ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

আগ্রহ নেই মিয়ানমারের, সাজা শেষেও কারাগারে ১৪জন

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১০৩ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৭, ২০১৮
আগ্রহ নেই মিয়ানমারের, সাজা শেষেও কারাগারে ১৪জন

কক্সবাজার: কপাল ফেরানোর তাগিদে ২০০০ সালের অক্টোবরে টেকনাফের নাফ নদী পেরিয়ে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করে হাফেজ আহমেদ (৩৫)। বাংলাদেশের আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের হাতে তিনি আটক হন সেদিনই। পাসপোর্ট ছাড়া বাংলাদেশে অনুপ্রবেশের দায়ে তাকে ১০ মাসের স্বশ্রম কারাদণ্ড দেন আদালত। সে হিসেবে ২০০১ সালের ১৮ জুলাই তার সাজার মেয়াদ শেষ হয়। তবে সাজার মেয়াদ শেষ হলেও হাফেজের মুক্তি মেলেনি এখনো।

এ তো গেলো শুধু হাফেজের গল্প। এক নারীসহ মিয়ানমারের আরও ১৩ জন নাগরিক সাজা শেষ হওয়ার পরও কক্সবাজার কারাগারে বন্দী রয়েছেন।

নির্দিষ্ট সময়ে সাজা শেষ হলেও তারা এখনো ফিরতে পারেননি ঘরে।

কক্সবাজার কারা সূত্রে পাওয়া তথ্য মতে, ২০০২ সালের সেপ্টেম্বরে মংডুর ফকিরাবাজার এলাকার মৃত ইউছুফ আলীর ছেলে আলী আকবরকে (২৮) কক্সবাজার কারাগারে নেওয়া হয়। তার সাজার মেয়াদ শেষ হয় ২০০৫ সালের মার্চে। ২০০২ সালের সেপ্টেম্বরে বন্দী হয় মংডুর আকিয়াবের বদলাপাড়ার খলিলুর রহমানের ছেলে আবদুর রহিম (৩৮)। তার কারাভোগ শেষ হয় ২০০৬ সালের জুলাই মাসে।

২০০১ সালের নভেম্বরে অস্ত্র মামলায় আটক হয় বুচিদংয়ের জব্বারপাড়ার মু. ইউনুছের ছেলে সেলিম (৩২)। তার সাজা শেষ হয় ২০১১ সালের মে মাসে। ২০০৭ সালের মে মাসে একই এলাকার সাব্বির রহমানের ছেলে মুহাম্মদ রফিক (৩০) কারাগারে প্রবেশ করেন। সাজা শেষ করেন ২০১১ সালের জুলাইয়ে।

পোকখালীর হাবিব উল্লাহর ছেলে বশির আহমদ (২৯) ২০১০ সালের জানুয়ারিতে ঢুকে সাজা শেষ করেন ২০১৫ সালের জানুয়ারিতে। আকিয়াব বলিবাজার এলাকার বসরের ছেলে নুরুল আমিন (২৪) ২০০৯ সালে কারান্তরীণ হয়ে সাজা শেষ করে ২০১৪ সালে। বুচিদংয়ের হ্নীলা এলাকার মৃত মুজিবুরের ছেলে রাসেল (৪৫) ২০১৬ সালের অক্টোবরে কারান্তরীণ হয়ে সাজা শেষ করেন ২০১৩ সালের ডিসেম্বর।

একইভাবে ইয়ং চয়ং পাড়ার আবদুর শুক্কুরের স্ত্রী খতিজা (৫০), মংডুর তাতুইং গ্রামের মৃত মংচিং মারমার ছেলে আবুচিং মারমা (২২), রাখাইন স্টেটের মমবা গ্রামের ওমারিন মিউ মারমার ছেলে হিং থাই নাই মারমা (২৪), মিয়ানমারের বুচিদং মায়ুকং ওরফে মং কং মারমার ছেলে নিতওয়া (৫০), পলোয়া খায়ংপল্লীর মৃত লেচংয়ের ছেলে হেইটং (৪৫), কেপ্রু এলাকার চউইং রাখাইনের ছেলে চিং অং রাখাইন বিভিন্ন সময়ে সর্বোচ্চ ২০১৭ সালের মধ্যে সাজা শেষ করলেও এখনও কারাগারের চার দেয়ালে বন্দি রয়েছেন।

আটকদের মুক্তির ব্যাপারে জানতে চাইলে কক্সবাজার জেলা কারাগারের তত্ত্ববধায়ক মো. বজলুর রশিদ আখন্দ বাংলানিউজকে জানান, তাদের কারাভোগের মেয়াদ শেষ হবার সঙ্গে সঙ্গেই সংশ্লিষ্ট দপ্তরের মাধ্যমে মিয়ানমারে চিঠি পাঠানো হয়। কিন্তু এদের গ্রহণে মিয়ানমার কোনো ধরনের আন্তরিকতা দেখাচ্ছে না। ফলে সাজা শেষ হওয়ার পরও তারা ফিরতে পারছেন না।

তিনি বলেন, এরা ছাড়াও তাদের দেশী আরও বেশ কয়েকজন বন্দি কারাগারে ছিলেন। তাদের স্বজনরা যোগাযোগ করে উচ্চ আদালতের নির্দেশনায় তাদের ছাড়িয়ে উখিয়ার রোহিঙ্গা ক্যাম্পে নিয়ে গেছেন। সে সূত্র ধরে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে গত বছরের শেষের দিকে চিঠি পাঠানো হয়েছে। যেহেতু উচ্চ আদালত বেশ কয়েকজনকে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে স্বজনদের কাছে হস্তান্তরের নির্দেশনা দিয়েছেন, সেহেতু সাজাভোগ শেষ হওয়া এদেরও সরকারি সিদ্ধান্তে রোহিঙ্গা ক্যাম্প প্রশাসনের কাছে হস্তান্তর করা যায়। এটি সম্ভব হলে সাজাশেষ হওয়া এসব মানুষগুলো মুক্ত জীবন পাবেন।

এ ব্যাপারে বাংলাদেশ মানবাধিকার কমিশনের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী রেজাউল করিম রেজা বাংলানিউজকে বলেন, সাজার মেয়াদ শেষেও কারাভোগ করা মানবাধিকারের লঙ্ঘন। মিয়ানমারে যেহেতু রোহিঙ্গা সংকট চলছে তাই বিশেষ বিবেচনায় এসব বন্দিদের ক্যাম্প কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তরের উদ্যোগ নেওয়া বাঞ্চনীয়।

কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক (ডিসি) মো. কামাল হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা বিভাগে আবেদন করা হয়েছে। তাদের অনুমতি পেলেই ওই ১৪ জনকে কারাগার থেকে মুক্তি দেওয়া হবে।

বাংলাদেশ সময়: ০২৫৮ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৮, ২০১৮
টিটি/এইচএমএস/এসআরএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।