমেয়াদী। যেমন যানজটে বাসে বসে থেকে প্রাথমিক পর্যায়ে ব্যাকপেইন বা মাথা ব্যাথার কারণে প্যারাসিটামল বা অনেকে অ্যান্টিবায়োটিক কিনে খেয়ে নিচ্ছেন। এর ফলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যাচ্ছে ও বড় বড় রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বাড়ছে। কমছে না। এখানেও সচেতনতা জরুরি। রোগীরা যদি এক্ষেত্রে ওষুধ বাদ দিয়ে ব্যায়ামের দিকে বেশি মনোযোগ দেন তাহলে সমস্যা কমবে।

একই পরামর্শ দিয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থোপেডিক সার্জারি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. কৃষ্ণপ্রিয় দাশ জানান, যানজট তো বিশাল বড় একটি সমস্যা। সরকার চেষ্টা করছে এ সমস্যা সমাধানের কিন্তু এত দ্রুত তা সম্ভব নয়। তাই আমাদের অন্য পথ দেখতে হবেই। দীর্ঘক্ষণ বাসে থাকা অবস্থায় পারলে মাঝেমাঝে উঠে দাঁড়ানোর চেষ্টা করতে হবে। যারা নিয়মিত যানজটের মধ্যে  চলাচল করছেন তারা অবশ্যই প্রতিদিন ভোরে ঘুম থেকে উঠে মেরুদণ্ড ও কোমড়ের ব্যায়াম করবেন।  পানি বেশি পরিমাণে খাবেন। রাস্তায় ধুলাবালি  এড়াতে মাস্ক ব্যবহার করুন। প্রথমেই ওষুধের ওপর নির্ভরশীল না হয়ে সহজ ও উপকারী ব্যবস্থা গ্রহণ করা শ্রেয় বলেই মনে করি।

বাংলাদেশ সময়: ০৯১৪ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৮, ২০১৮
এমএএম/কেজেড /জেএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।